ভবনের স্ল্যাবে ফাটল ধরলে যা করবেন
রড-সিমেন্ট কংক্রিট নির্মিত সমতল পাতলা ঢালাইকে স্ল্যাব বলে। এ কংক্রিট স্ল্যাব ছাড়া নির্মাণকাজ প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে বেশিরভাগ ভবনের স্ল্যাবই রিইনফোর্সড কংক্রিট স্ল্যাব। তবে স্ল্যাবে ফাটল ধরার ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের ত্রুটির কারণে এ ফাটল দেখা দেয়। আসুন জেনে নেই কংক্রিট স্ল্যাবে ফাটল ধরলে কী করবেন?
ফাটল ধরার কারণ: স্ল্যাবের উপরের ও নিচের দুই তলই সাধারণত সমান্তরাল হয়। এ স্ল্যাবে বিভিন্ন কারণে ফাটল বা ক্র্যাক দেখা দিতে পারে। যেকোনো ভবনে দুই ধরনের ফাটল দেখা যায়- কাঠামোগত ও অকাঠামোগত ফাটল। কংক্রিট স্ল্যাবের ফাটল কাঠামোজনিত ফাটলের অন্তর্ভুক্ত। কাঠামোজনিত ফাটল আবার দুটি কারণে হয়- নকশাজনিত ত্রুটি এবং নির্মাণকাজে ত্রুটি।
নকশাজনিত ত্রুটি: ভবনের কাঠামোগত ডিজাইন সঠিকভাবে করা না হলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সঠিকভাবে কাঠামোগত নকশা প্রণয়নের জন্য প্রয়োজন বিল্ডিংয়ের ব্যবহার সম্পর্কে এবং বিল্ডিং কোড নিয়ে সম্যক ধারণা থাকা। ভবনে আগত সব ধরনের লোড, বাতাস, ভূমিকম্পসহ অন্যান্য পার্শ্বীয় লোডের হিসাব সঠিকভাবে করা।
প্রায়ই দেখা যায়, এক কাজের জন্য নির্মিত ভবন অন্য কাজে ব্যবহার হয়। রেসিডেন্সিয়াল লোড হিসাব করে কাঠামো নকশা করে তাতে অফিস বা ফ্যাক্টরির কাজ করলে সেই ক্ষেত্রে লোড হিসাবে তারতম্য হওয়ায় ফাটলজনিত সমস্যা হতে পারে। তাই ভবন নির্মাণকাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সংশ্লিষ্ট সাইটের মাটি পরীক্ষা করা।
এ মাটি পরীক্ষার কাজ সঠিকভাবে না করলে এবং ভুল ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কারণে অনেকসময় ভবন হেলে পড়ে। এতে স্ল্যাবে ফাটল দেখা দেয়। তাছাড়া রডের সাইজ ও ডিজাইনে ভুল থাকার কারণেও ফাটল দখো দেয়। তাই কোড অনুযায়ী রডের ডিজাইন করা উচিত।
নির্মাণজনিত ত্রুটি: অনেক সময় স্ল্যাবের কংক্রিট ক্লিয়ার কাভার না হওয়ায় জলীয় বাষ্প বা পানি ঢুকে কংক্রিট ও রিইনফোর্সমেন্টের গুণগত মান নষ্ট হয়ে ফাটল ধরে। বীম ও কলামের সংযোগস্থলে প্রয়োজনের বেশি রড ব্যবহার করলে কংক্রিট ঠিকমতো ঢুকতে না পারলেও ফাটল ধরে।
আরেকটি বড় কারণ হলো কংক্রিট সঠিকভাবে মিক্স না করা ও ভুল অনুপাতের কংক্রিট মিক্স ব্যবহার করা। শুধু তা-ই নয়, ইট, বালি, খোয়া ইত্যাদির গুণগত মানে ত্রুটি থাকলেও স্ল্যাবে ফাটল দেখা দেয়। এছাড়া সঠিক সময়ের আগে সাটারিং খুলে ফেলা। এতে কংক্রিট পূর্ণ শক্তি পাওয়ার আগেই তার উপরে লোড পড়ার কারণে স্ল্যাব ফেটে যায়।
প্রতিকার: স্ল্যাব তৈরির আগে ও ঢালাইয়ের সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হলে খুব সহজেই ফাটল এড়ানো যায়। রিইনফোর্সড কংক্রিট স্ল্যাব তৈরির সময় তাই নিচের নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত-
১. ভবনের কাঠামোগত নকশা প্রণয়নের সময় সঠিকভাবে বিল্ডিং কোড মেনে চলা।
২. কংক্রিট মিক্সের অনুপাত সঠিক আছে কি-না তা যাচাই করে নেওয়া।
৩. মাটির পরীক্ষা অনুযায়ী কাঠামো নির্মাণ করা।
৪. ভবনের লোড হিসাব করে কাঠামো নির্মাণ করা।
৫. সাইট অনুযায়ী দুর্যোগ বিবেচনা করে ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ।
৬. সাটারিং খোলার সময় সঠিকভাবে নিয়ম মেনে চলা।
৭. কংক্রিটের উপাদানসমূহের গুণগত মান নিশ্চিত করা।
স্ল্যাবকে যেকোনো ভবনের হৃৎপিণ্ড বিবেচনা করা হয়। তাই স্ল্যাব নির্মাণ সঠিক না হলে পুরো ভবন নির্মাণকাজই বৃথা হবে। ফলে সঠিক নিয়ম মেনে এবং যথাযথ তত্ত্বাবধানের আওতায় রেখে রিইনফোর্সড কংক্রিট স্ল্যাব নির্মাণ করা জরুরি।
হোম বিল্ডার্স ক্লাব/এসইউ/জেআইএম