হারাতে বসেছে কামারখন্দের শীতল পাটি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৫:১৭ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২২

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের চাঁদপুরের শীতল পাটির চাহিদা এক সময় দেশব্যাপী সমাদৃত থাকলেও সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পে এখন দুর্দিন চলছে।

এক সময় লোকশিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পাটি শিল্প। বেত কেটে তা সিদ্ধ করে শুকিয়ে বুনানো হয় পাটি। গরমের দিনে এই পাটি ব্যবহারে স্বস্তির নিশ্বাস বা দেহমন ঠান্ডা হয় বলেই একে শীতল পাটি বলা হয়।

সরেজমিনে কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পুরুষরা জমি থেকে পাটি বেত কেটে আনছেন। পরে সেগুলো বিশেষ দা দিয়ে এক ধরনের বেতী সুতা বানিয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকানো হচ্ছে। বেতী সুতাগুলো রোদে শুকানোর পর তাতে নানা বাহারী রং দেওয়ার পর আবার রোদে শুকানো হচ্ছে। বেতী সুতা রোদে শুকানোর পর নারী শিল্পীরা নিপূণ হাতে তৈরি করছে শীতল পাটি।

হারাতে বসেছে কামারখন্দের শীতল পাটি

জানা যায়, ৮০-৯০ দশকে এ সব শীতল পাটি সাধারন মানুষের ঘরে ঘরে ব্যবহার হত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের জীবন মানের পরিবর্তনের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শীতল পাটি শিল্প। এ পাটির পরিবর্তে এখন প্লাস্টিক পাটি, চট-কার্পেট, মোটা পলিথিন সহ বিভিন্ন উপকরণ স্থান দখল করে নিয়েছে।

শীতল পাটির বুনন ও চাহিদা কমলেও চাঁদপুর গ্রামের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা শত কষ্টেও তাদের পূর্বপুরুষদের প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এ গ্রামের ২০০ পরিবারের প্রায় ৮০০ নারী-পুরুষ তাদের জাত পেশা হওয়ায় এখনো টিকিয়ে রেখেছেন এ শিল্প। বর্তমানে প্রতিটি শীতল পাটি প্রকারভেদে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

হারাতে বসেছে কামারখন্দের শীতল পাটি

চাঁদপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা পাটি তৈরীর শিল্পী বানি দত্ত জানান, এক সময়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে শীতল পাটি বাধ্যতামূলক কিনতো। বিয়ে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে শীতল পাটি উপহার দিতো। এখন আর সেদিন নেই। বর্তমানে শীতল পাটির কদর অনেকটা কমে গেছে। শীতল পাটির দাম কিছুটা বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি। পাটি ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত পাই। একটি পাটি বুনতে দুই থেকে তিনদিন সময় লাগে। একটা পাটি বুনতে যে পরিশ্রম আর সময় লাগে সে হিসেবে আমাদের মজুরি অনেক কম।

একই গ্রামের শীতল পাটি ব্যবসায়ী ও শিল্পী বিল্লু চন্দ্র দাস জানান, পূর্ব পুরুষেরা এ পেশাই করত। তাই ছোটবেলা থেকে এ পেশায় জড়িত। শীতল পাটি আগের মতো ব্যবহার না হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যাও অনেকাংশে কমে গেছে। তাই এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেই বাধ্য হয়ে বিকল্প পেশায় চলে গেছে।

হারাতে বসেছে কামারখন্দের শীতল পাটি

তিনি আরও জানান, শীতল পাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল পাটি বেতের দাম বাজারে অন্যান্য ফসলের তুলনায় দাম কম হওয়ায় অনেকে পাটি বেতের ক্ষেত ভেঙে অন্য ফসল আবাদ করছে। এতে বেতের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে আধুনিকমানের শীতল পাটি তৈরীর প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করা হলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা জানান, গত দেড় বছরে পাটি তৈরির শিল্পীদের দুইবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরও উন্নমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কীভাবে শীতল পাটির বাজারজাত বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

রাকিবুল ইসলাম রুবেল/ কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।