যেমন ছিল কামাল লোহানীর বর্ণাঢ্য জীবন
অডিও শুনুন
কামাল লোহানী ছিলেন বাংলাদেশের একজন ভাষা সৈনিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রখ্যাত সাংবাদিক। ‘কামাল লোহানী’ নামে পরিচিত হলেও তার পারিবারিক নাম ‘আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী’। তার পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও কর্ম জীবন ছিল আলোকিত। তার সেই বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে জেনে নেই-
জন্ম: কামাল লোহানীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার সনতলা গ্রামে। বাবার নাম আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী। মায়ের নাম রোকেয়া খান লোহানী।
শিক্ষা: কামাল লোহানী প্রথমে কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা শুরু করেন। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে তিনি পাবনা চলে আসেন। ভর্তি হন পাবনা জিলা স্কুলে। ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। সেই কলেজ থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টানেন।
সাংবাদিকতা: কামাল লোহানী পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। তিনি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তার কর্মস্থল ছিল দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তা প্রভৃতি। তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নে দু’দফা যুগ্ম-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হন।
নেতৃত্ব: তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা সৈনিক ছিলেন। এরপর মার্কসবাদী আদর্শে ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন ‘ক্রান্তি’। এছাড়াও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন সংগঠক ছিলেন। তিনি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ছিলেন।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড: তিনি গণশিল্পী সংস্থার সভাপতি ছিলেন। ১৯৬২ সালে কিছুদিন কারাবাসের পর ‘ছায়ানট’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। সাড়ে চার বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দু’বার মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। এরপর ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চার বছর বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির এক নম্বর সদস্য ছিলেন।
সম্মাননা: কামাল লোহানী সাংবাদিকতায় ২০১৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এ ছাড়া শুভজন পদকসহ একাধিক পদক ও সম্মাননা লাভ করেন।
জীবনের অবসান: প্রথিতযশা সাংবাদিক কামাল লোহানী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০ জুন সকাল ১০টা ১০ মিনিটে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বর্ণাঢ্য একটি জীবনের সমাপ্তি ঘটে মহামারীর ছোবলে।
আমরা তার বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি। শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
এসইউ/এএ/এমএস