২০টি দিয়ে শুরু করা পাঠাগারে এখন ২ হাজার বই

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:২১ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আতিফ আসাদ। ১২ মাস ছুটে বেড়ান মানুষের বাড়ি বাড়ি। সকাল কিংবা সন্ধ্যা দুই চাকার সাইকেলের পেছনে বইয়ের বান্ডেল। গ্রাম থেকে গ্রামে বিনামূল্যে মানুষের হাতে তুলে দেন বিভিন্ন ধরনের বই। ২০টি বই দিয়ে শুরু করা তার পাঠাগারে এখন ২ হাজার বই। বিস্তারিত জানাচ্ছেন শেখ নাসির উদ্দিন—

বাবা-মাসহ সাত ভাই-বোনের অভাবের সংসারে সবচেয়ে ছোট আতিফ। বাবার আয়ে সংসার চলে না। অন্য ভাই-বোনের মতো তাকেও কাজ করতে হয়। পড়াশোনার প্রতি সব সময় ছিল প্রবল মনোযোগ। ছোটবেলা থেকে মায়ের সাথে নকশিকাঁথা থেকে শুরু করে ধানকাটা, দিনমজুরি, রং বার্নিশ, রাজমিস্ত্রি ও রডমিস্ত্রির কাজ করে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা। অবসর সময়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বই বিলি করেন। নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন মিলন স্মৃতি পাঠাগার।

book

বইপ্রেমী তরুণ আতিফ আসাদ বলেন, ‘টাকার অভাবে প্রয়োজনী বই-গাইড কিনতে পারিনি। ভালো শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া হয়নি। এ বিষয়গুলো আমাকে কষ্ট দিত। ভাবতাম, সমাজের জন্য কিছু করব। প্রত্যন্ত গ্রামে পাঠাগার না থাকায় বইপড়ার সুযোগ নেই। বই কিনে পড়ার সামর্থ্যও নেই। গ্রামের ছেলে-মেয়েদের অবসরে বিনামূল্যে বই পড়ানোর পরিকল্পনা করি।’

পাঠাগারের যাত্রা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কোথাও ঘর তুলে বা ভাড়া নিয়ে লাইব্রেরি করার মতো অবস্থা ছিল না। ফলে নিজের ঘরের বারান্দার ছোট রুমে ২০১৮ সালে ২০টি বই নিয়ে পাঠাগার চালু করি। আমার বড় ভাই সব সময় সহযোগিতা করেন। শুরুর দিকে মানুষের কাছ থেকে চেয়ে বই বাড়িয়ে পাঠকদের দেওয়ার চেষ্টা করি। এরপর ফেসবুকে লাইব্রেরি নিয়ে লিখি। মানুষের পড়ে থাকা বইগুলো পাঠাগারে দেওয়ার আহ্বান জানাই।’

book

তিনি আরও বলেন, ‘গ্যাসটন ব্যাটারিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক কে এইচ মালেক পাঠাগারে একশ বই দেন। ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বই কেনার জন্য টাকা দেন। এতে পাঠাগার সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি পাঠকরা ভালো বই পান। দিন দিন বইয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু বই রাখা কষ্টকর হয়। তা দেখে মো. আ. মালেক নামে একজন বুকশেলফ বানানোর টাকা দেন। সবার দেওয়া বই নিয়ে পাঠাগারে এখন প্রায় ২ হাজার বই।’

book

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আতিফের পাঠাগারের জন্য নিয়মিত বই আসে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। নিজ বাড়ি থেকে কখনো ৮ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে উপজেলা শহর, আবার কখনো ৪০ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে জেলা সদর থেকে মানুষের পাঠানো বই সংগ্রহ করেন তিনি। এ ছাড়া এ তরুণের উদ্যোগে জামালপুরে প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

book

পাঠাগারের নামকরণ সম্পর্কে আতিফ বলেন, “প্রথমদিকে কোনো নাম ছিল না। ২০১৮ সালের ২১ ফ্রেরুয়ারি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আমার বড় ভাই মিলনকে জবাই করে পাশের গ্রামের কালভার্টের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। এ ভাই আমাকে সব সময় দিকনির্দেশনা দিয়ে পাশে ছিলেন। তার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আমি পাঠাগার তৈরির সাহস পেয়েছিলাম। ভাইয়ের নামে ‘মিলন স্মৃতি পাঠাগার’ নামকরণ করি।”

বইপ্রেমী মানুষটির প্রত্যাশা, বইপড়ার এ আন্দোলন গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ুক। প্রতিটি গ্রামে গড়ে উঠুক অসংখ্য পাঠাগার।

এসইউ/এএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।