যে দ্বীপে মানুষ দীর্ঘদিন বাঁচে!

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২০

গ্রীসের একটি ছোট দ্বীপের নাম ‘ইকারিয়া দ্বীপ’। ২৫৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত দ্বীপটি। যেখানে মানুষ দীর্ঘ জীবন লাভ করে। এর কারণ, দ্বীপের পরিবেশ এবং আবহাওয়া। স্তামাতিস মোরাইতিস নামে এক লোক ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ইকারিয়া দ্বীপে এসে দীর্ঘদিন বেঁচেছিলেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, তিনি কোনো রকম চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।

jagonews24

জানা যায়, এ দ্বীপের মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। তবে ইকারিয়ার বৃদ্ধ বাসিন্দাদের দেখলে অন্যসব বৃদ্ধের সঙ্গে মেলানো যায় না। তারা ১০০ বছরেও লাঠি ভর দিয়ে চলেন না। পাহাড়ি সিঁড়ি ভেঙে একাই উঠে যান গির্জায়। ক্যান্সারের রোগীও এখানে এসে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন বিনা চিকিৎসায়। যেমনটি ঘটেছিল ইকারিয়ার বাসিন্দা স্তামাতিস মোরাইতিসের সঙ্গে।

১৯৫১ সালে স্তামাতিস মোরাইতিস ইকারিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে আমেরিকার ফ্লোরিডায় থাকতেন। ১৯৭৬ সালে হঠাৎ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা জানান, তার ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে। তিনি মাত্র ৯ মাস বেঁচে থাকবেন বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।

jagonews24

স্তামাতিসের তখন ৬০ বছর বয়স। জীবেনর শেষ সময় তিনি ইকারিয়ায় ছেলেবেলার বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলেন। স্ত্রীর সঙ্গে ইকারিয়ায় ফিরে আসেন। সেখানে আসার মাসখানেক পরই তার জীবনের ঘড়ি উল্টো দিকে চলতে শুরু করে। ক্রমে সুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। একাই হাঁটা-চলা শুরু করেন। এমনকি নিজের জমিতে চাষ করেন। সবশেষে তিনি ৯০ বছর পর্যন্ত বেঁচেছিলেন।

jagonews24

শুধু তা-ই নয়, এমন অনেক উদাহরণ আছে এ দ্বীপে। এখানকার বাসিন্দারা এখনও ঘড়ির ওপর নির্ভরশীল নন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দোকান খোলেন। লাঞ্চে নিমন্ত্রিত অতিথিরা সকাল ১০টা বা সন্ধ্যা ৬টায় আসেন। এখানে সবাই নিজের ইচ্ছামতো চলেন। তাতে কারো কোনো সমস্যাও হয় না। টাকা-পয়সা নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না। তাই ভীষণ চিন্তামুক্ত থাকেন।

সূত্র জানায়, বেশি বেশি শাক-সবজি, ফল-মূল খান তারা। ফাস্ট ফুড একেবারেই নেই। মাছ-মাংসও পরিমাণে কম খান। মৎস্যজীবী, চাষি, পশুপালন এগুলোই এখানকার মানুষের মূল পেশা। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আলাদা শরীরচর্চা করতে হয় না। তারা স্থানীয় মদ খান। কিন্তু তা দু’গ্লাসের বেশি নয়। রাতে ঘুমনোর আগে একধরনের হার্বাল চা খান। তাদের ঘুমও পর্যাপ্ত হয়।

jagonews24

২০০০ সালে ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক এক্সপ্লোরার এবং লেখক ড্যান বিউটনার এ দ্বীপের ওপর একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম ‘দ্য ব্লু জোন্স সলিউশন’। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শতায়ুর সংখ্যা এই দ্বীপে কেন? কেন এখানে মানুষ কম অসুখে ভোগেন? বিশ্বে ভয়ানক হারে বাড়তে থাকা ক্যান্সার এবং হৃদরোগ এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে দেখাই যায় না, সেটা কীভাবে সম্ভব? এ নিয়ে প্রচুর গবেষণাও হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস/এসইউ/এএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।