কোটি কোটি টাকার হীরা চুরি করে ইতিহাস গড়েছেন যে নারী

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫৯ পিএম, ১২ মে ২০২১

কয়লা খনির দেশ পশ্চিম ভার্জিনিয়ার স্ল্যাব ফর্কে ১৯৩০ সালে জন্ম নেন ডরিস পায়েন। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তবে এই দরিদ্রদশার মধ্যে জীবন কাটানোর ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। ডরিস ছেঁড়া কাথায় শুয়েও লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতেন।

স্বপ্ন পূরণে তিনি যা করেছেন, তা ভাবতেই আপনার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে! ৭০ বছর ধরে হীরা চুরি করেছেন, তিনি কতটা সাহসী ভাবুন একবার। বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত জুয়েলারি চোর হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। তার বুদ্ধি ও চুরি করার কৌশলের কাছে বড় বড় গোয়েন্দারাও হার মেনে যান। তাকে বিশ্বের কোনো জেলখানাতেও দীর্ঘদিন আটকে রাখা যায়নি।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া ডরিস ছোটবেলা থেকেই তার মাকে বাবার হাতে সবসময় মার খেতে দেখেছেন। তার মায়ের উপর প্রতিদিন নির্যাতন চালাতেন তার বাবা। এসব দেখে পুরুষের প্রতি ঘৃণা জন্মায় ডরিসের। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কখনোই পুরুষের উপর নির্ভরশীল হবেন না। প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও গ্রহণের সুযোগ পাননি ডরিস। তবে তার বুদ্ধিমত্তা একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষকেও হার মানায়।

jagonews24

১৩ বছর বয়সে ডরিস তার মধ্যে দুইটি বিশেষত্ব খুঁজে পান। তিনি চাইলেই কাউকে কথার জালে ফাসাতে পারেন আবার তার চেহারাও মনে রাখার মতো নয়। এই দু’টি বিষয়কে পুঁজি করেই হীরা চুরির পেশায় নামেন ডরিস। তিনি প্রথম চুরি করে ১৯৫২ সালে। তখন তার বয়স ২৩ বছর।

একটি হীরার দোকানে ক্রেতা সেজে গিয়ে দোকানদারকে বোকা বানিয়ে ২০ হাজার ডলারের আংটি আঙুলে পরেই বেরিয়ে আসে সুকৌশলে। পরের দিন আরেকটি দোকানে গিয়ে ৭ হাজার ডলারের বিনিময়ে সেটি বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ডরিসকে। চুরির পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন ডরিস। সময়ের ব্যবধানে আরও কৌশলী হয়ে ওঠেন তিনি।

নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জেগেছে, পুলিশ কেন তাকে ধরেনি? আসলে ডরিস যেসব দোকান থেকে চুরি করতেন, সেসব স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বা তেমন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকত না। সেসব দোকানীরা যদি চুরির ঘটনা পুলিশকে জানাতেন; তাহলে তাদের উপরই আঙুল তুলতেন পুলিশ। আবার ইন্সুরেন্সের অর্থ খোয়া যাওয়ার ভরে দোকানীরা নিশ্চুপ থাকতেন। এভাবেই বারবার বেঁচে যেতেন ডরিস।

jagonews24

১৯৬৬ সালে প্রথমবারের মতো আইনের নজরে পড়ে যায় ডরিস। তার ছবি ছাপানো হয় পত্র-পত্রিকায়। তবে তার মতোই আরেকজন ক্রিমিনালের সাহায্যে বেঁচে যান ডরিস। তবে শিগগিরই এলাকা পাল্টাতে হয় তার। কারণ শহরজুড়ে তার চেহারা সবাই ততদিনে চিনে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবস্থানেই ডরিসের কুকীর্তি ছড়িয়ে পড়ে। দোকানীরা আরও সতর্ক হতে থাকেন।

এরপর ডরিস পাড়ি জমায় ইউরোপে। চুরি করা অর্থ দিয়ে ডরিস বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার কোটি টাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি কিনেন। উচ্চাভিলাসী জীবন-যাপন করেছেন তিনি। প্রায় ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডায়মন্ড চুরির পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তার ছিল ৯টি পাসপোর্ট, ৩২ টি দেশে ভ্রমণ করেন তিনি। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ২ মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান গহনা চুরি করেন ডরিস।

jagonews24

১৯৬৬ সালের পর থেকে বেশ কয়েকবার বড় বড় চুরির ঘটনায় পুলিশ আটক করে ডরিসকে। তবে সৌভাগ্যবশত বারবার পুলিশের হাত থেকে সরে গিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে ডরিস বলেন, অপরাধজীবনে মোট ৫ বার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে জুলাই মাসে ৮৫ বছর বয়সে আবারও চুরি করেন ডরিস।

এবার ৩৩ হাজার ডলারের একটা আংটি চুরি করেন তিনি। প্রমাণের অভাবে তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ওই বছরেরই ২৩ অক্টোবর ৬৯০ ডলারের একটি কানের দুল চুরি করেন ডরিস। ২০১৭ সালে শেষ দানটি মারেন ডরিস। ওয়ালমার্ট থেকে ৮৬ ডলার মূল্যের জিনিস চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি।

jagonews24

বর্তমানে ডরিসের বয়স ৯১ বছর। নিজের জীবন সম্পর্কে গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাহসী এই নারী।‘ডায়মন্ড ডরিস: দ্য ট্রু স্টোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’স মোস্ট নটোরিয়াস জুয়েল থিফ’ নামের একটি বই লিখেছেন তিনি।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বইটি প্রকাশিত হয়। এই বইতেই বিস্তারিত জানা যায় ডরিসের জীবনের কথা। ২০১৩ সালে ডরিস পাইনকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্মও বানানো হয়- ‘দ্য লাইফ অ্যান্ড ক্রাইম অব ডরিস পাইন’। ডরিস পাইনের একাধিক সাক্ষাৎকার আছে ডকুমেন্টরিতে।

সূত্র: হিস্টোরি

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।