বাসায় বাসায় বিনামূল্যে বই পৌঁছে দিচ্ছে বই বৃক্ষ
একদল তরুণ বিনা মূল্যে বইপড়ানোর কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই তারা প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহল থেকে। তরুণ-তরুণীদের বইয়ের জগতের মধ্যে আনা, তাদের শুদ্ধ বিনোদন আর সুশীল চিন্তার ব্যবস্থা করাই ছিলো তাদের উদ্দেশ্য। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত-
তারা যাত্রা শুরু করেন ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কাটাখালির কবিতা ক্যাফেতে আলোচনা সভার মাধ্যমে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রমজান, খশরু, মেহেদী, বুয়েটের আ. রাফি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসিম রেজার হাত ধরে শুরু হয় এ কার্যক্রম।
তারপর রাজশাহী সদরে সব কলেজের প্রতিনিধি নিয়ে একটি আলোচনা সভা হয়। সেখানে তাদের কার্যক্রমের নাম ‘বই বৃক্ষ’ ও ফাউন্ডিং মেম্বার বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তারপরই সীমিত পরিসরে বই বৃক্ষের সংগ্রহে থাকা বইগুলো বিনা মূল্যে পাঠকদের বাসায় বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এভাবেই শুরু হয় যাত্রা।
প্রথমে শুধু রাজশাহীতে কার্যক্রম শুরু হলেও সময়ের সাথে সাথে এর পরিধি বেড়েছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বই বৃক্ষের ছয়টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া এবং নওগাঁ জেলার তিনটি শাখায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫২৯ জন পাঠককে বই পড়িয়েছেন এবং ২৩১ জনকে নতুন পাঠক বানিয়েছেন। যারা বই বৃক্ষের হাত ধরে বইপড়া শিখেছে।
বই পড়ানোর পদ্ধতি: বই বৃক্ষের ফেসবুকে একটি গ্রুপ আছে, যার নাম ‘বই বৃক্ষ’। সেখানে তারা তাদের সংগ্রহে থাকা বইগুলোর ছবি আপলোড দেন। তারপর পাঠকরা বই পড়তে চেয়ে কমেন্ট করেন এবং বই বৃক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের সাথে কথা বলে তার বাসার ঠিকানা নিয়ে পৌঁছে দেন। আবার পড়া শেষ হলে তাদের বাসা থেকে ফেরত নিয়ে আসেন। ১০০ পৃষ্ঠার বইয়ের জন্য পাঠকদের ১০ দিন সময় দেওয়া হয়। পুরো কার্যক্রমটি তারা বিনা মূল্যে করে থাকেন।
বই কোথা থেকে আসে: বই বৃক্ষের সাথে প্রায় ২১ জন লেখক-লেখিকা যুক্ত আছেন। যারা প্রতিনিয়ত তাদের লেখা বইগুলো বই বৃক্ষ পরিবারকে উপহার হিসেবে পাঠান। বই বৃক্ষ তাদের লেখাগুলো পৌঁছে দেয় পাঠকদের কাছে। এ ছাড়া সমস্ত বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্কুলের শিক্ষক, ডাক্তার, সাংবাদিক, সুধীজন বই বৃক্ষের সাথে যুক্ত আছেন। যারা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন বই বৃক্ষকে। বই বৃক্ষের সদস্যদের মাসিক ফি দিয়েও কিছু বই কেনা হয় পাঠকদের জন্য। বর্তমানে ছয়টি শাখায় বই বৃক্ষের প্রায় ১২৩৪টি বই আছে।
বই বৃক্ষের উদ্যোক্তা রমজান আলী ইমন বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের প্রত্যেকটা উপজেলায় বই বৃক্ষের একটা করে শাখা থাকবে। যেখান থেকে পাঠকরা বিনা মূল্যে বাসায় বসে তাদের পছন্দের বইটি পড়তে পারবেন। বাংলাদেশে অনেক পাঠাগার আছে, শত শত বইয়ে পূর্ণ, সুন্দর আসবাবপত্রে সাজানো। কিন্তু পাঠক নেই, শূন্যতার হাহাকার। আমরা সেই বাধাটাকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো শাখায় বই রাখার তাকও নেই, রুম তো দূরের কথা। তবুও আমরা দেড় বছরে শুধু ছয়টি জায়গা থেকে ৩৫২৯ জনকে বই পড়িয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণদের শক্তি দিয়ে অনেক বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। শুধু সঠিক গাইড লাইন আর শুদ্ধ বিনোদন দরকার। বই বৃক্ষ সেই চেষ্টা করছে। সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/জেআইএম