আগাছা নয়, কচুরিপানায় আছে নানা উপকারিতা

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩৯ পিএম, ১৭ জুন ২০২১

বেনজীর আহমেদ সিদ্দিকী

প্রকৃতিতে এখন বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। বর্তমানে খাল, বিল, ঝিল, হাওর-বাঁওড়সহ বিভিন্ন জলাশয় পানিতে ভরে উঠছে। এর মাঝেই গাঢ় সবুজ আবহ নিয়ে ভেসে আছে কচুরিপানা। গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত একটি জলজ বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ এই কচুরিপানা ও তার ফুল! এ যেন প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে ওঠা এক অবহেলিত শোভা।

বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় হাওর-বাঁওড়, ছোট বড় খাল, বিল, ঝিল ও বাড়ির পাশের ডোবায় দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন কচুরিপানা ফুল। এই কচুরিপানার ফুল কমবেশি সবার কাছে কতোটা পছন্দের ও আনন্দের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এই ফুলের গভীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই কচুরিপানা দেখতে বিভিন্ন জলাশয়ে যান। অনেকেই আবার কচুরিপানার ফুল নিয়ে শৈশবে করা খুনসুটির কথা ভেবে নস্টালজিক হয়ে পড়েন। বিকেলে বিলের ধারে কচুরিপানাকে একত্রিত করে একটির উপর কয়েকটি রেখে সাঁকো তৈরি করে এপার থেকে ওপারে যাওয়ার স্মৃতিতে এখনো অনেকে ভেসে যান।

jagonews24

তাই নীলচে শিরা-উপশিরায় বিন্যস্ত হালকা বেগুনি রঙের মায়াবী এই ফুল হারানো শৈশবকে খুব কাছে টানে। গ্রামে গেলে এখনো দেখা যায়, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা জলাশয় থেকে কচুরিপানার ফুল উঠিয়ে খেলা করে। মেয়েরা খোপায় বাঁধে। পড়ন্ত বিকেলে জলাশয়ের ধারের পাশের রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে এমন দৃশ্য হরহামেশা দেখা যায়।

কচুরিপানা দেখতে গাঢ় সবুজ হলেও এর ফুলগুলো দেখলে মনে হবে গাঢ় সবুজের মাঠে শুভ্র আলোয় জ্বলছে অযুত-নিযুত তারা। ফুলগুলো সাদা বা হালকা আকাশি রঙের পাপড়ির মধ্যে বেগুনি ছোপযুক্ত এবং মাঝখানে হলুদ ফোঁটা বিদ্যমান। পুরোপুরি ফুল ফোটার আগে এগুলোকে দেখতে অনেকটা নলাকার দেখায়।

jagonews24

পাপড়িগুলোর মাঝখানে পুংকেশর দেখতে পাওয়া যায়। একটি ফুল থেকে ৯ থেকে ১৫টি আকর্ষণীয় পাপড়ির ফুলের থোকা বের হয়। প্রায় সারা বছরই ফুল ফুটতে দেখা যায়। কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করতে পারে। এমনকি ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে।

বাংলাদেশে প্রায় সাত প্রজাতির কচুরিপানা দেখতে পাওয়া গেলেও এটি এদেশের নিজস্ব উদ্ভিদ নয়। তথ্যমতে, অর্কিড সাদৃশ্য ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের পর্যটক স্কনক ১৮ শ’ শতাব্দীতে বাংলায় নিয়ে আসেন কচুরিপানা।

jagonews24

কচুরিপানার ফুল, পাতা, শিকড়সহ অন্যান্য অঙ্গের নানাবিধ ব্যবহার আছে। পানি পরিশুদ্ধিকরণে এই জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করা যায়। এশিয়া মহাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলের খাবারের মেন্যু দখল করে রয়েছে কচুরিপানা। এটি সেদ্ধ করে নানা পদে রান্না করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে কচুরিপানাকে অনেকে ভাসমান সবজি চাষ, মাছের খাবার, জৈব সার, গবাদি পশুর খাবার, রাস্তার গর্ত ভরাট করা, পিচ ঢালাইয়ের নতুন রাস্তায় পানি দেয়ার ও পিচ মজবুত করার জন্য, সিমেন্টের খুটি মজবুত করা ও পানি ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করে থাকেন।

এ ছাড়াও স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আছে এই কচুরিপানায়। যেমন- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, একজিমা সারায়, চুল পরিষ্কার, ঝলমলে ও কোমল ভাব আনে, দাঁত ও গলা ব্যথা কমাতে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে, মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে, অনিয়ন্ত্রিত ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধানে, ওজন নিয়ন্ত্রনে, রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে কচুরিপানা।

jagonews24

যারা এর ব্যবহার ও উপকারিতা জানেন, তাদের কাছে এটি একটি সম্পদ। আবার যারা এর ব্যবহার পদ্ধতি আয়ত্ব করতে পারেনি; তাদের কাছে এটি একটি আগাছা ও বিড়ম্বনার। তাই এই সম্পদটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ হ্রাস করতে পারবেন।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। শহর বা গ্রামে ডোবা জলাশয় ও ফসলি জমি ভরাট করে বেড়েই চলেছে ইট পাথরের দালান-কোঠা ও শিল্প কারখানা। শুকিয়ে যাচ্ছে ছোট বড় খাল-বিল, নদ-নদী ও ডোবা জলাশয়।

এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণ ও বৈচিত্র্যের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। তারপরও অযত্নে অবহেলায় নালা-নর্দমায় ফসলহীন জন্মে যাচ্ছে কচুরিপানা। এভাবেই কচুরিপানার ফুল তার সৌন্দর্য্যকে প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে নিঃস্বার্থভাবে।

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।