টাকা সঙ্গে থাকলে যেভাবে সতর্ক থাকবেন
রিয়াজুল হক
মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন আমার এক বন্ধুর আত্মীয় একটি স্কুলের শিক্ষক; তিনি ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা তুলে হাতব্যাগে রেখে বাসায় আসছিলেন। তার সঙ্গে কেউ ছিলেন না। রাস্তায় হঠাৎ এক দুর্ঘটনার শিকার হলেন তিনি। দুই ব্যক্তি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালে ভর্তি করে তারা চলে যান। ভেবেছিলেন উপকারী বন্ধু। ডাক্তার হাঁটুতে, হাতে, মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার বেশ কিছু সময় পর তিনি হাতব্যাগটির ভেতরে দেখলেন। সব কিছুই ঠিক আছে। শুধু সেই তিন লাখ টাকা নেই। বুঝতে পারলেন, যারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন; তাদের দু’জনের কেউ সেই টাকা সরিয়ে ফেলেছেন।
কারণ হাসপাতালে আনার সময় তাদের কাছেই হাতব্যাগটি ছিল। দুর্ঘটনার পর তিনি প্রায় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা! একজন স্কুলশিক্ষকের কাছে তিন লাখ টাকা কতটা মূল্যবান; সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারি। আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করার দরকার হয় না।
কাছে টাকা থাকলে, অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। না হলে অনেক সময় খেসারত দিতে হয়। খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে, দুই ধরনের কাজের জন্য মানুষ ব্যাংকে যায়। কেউ টাকা জমা দিতে আর কেউ টাকা উঠাতে। গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে গেলে অনেক সময় ব্যাংকে ভিড় থাকে।
এরই মাঝে কোনো কোনো সময় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র লুকিয়ে থাকে। আবার ব্যাংকের বাইরেও বিভিন্ন ধরনের ছিনতাইকারীর প্রকোপ রয়েছে। এদের থেকে অবশ্যই আমাদের সাবধান থাকতে হবে। এজন্য বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকের উদ্দেশ্যে বের হলে কিংবা ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর পর কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন-
১. বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এবং ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর পর সঙ্গে কাউকে রাখুন। তবে অবশ্যই শিশু কিংবা বৃদ্ধ নয়।
২. ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত সাবধান থাকুন। ব্যাংকে যাওয়ার পথে কিংবা টাকা উঠানোর পর অহেতুক মানুষের সঙ্গে আড্ডা, গল্প, তর্ক করা থেকে বিরত থাকুন। অপরিচিত কারো দেওয়া কোনো খাবার খাবেন না।
৩. ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা নেওয়ার পর প্রয়োজনে কাউন্টারের সামনেই টাকা গুনে নিন। একই টাকা বিভিন্ন জায়গায় বসে গোনার দরকার নেই। এতে আপনার নোটের সংখ্যা বাড়বে কিংবা কমবেও না। ক্যাশ কর্মকর্তারা আপনার সামনেই সাধারণত একবার হাতে টাকা গুনে দেখার পর কাউন্টার মেশিন দিয়ে টাকা চেক করে নেন।
৪. অনেকেই থাকেন টাকা গুনে দেখার পর আবার কাউন্টারে গিয়ে ৫০০ টাকার নোট খুচরা করে দেন। এই ১০০ টাকার নোট পরিবর্তন করে দেন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। টাকা ভাঙিয়ে নেওয়ার পর কিংবা অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পর আবার সব টাকা গণনা শুরু করেন। এতে আপনি প্রতারক চক্রের চোখে পড়ে যেতে পারেন। কারণ এ ধরনের প্রতারক দ্বিধাগ্রস্ত কিংবা বয়স্ক মানুষকে বেশি টার্গেট করে।
৫. ভিড়ের মধ্যে থাকবেন না। আপনাকে কেউ খেয়াল করছে কি-না কিংবা নিজে থেকে কেউ এসে পরিচিত হতে চাচ্ছে কি-না, লক্ষ্য রাখুন। অস্বাভাবিক কিছু মনে হলে দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করুন এবং পরিচিত মানুষকে ফোন দিয়ে জানান।
৬. ব্যাংকের ভেতর অবস্থানকালে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে খোশ গল্পে মেতে ওঠা থেকে বিরত থাকুন।
৭. এখন ব্যাংকের ভেতরেই সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে। টাকা-পয়সা কাছে থাকলে ক্যামেরার সামনে থাকার চেষ্টা করুন। এতে আপনার উপর যারা নজর রাখছে কিংবা যারা কথা বলেছে; তাদের মধ্যে কেউ অপরাধী হলে পরবর্তীতে তাদের সনাক্ত করা সহজ হবে।
৮. টাকা জমা দেওয়ার জন্য কীভাবে ব্যাংকে যাবেন কিংবা টাকা উঠানোর পর কীভাবে বাসায় বা নির্দিষ্ট স্থানে যাবেন, তার জন্য আগে থেকে পরিবহনের ব্যবস্থা করে রাখতে পারেন।
১০. ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর পর আশেপাশে চা-বিস্কুট, নাস্তা খাওয়া, ঘোরাঘুরি থেকে বিরত থাকুন। সোজা নিজের গন্তব্যে চলে যান। এতে প্রতারকচক্র সহজে আপনাকে টার্গেট করতে পারবে না।
১১. টাকার পরিমাণ বেশি হলে জমা দেওয়ার সময় কিংবা উঠানোর পর পুলিশি সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
১২. যেকোনো সমস্যা এড়ানোর জন্য প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহায়তা নিন।
টাকার কারণেই বিভিন্ন ধরনের অঘটন ঘটে। সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে দূরে থাকার জন্য যতক্ষণ আপনার কাছে টাকা থাকবে; ততক্ষণ সতর্ক থাকুন।
লেখক: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
জেএমএস/এসইউ/জেআইএম