ভালোবাসার জয় হয়েছিল আজ

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:০৬ এএম, ১২ জুন ২০২১

ভালোবাসার আবার আলাদা দিন আছে না-কি! প্রতিটি দিন বা মুহূর্তেই তো ভালোবাসা আদান-প্রদান করা যায়। তবু পুরো বিশ্বে ১২ জুন ন্যাশনাল লাভিং ডে বা জাতীয় ভালোবাসা বা প্রেমময় দিবস পালিত হয়ে আসছে ২০০৪ সাল থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে এই দিনটির বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উদযাপন করা হয়।

এই দিনটির সূচনা ঘটে ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে। ভিন্ন জাতিতে বিবাহ নিষিদ্ধ আইন বাতিল করা হয় এ দিনে। ‘লাভিংস বনাম ভার্জিনিয়া’ মামলার মাধ্যমে ভিন্ন জাতির মধ্যকার বিবাহ নিষিদ্ধ আইন বাতিল করা জয় ১৯৬৭ সালে ১২ জুন। এই মামলার বিচারে প্রমাণ করা হয়, ভালোবাসার সত্যিই কোনো জাত বা ভেদাভেদ হয় না।

jagonews24

এক দম্পতির প্রেমের গল্প যা সেদিন আদালতের সবার চোখেই অশ্রু এনে দিয়েছিল। মিল্ড্রেড জেটার এবং রিচার্ড লাভিং আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় বেড়ে ওঠেন। তারা একে অপরের প্রেমে পড়েন এবং বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে দুঃখের বিষয় হলো ১৯৫৮ সালে বিয়ে করা এতটা সহজ ছিলো না।

মিল্ড্রেড ছিলেন এক যুবতী কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং রিচার্ড সাদা পুরুষ। তখনকার সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিবাহ আইনে জাতিভেদে বিয়ে নিষিদ্ধ ছিলো। ভার্জিনিয়াসহ অনেক রাজ্যে এই আইন মানা হত। তবে ওয়াশিংটন ডিসি-তে বিভিন্ন জাতির বিবাহ বৈধ ছিল। অতএব তারা ভার্জিনিয়া থেকে ওয়াশিংটন ডিসি-তে গিয়ে বিয়ে করবেন সিদ্ধান্ত নেন। বিয়েও করেন তারা।

jagonews24

তবে এখানেও দেখা দেয় আরেকটি সমস্যা। কারণ ভার্জিনিয়ায় বিবাহ নিষিদ্ধ আইনে, স্পষ্ট করে বলা ছিলো দুই জাতির দম্পতি যদি অন্য স্থান থেকে বিয়ে করেও ভার্জিনিয়াতে আসেন তবুও তারা এই রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না। অতঃএস ভার্জিনিয়ায় ফিরে আসার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মিল্ড্রেড জেটার এবং রিচার্ড লাভিংকে পুলিশ আন্তঃজাতির বিবাহের অপরাধে জেলে নিয়ে যায়।

রিচার্ড এবং মিল্ড্রেড বিচারের জন্য গিয়েছিলেন। তবে বিচারক তাদের দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাদের তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। তবে বিচারক আরেকটি শর্তও জুড়ে দেন, ২৫ বছরের জন্য ভার্জিনিয়া থেকে চলে গেলে এই সাজা স্থগিত করা হবে। কারাবন্দি থাকার চেয়ে সদ্য বিবাহিত এই দম্পতি ওয়াশিংটন ডিসিতে চলে যান নতুন জীবন কাটাতে।

jagonews24

যদিও এই দম্পতি ওয়াশিংটনের আইন অনুযায়ী একসঙ্গে বসবাস করতে পেরেছিলেন; তবে তা তাদের জন্য খুব সহজ ছিলো না। সেখানে তারা সর্বত্র বৈষম্যের মুখোমুখি হতে শুরু করেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে তারা মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের দু’জনের জন্যই জীবন ছিলো কঠিন ও ভয়াবহ।

তখন মিল্ড্রেড গর্ভবতী হয়েছেন সবেমাত্র। এমন সময় চরম উদ্বেগের সঙ্গে মিল্ড্রেড আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট এফ কেনেডিকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাদের প্রতিকূল জীবন এবং অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এখন তিনি কী করবেন, তার জীবনের কঠিন পরিস্থিতির বিষয়ে জানান।

মিল্ড্রেডের চিঠিটি নিউ ইয়র্ক সিটির আমেরিকান সিভিল লিবার্টি ইউনিয়নের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা মামলায় আগ্রহী হয়েছিল এবং লভিংসকে তাদের মামলার আইনজীবী খুঁজতে সহায়তা করে। বার্নার্ড এস কোহেন এবং ফিলিপ জে হিরস্কোপ নামে দু’জন আইনজীবী তাদের পক্ষে এই মামলাটি লড়েন। তাও আবার বিনা খরচে। তারা চেয়েছিলেন ভালোবাসায় জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে যেতে।

jagonews24

দীর্ঘ ও কঠোর আইনী লড়াইয়ের পরে অবশেষে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টের সামনে লভিংসের মামলাটি হাজির হয়েছিল। লাভিংস দম্পতি যে কষ্টের মুখোমুখি হয়েছিল এবং এমন পরিস্থিতিতে যেসব দম্পতিরা আছেন-সবাই এই মামলায় একে একে সাক্ষী দেন। সবার কথা শুনে আদালত এই কঠোর আইন বাতিল করেন।

৯ বছরের দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে, লাভিংস দম্পতি তাদের নিজ দেশ ভার্জিনিয়ায় পা রাখেন। এই মামলাটি বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন ও দৃষ্টান্ত তৈরি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি আন্তজাতির দম্পতিকে স্বাধীনতা দিয়েছে এই লাভিংস দম্পতির মামলাটি। এই মামলার সময়, ১৬টি রাজ্য থেকে আন্তজাতির বিবাহ নিষিদ্ধ আইন বাতিল করা হয়।

jagonews24

‘প্রেমময় বনাম ভার্জিনিয়া’ মামলার আইনটি শুধু কালো এবং সাদা মানুষদের জন্যই প্রযোজ্য নয়; অনেক রাজ্যে, এশীয়, আদিবাসী আমেরিকান, ভারতীয়, হিস্পানিক এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক নিষেধাজ্ঞারও অবসান ঘটায়।

২০০৪ সালে রিচার্ড এবং মিল্ড্রেড লাভিংয়ের সম্মানে ‘লভিং ডে’ উদযাপন করা শুরু হয়। তারপর থেকেই মানুষ যত এই দিনের ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জেনেছে; ততই দিনটি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। নিউ ইয়র্কে বহু-জাতিগত সম্প্রদায় সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তটি উদযাপনের জন্য শো প্রদর্শন করে এবং বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে। তারা সুস্বাদু খাবার খায় এবং নাচ-গান করে উদযাপন করে দিনটি।

২০১২ সালে এই দম্পতির উপর একটি ডকুমেন্টরি তৈরি হয়। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাভিং’ ছবিতে রিচার্ড এবং মিল্ড্রেডের ভালোবাসার গল্প ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই নিয়েই নির্মিত হয়েছে। বর্ণ, জাতিগত বা অন্যথায় প্রেমের কোনও সীমাবদ্ধতা জানে না - এই সত্যকে সম্মান করার জন্য এটি বন্ধু, পরিবার এবং দুর্দান্ত খাবারের সাথে কেবল একটি সহজ উপলক্ষ।

সূত্র: ব্রাইডও/রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।