করোনা আক্রান্তকে প্লাজমা কে দিতে পারবেন?

ডা. হিমেল ঘোষ
ডা. হিমেল ঘোষ ডা. হিমেল ঘোষ , চিকিৎসক
প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ০৩ জুন ২০২০

অডিও শুনুন

এটা মনে হতে পারে যে, প্লাজমা যেহেতু মানুষের রক্তজাত উপাদান আর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য; সেহেতু মৃদু কোভিড-১৯ সংক্রমণ যেমন- একটু জ্বর, খুশখুশে গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা বা গা ম্যাজম্যাজ করছে, এমন ক্ষেত্রে একব্যাগ প্লাজমা নিয়ে নিই- বিষয়টা মোটেও এমন নয়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীর যাদের জ্বর, সর্দি, শুকনো কাশি বা শরীর ব্যথা আছে তাদেরকে বাসায় থেকেই উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে। এই বিশাল অংশ রোগীদের প্লাজমা থেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

তিন ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া যেতে পারে:
১. মারাত্মক কোভিড আক্রান্ত রোগী- যার এক বা একাধিক লক্ষণ রয়েছে। শ্বাসকষ্ট, শ্বাস প্রশ্বাসের হার মিনিটে ৩০ বারের বেশি, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৩% এর কম, পি/এফ অনুপাত ৩০০ এর কম ও ২৪-৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ফুসফুসের প্রদাহ ৫০% এর বেশি বেড়ে যাওয়া।

২. জীবন সংকটাপন্ন কোভিড আক্রান্ত রোগী- ফুসফুসের অকার্যকারিতা অথবা সেপ্টিক শক অথবা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল এই তিনটির যেকোন এক বা একাধিক লক্ষণ রয়েছে।

৩. সাধারণ উপসর্গে আক্রান্ত রোগী কিন্তু আগে থেকেই যদি অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, হৃদরোগ, অ্যাজমা বা নিউমোনিয়া ইত্যাদি থাকে এবং চিকিৎসক যদি মনে করেন যে, এই রোগীর মারাত্মক বা জীবন সংকটাপন্ন পর্যায়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কে প্লাজমা দান করতে পারবেন:
১. প্রথাগত রক্তদানের যেসব যোগ্যতা থাকতে হয়, প্লাজমা ডোনারের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।
২. প্লাজমা দাতার ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রমাণ থাকতে হবে। অসুস্থতার সময় টেস্ট স্যাম্পল আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পজিটিভ থাকতে হবে। অথবা শুরুতে যদি এই পরীক্ষা সম্ভব না হয়, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর সেরোলজিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে সার্স-কোভ-২ অ্যান্টিবডি পজিটিভ থাকতে হবে।
৩. উপসর্গগুলো থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হওয়ার অন্তত ১৪ দিন পর দাতা প্লাজমা ডোনেশনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
৪. ডোনেশনের আগে প্লাজমাতে সার্স-কোভ-২ নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডির মাত্রা সর্বনিম্ন ১:১৬০ থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ১:৮০ কেও গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়। অ্যান্টিবডি মাত্রা ৪র্থ সপ্তাহের দিকে সবচেয়ে বেশি (১:৬৪০) থাকে। সে কারণে কোথাও কোথাও উপসর্গ থেকে মুক্ত হওয়ার ২৮ দিন পর প্লাজমা সংগ্রহ করাকে শ্রেয় মনে করা হয়।
৫. উপসর্গবিহীন কিন্তু কোভিড-১৯ আরটি-পিসিআর টেস্ট পজিটিভ- এক্ষেত্রে আরটি-পিসিআর টেস্ট নেগেটিভ হওয়ার ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর এবং ডোনেশনের আগে পুনরায় আরেকটি পিসিআর টেস্ট নেগেটিভ হলে প্লাজমা ডোনেশনের জন্য বিবেচিত হবেন।
৬. পুরুষ ও মহিলা যারা গর্ভধারণ করেননি উভয়ই উল্লিখিত শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে প্লাজমা দান করতে পারবেন। যেসব মহিলা গর্ভধারণ করেছেন, তারা এইচএলএ অ্যান্টিবডি টেস্ট নেগেটিভ থাকা সাপেক্ষে প্লাজমা ডোনেশনের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হবেন।
৭. প্লাজমার ৯০%-ই পানি। তাই কেউ প্লাজমা দান করলে ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শরীর তা পূরণ করে ফেলে। স্বাভাবিক খাবার আর যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করলেই চলবে এক্ষেত্রে। ডোনারের শরীরের ওজনের হিসাবে ১০ মিলি লিটার/প্রতি কেজি প্লাজমা নেওয়া হয়ে থাকে। অর্থাৎ ডোনারের ওজন যদি ৫০ কেজি হয়, তবে মাত্র ৫০০ মিলি প্লাজমা নেওয়া হবে।

আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, একজন প্লাজমা দান করার ৪৮ ঘণ্টা পর পুনরায় প্লাজমা দান করতে পারেন। অর্থাৎ সপ্তাহে ২ বার চাইলেই ডোনার প্লাজমা দিতে পারেন নিরাপদে। এজন্য শুধু বেশি করে পানি আর স্বাভাবিক খাবার-দাবার খেতে হবে। তারপরও যদি কেউ শঙ্কিত থাকেন। অন্তত প্রতি সপ্তাহে ১ বার তো প্লাজমা দান করতেই পারেন।

> আরও জানতে পড়ুন-
প্লাজমা থেরাপি কী এবং কবে থেকে শুরু হয়
করোনায় প্লাজমা থেরাপি কীভাবে কাজ করে?

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।