প্রসবের পর সন্তানকে খুন করে পার্টিতে যান কুমারী মাতা!

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২১

মা হয়ে সন্তানকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটে! তবে এ ঘটনা অনেকটাই ভিন্ন। কারণ এই মা প্রসব করার সঙ্গে সঙ্গেই সন্তানকে হত্যা করে ফেলে দেন ডাস্টবিনে। তারপর নাইট পার্টিতে বন্ধুদের সঙ্গে নাচানাচি শুরু করেন। ভাবতে নিশ্চয়ই অবাক লাগছে, মানুষ কীভাবে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে?

বলছি মেলিসা ড্রেসক্লারের কথা। তার জন্ম ১৯৭৮ সালে। আমেরিকায় মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করতেন তিনি। ১৯৯৭ সালে মেলিসার যখন ১৯ বছর বয়স; তখন তিনি কলেজে পড়ছিলেন। তার পরিবার খুবই ধার্মিক ছিলেন। তারা খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। ছোটবেলা থেকেই মেলিসার মা-বাবার নিষেধাজ্ঞা ছিল, তিনি যেন প্রেম বা কারো সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত না হন!

তবে কিশোরী মেলিসা এসব নিয়ে কখনো ভাবেননি। তিনি কলেজ জীবন থেকেই জন লুইস নামে এক ছাত্রের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। ভালোই চলছিল মেলিসা এবং জনের প্রেম। তারা নিয়মিত সাক্ষাৎ এবং শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতেন।

তবে মেলিসার ধারণা ছিল না, এ অবাধ মেলামেশাই তার জীবনের কাল হতে পারে। একসময় মেলিসা গর্ভধারণ করেন। যদিও এ বিষয়ে তার কোনো জ্ঞান ছিল না। পরপর দুই মাস তার মাসিক বন্ধ থাকে। মেলিসা পরীক্ষা করে দেখেন, তিনি গর্ভবতী। তবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি।

jagonews24

ভয়ে তিনি পরিবারকে জানাননি। এমনকি এ খবর শুনে যদি তার প্রেমিক তাকে ছেড়ে দেন, এ কারণে জনকেও জানাননি। এত বড় একটি বিষয় নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রাখেন। এভাবেই দিন পার হতে থাকে। মেলিসার পেটের মধ্যে সন্তান বড় হতে থাকে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, মেলিসার পরিবার কখনোই তাকে দেখে বুঝতে পারেনি যে, মেলিসা গর্ভবতী।

মেলিসার উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। তিনি স্বাস্থ্যবান ছিলেন। যেহেতু কিশোরী ছিলেন, এ কারণে তার গর্ভধারণের ছাপ শরীরে তেমন ফুটে ওঠেনি। তার পেট একটু বড় হয়েছিল, তবে অস্বাভাবিক নয়। এ কারণেই মেলিসার মা বিষয়টি কখনো টের পাননি। অন্যদিকে মেলিসার প্রেমিকও বিষয়টি বুঝতে পারেননি।

মেলিসা এতটাই অদ্ভুত নারী, পেটে সন্তান নিয়েই সব কাজ আগের মতো করছিলেন। তিনি যেন ভুলেই গিয়েছিলেন তার পেটে একটি সন্তান বড় হচ্ছে। কতটা অস্বাভাবিক ঘটনা, ভাবুন একবার! ১৯৯৭ সালের ৬ জুন মেলিসার কলেজে ‘প্রম ডান্স নাইট’ (কলেজছাত্রীরা তাদের প্রেমিকের সঙ্গে নাচেন) হতে যাচ্ছিল।

jagonews24

এ অনুষ্ঠান নিয়ে মেলিসার অনেক কল্পনা ও ইচ্ছে ছিল। সে তার প্রেমিককে এ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করান। অনেক শপিং করেন। এভাবেই প্রম নাইট এলো। খুব সুন্দর করে সাজলেন মেলিসা। এরই মধ্যে তার পেটে হালকা ব্যথা করছিল। সে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়েই রওনা হলেন প্রম নাইটের ভেন্যুতে। সঙ্গে তার প্রেমিক ও ২ বান্ধবী। গাড়ির মধ্যে মেলিসার ব্যথা বাড়তে থাকে, সবাইকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বলেন মেলিসা।

এরপর ভেন্যুতে নেমেই মেলিসা বাথরুমে যান। সেখানেই প্রসব করেন সন্তান। তবে সন্তানের নাভির সঙ্গে লেগে থাকা নাড়ি কাটবেন কীভাবে? এরও সমাধান করলেন মেলিসা নিজেই। সেখানে একটি টিনের ডাস্টবিন ছিল; সেটির মুখের অংশটি একটু ধারালো থাকায় নাড়ি কাটতে সক্ষম হন মেলিসা।

এরপর তিনি নিষ্ঠুরভাবে বাথরুমে থাকা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে দ্রুত শিশুটিকে ডাস্টবিনে ফেলে দেন। এরপর মেঝেতে পড়ে থাকা রক্তগুলো অন্য একটি তোয়ালের সাহায্যে মুছতে শুরু করেন। এরই মধ্যে তার বান্ধবীরা তাকে খুঁজতে বাথরুমে নক করেন। মেলিসা জানায়, সে দ্রুত বের হচ্ছে! এরপর সবকিছু পরিষ্কার করে থিয়েটারে সবার সঙ্গে যোগ দেন মেলিসা।

jagonews24

নাচতে শুরু করেন প্রেমিকের সঙ্গে। তিনি ভেবেছিলেন কেউই হয়তো তার এ কাজের বিষয়ে জানতে পারবেন না। কিছুক্ষণ পর টয়লেট পরিষ্কারের জন্য কর্মীরা ডাস্টবিনগুলো নিয়ে যান। তখন এক কর্মী অন্যজনকে জানান, তার হাতে থাকা ডাস্টবিনটি ভারি। এরপর সন্দেহবশত তারা ডাস্টবিনের মুখ খুলতেই তোয়ালে পেঁচানো সদ্য জন্মানো মৃত একটি শিশুকে পান।

কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রম নাইটের ওই স্থানে পুলিশ আসে এবং খোঁজ চালায়। এরপর কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করতেই তারা জানান, বাথরুমে মেলিসা ঘণ্টাখানেক ছিলেন। তারপরই পুলিশ গ্রেফতার করেন মেলিসাকে। এরপর চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করেই বুঝতে পারেন, তিনিই ওই শিশুটিকে জন্ম দিয়েছেন কয়েক ঘণ্টা আগে।

জন্মের সময় শিশুটি জীবিত ছিল বলে ময়নাতদন্তে বেরিয়ে আসে। নিজ সন্তানকে হত্যার দায়ে মেলিসাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিশোরী হওয়ায় এবং মানসিক সমস্যা খুঁজে পাওয়ায় বিচারক মেলিসাকে মৃত্যুদণ্ড দেননি। ১৫ বছর কারাদণ্ড হলেও ৩ বছরের মাথায় ২০০১ সালের ২৬ নভেম্বর প্যারোলে বেরিয়ে আসেন মেলিসা। বর্তমানে স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। দুই সন্তানের জননী এই ‘প্রম মম’।

সিবিএস নিউজ/অ্যাপডট/জেএমএস/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।