বানান আন্দোলনের অ্যাপ আসবে ২১ ফেব্রুয়ারি
২০১৬ সালে বাংলা বানান বিভ্রাট দূর করতে উদ্যোগ নেন ওয়াহেদ সবুজ ও রেজবুল ইসলাম। তারা ‘বানান আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘বানান আন্দোলন’ নামের একটি অ্যাপ আলোর মুখ দেখবে। সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম ও অ্যাপের অভিষেক সম্পর্কে কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—
জাগো নিউজ: বাংলা বানান আন্দোলনের চিন্তা কবে থেকে মাথায় এলো?
বানান আন্দোলন: ২০১৬ সাল থেকে ভাবনাটি আমাদের মাথায় আসে। তখন থেকেই চিন্তা করি কিছু একটা করার।
জাগো নিউজ: বানান আন্দোলনের শুরুর গল্পটা শুনতে চাই—
বানান আন্দোলন: ২০১৬ সালে একদিন এক কাজে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য বানান ভুল চোখে পড়ে। এমনকি কলেজের নাম পর্যন্ত একেক স্থানে একেক রকম লেখা। একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ভুল দেখেই প্রথম ‘বানান আন্দোলন’র পরিকল্পনা মাথায় আসে। সে বছর ৮ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে কাজ এগোতে থাকে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনার কারণে লকডাউন শুরু হলে বানান আন্দোলনের কাজ দারুণ গতি পায়। মাত্র দু’তিন মাসেই সারাদেশে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়।
জাগো নিউজ: শুরুতে কে কে যুক্ত ছিলেন এর সঙ্গে?
বানান আন্দোলন: বানান আন্দোলনের ভাবনার শুরু থেকেই ওয়াহেদ সবুজ ও রেজবুল ইসলাম জড়িত ছিলেন।
জাগো নিউজ: এ সংগঠনের বর্তমান সদস্য কতজন?
বানান আন্দোলন: প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ১৫ জন। এছাড়া সরাসরি সুবিধাভোগী সদস্য প্রায় ৬৭ হাজার।
জাগো নিউজ: বানান আন্দোলনের কাজ কী?
বানান আন্দোলন: বাংলা ভাষার শুদ্ধাচারকে বিশ্বব্যাপী বাঙালির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে বানান আন্দোলন।
জাগো নিউজ: সংগঠনটি কীভাবে কাজ করে?
বানান আন্দোলন: এটি মূলত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। একটি বৃহদাকার ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ভাষার শুদ্ধাচার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করা হয়। মানুষকে বাংলা শব্দ ও বাক্যের শুদ্ধ ব্যবহার বিষয়ে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা হয়। নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট আছে; যেখানে বাংলা বানান, উচ্চারণ ও ব্যাকরণের যাবতীয় সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। এছাড়া আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে বানান, উচ্চারণ ও ব্যাকরণ বিষয়ক ফ্রি অনলাইন ক্লাস করা যায়। তবে আমাদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রকল্প অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। যার নাম ‘বানান আন্দোলন’। এটি হবে এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় ডিজিটাল শব্দ-তথ্যভান্ডার। সামনের দিনগুলোয় শব্দ ও ভাষার ব্যবহারে শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে এমন কিছু ডিজিটাল প্রোডাক্ট তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
জাগো নিউজ: অ্যাপ বানানোর উদ্দেশ্য কী? এটি কবে বের হবে? এর উপকারিতা কী?
বানান আন্দোলন: অ্যাপটি হবে বাংলা অভিধানের একটি বিকল্প। শুধু তা-ই নয়, এটি এক লাখ শব্দের বড় একটি তথ্যভান্ডার। যেখানে প্রতিটি শব্দের সাতটি করে তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে। যা থেকে বাংলা ভাষার শব্দভান্ডার বিষয়ক সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে। সুতরাং এটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ভাষা-গবেষকদের জন্যও একটি দারুণ সহায়ক শিক্ষামাধ্যম হবে। অ্যাপটি আসবে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি।
জাগো নিউজ: এ আন্দোলনে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
বানান আন্দোলন: গত কয়েক বছরে দেশে বাংলা ভাষার শুদ্ধতাচর্চার একটি অন্যতম প্রধান সহায়ক মাধ্যম হয়ে উঠেছে ‘বানান আন্দোলন’। শুরু থেকেই যে অসম সততার সঙ্গে আমরা ভাষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি, তারই ফলস্বরূপ বানান আন্দোলনের আজকের এ অবস্থান। সামনের দিনগুলোও ডিজিটাল বাংলাদেশ কনসেপ্টকে মাথায় রেখে ভাষা-শিক্ষার জন্য সহায়ক নানা ধরনের ডিজিটাল প্রোডাক্ট তৈরির মধ্যদিয়ে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ভাষাচর্চার ক্ষেত্রকে অন্য একটি অনন্য মাত্রায় উন্নীত করার জন্য আমরা কাজ করে যাবো।
জাগো নিউজ: আন্দোলন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
বানান আন্দোলন: বানান আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলা ভাষার শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে ভাষা-গবেষণার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানো। বাংলা বানান বিষয়ে অনাগ্রহ ও ভাষার অযাচিত ভুল ব্যবহার ভাষার প্রতি উদাসীনতাই প্রমাণ করে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই ভাষার শুদ্ধ ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি ও ভাষার শুদ্ধাচার ছড়িয়ে দিতে ‘বানান আন্দোলন’ বহুমুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হবে ‘বানান আন্দোলন’ মোবাইল অ্যাপ। প্রযুক্তিবিল্পবের সময়ে বিশ্বের সব বাংলাভাষি মানুষের জন্য বাংলা ভাষা শিক্ষার উপায় হিসেবে অ্যাপটি মাইলফলক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এসইউ/এএসএম