অন্যের বউকে চুরি করে পালানোই যেখানকার রীতি

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৪ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই আছে স্বতন্ত্র কিছু নিয়ম নীতি। যেগুলো অন্যদের কাছে হাস্যকর, উদ্ভট কিংবা অমানবিক বটে! বিশেষ করে আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিরা উদ্ভট সব রীতি অনুশীলন করে।

সেখানকার তেমনই এক উৎসব হলো অন্যের বউকে চুরি করা। খানিকটা অবাক করা হলেও সত্যিই যে, এমনও এক ধরনের উৎসব পালিত হয় আফ্রিকায়। অন্যের বউকে চুরি করা হলেও এতে নেই কোনো শাস্তি।

jagonews24

যুগ যুগ ধরে পশ্চিম আফ্রিকার নাইজারের যাযাবর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি ওডাআবে এই উৎসব পালন করে আসছে। যেখানে অন্যের বউকে চুরি করেন সেখানকার পুরুষরা। এ কারণেই এটি ‘বউ চুরির উৎসব’ নামেই পরিচিত।

প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস এলেই বউ চুরির উৎসব পালনের জাঁকজমকতা শুরু হয়। এক সপ্তাহ ধরে চলে এই উৎসব। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিরা একে ‘গেরেওল উৎসব’ বলে থাকেন।

jagonews24

এই উৎসবের মূল আকর্ষণই হলো অন্যের বউকে চুরি করে পুরুষের ক্ষমতা প্রদর্শন করা। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, যেসব পুরুষ অন্যের বউকে নিয়ে পালায়, তাদের স্ত্রীরা এই উৎসবে অংশ নেন। পাশাপাশি চলে খাওয়া-দাওয়া, নাচ-গান ও হৈ-হুল্লোড়।

এই উৎসবের জন্য ওডাআবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির নারীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। কারণ এই উৎসবে তারা নিজেদের পছন্দমতো পুরুষসঙ্গী বাছাই করে নেন। এই উৎসবের ‘ইয়াকে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নারীরা তাদের পছন্দের পুরুষকে বেছে নেন।

jagonews24

এই প্রতিযোগিতায় পুরুষরা নারীদেরকে আকৃষ্ট করতে নাচেন। ওডাআবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি এই উদ্ভট উৎসবের মাধ্যমে নারী-পুরুষরা একে অন্যের পছন্দসই জীবনসঙ্গীকে নির্বাচন করেন। তারা আগের সম্পর্ক ভেঙে নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখেন। যা বিভিন্ন ধর্ম ও সামাজিক আইনে অবৈধ।

এছাড়াও ওডাআবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির মেয়েরা বিয়ের আগে যার সঙ্গে ইচ্ছে সম্পর্কে যেতে পারে। এসব বিষয় তাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক ও বৈধ। আবার বিয়ের পরও তারা যত খুশি স্বামী রাখতে পারেন। এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির নারী ও পুরুষ তাদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে গর্ববোধ করে।

এই উৎসবের কয়েকমাস আগে থেকেই পুরুষরা প্রতিযোগিতার জন্য নিজেদের তৈরি করা শুরু করে। ওডাআবে পুরুষদের ধারণা, তাদের সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে চোখের ধবধবে সাদাভাব, লম্বা নাক ও ঝকঝকে সাদা দাঁতে। তাই রূপচর্চার জন্য সঙ্গে আয়না রাখতে ভুলেন না তারা।

jagonews24

বউ চুরি প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার প্রায় ৬ ঘণ্টা আগ থেকে সাজগোজ করেন পুরুষরা। মুখে মাখেন লাল মাটি, চোখে লাগান কাজল, ঠোঁটে দেন লাল লিপস্টিক। একইসঙ্গে নাকে সাদা বা হলুদ রেখা টানেন, আবার মাথার চুলে বিনুনি করে পুঁতি ও কড়ি লাগান। মাথায় পড়েন উটপাখির পালক।

এই প্রতিযোগিতায় বিচারক হন এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সেরা তিনজন বিবাহিত নারী। তারাই সেরা পুরুষদেরকে বেছে নেন। আর বাছাইয়ের পর সেরা পুরুষরা তাদের পছন্দসই নারীকে বেছে নিতে পারেন। ওডাআবে সমাজে এই অমানবিক কর্মকাণ্ডই বৈধ বলে বিবেচিত।

এই প্রতিযোগিতার পরেই শুরু হয় বউ চুরি উৎসব। নৃত্য প্রতিযোগিতা চলাকালীন পুরুষরা নাচের মাধ্যমে নারীদেরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। অনেক নারীই তাদেরকে সঙ্গী হিসেবে পেতে চান। তবে নৃত্যরত পুরুষ যাকে চান তাকে তিনি পরে খুঁজে নেন।

jagonews24

প্রতিযোগিতা শেষে ওই নারীকে ভিড়ের মধ্যে খুঁজে সুযোগ নিয়ে তার কাঁধে টোকা দেন। সেই ডাকে সাড়া দেয় নারীও। এরপর পরস্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যান ওই পুরুষ। বউ চুরি করে ধরা না পড়লে ওই নারীর সমাজ স্বীকৃত দ্বিতীয় স্বামী হয়ে যান পুরুষটি।

এদিকে ওই নারীর সংসারে রেখে যাওয়া সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্ব নেয় তার পরিবার। এই উৎসবটি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রতিবছরের সেপ্টেম্বর মাস নিয়ে তাদের জল্পনা কল্পনা থাকে তুঙ্গে।

সূত্র: গার্ডিয়ান/আপ্যিকান এক্সপেনেন্ট

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।