মাতৃহীন সেনোরা যেভাবে চালু করেন বাবা দিবস

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১৮ এএম, ২০ জুন ২০২১

আজ বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় ফাদার্স ডে। বিশ্বের প্রায় ৮৭টি দেশ বিশেষ এই দিনটি পালন করে। আজকের দিনটি বাবার সম্মান ও শ্রদ্ধার জন্য উৎসর্গ করে সন্তানরা। যদিও মা-বাবার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন হয় না। তবে কীভাবে উৎপত্তি ঘটেছিল বাবা দিবসের? আর কবে থেকেই বা এ দিবসটি পালিত হয়ে আছে?

১৯১০ সালে ওয়াশিংটনে প্রথম পালন করা হয় বাবা দিবস। এক নারীর কারণেই এই দিনটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। ওই নারীর জীবনে তার বাবা ছিলেন মহাপুরুষ। মাতৃহীন ওই নারী জন্মের পরপরই বুঝেছিলেন, একজন বাবা তার সন্তানের জন্য কতটুকু ত্যাগ ও তিতিক্ষা সহ্য করতে পারেন। বলছি, সোনোরা স্মার্ট ডড এর কথা। তার বসবাস ছিল ভার্জিনিয়ায়।

jagonews24

সোনোরা খুব অল্প বয়সে তার মাকে হারান। মায়ের আদর না পেলেও, বাবা তার কাছে ছিলেন মহাপুরুষ। তার বাবা ছিলেন একজন সৈনিক। দেশের কাজে ব্যস্ত থাকা স্বত্ত্বেও সেনোরার বাবা খুব কষ্ট করে তার সন্তানদেরকে মানুষ করেন।

সেনোরা ছিলেন সবার বড় বোন, তিনি বুঝতেন তার বাবা তাদের দেখভালে জন্য কতটা কষ্ট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বাবাকে সম্মান জানাতে সেনোরা ও তার ভাই-বোনোরা ঠিক করেন জাঁকজমক করে বছরে একটি দিন পালন করবেন।

jagonews24

এরপর তারা গির্জা ও স্থানীয় প্রশাসনের দারস্থ হন। তাদের এমন উদ্যোগের কথা শুনে সবাই আবেগে আপ্লুত হন এবং সমর্থন জানান। সেনোরার উদ্যোগেই প্রথম পালিত হয় ফাদার্স ডে। সেনোরার বাবার জন্মদিন ছিলো ৫ জুন। তাই তিনি চেয়েছিলেন ৫ জুন যেন বাবাদের দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত জুনের তৃতীয় রবিবারকে বেছে নেওয়া।

ইতিহাস মতে, সোনোরার আগেও যুক্তরাষ্ট্রে ফাদার্স ডে পালিত হয়েছে। ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় পালন করা হয় ফাদার্স ডে। যদিও এ দিনটির কথা জানতেন না সোনোরা। তবে ফাদার্স ডে যাতে সরকারি স্বীকৃতি পায় এবং যাতে এই দিন ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাঁর জন্য বহু প্রচারণা চালিয়ে গিয়েছেন সোনোরা।

jagonews24

অবশেষে ১৯১৩ সালে মার্কিন সংসদে ফাদার্স ডে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা সংক্রান্ত একটি বিল আসে। তবে সেটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। ১৯২৪ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ক্যালভিন কুলিজ ফাদার্স ডে উদযাপনের দাবির প্রতি ব্যক্তিগত সহমত প্রকাশ করেন।

পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ফাদার্স ডে ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালে মার্কিন কংগ্রেস রীতিমতো সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী জানানো হয়, প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার ফাদার্স ডে পালিত হবে। সেদিন সবকটি সরকারি দফতরে উড়বে মার্কিন পতাকা, আয়োজন করা হবে বিবিধ অনুষ্ঠান।

jagonews24

১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের জমানায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পিতৃদিবস উদযাপন শুরু হয়। সেই সঙ্গে ভারত, ব্রিটেন, জাপান, চিলি, মায়ানমার, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও পালন করা শুরু হয় এই বিশেষ দিনের।

তবে বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়ায় জুন মাসের দ্বিতীয় রবিবার ফাদার্স ডে হিসেবে পালন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রবিবার পালন করা হয় ফাদার্স ডে হিসেবে। থাইল্যান্ডে ৫ ডিসেম্বর ফাদার্স ডে হিসেবে পালন করা হয় কারণ সেদিন ওখানকার রাজার জন্মদিন।

jagonews24

মধ্যযুগের ইতিহাস ঘাঁটলেও ফাদার্স ডে সম্পর্তে জানা যায়। ক্যাথলিক বিশ্বাসে জোসেফ হলেন যীশু খ্রিস্টের পিতা। রাজা হেরডের অত্যাচার থেকে বাঁচতে অন্তঃসত্ত্বা মাতা মেরীকে নিয়ে জেরুজালেমে চলে যান তিনি। সেখানেই জন্ম নেন যীশু। তাই জোসেফকে ‘নারিশর অফ দ্য লর্ড’ বলা হয়।

সূত্র: হিস্টোরি

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।