করোনা আতঙ্ক: আসুন সবাই মিলে বাঁচি

রিফাত কান্তি সেন
রিফাত কান্তি সেন রিফাত কান্তি সেন , লেখক
প্রকাশিত: ০৪:৩০ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০২০

করোনা আতঙ্কে নিস্তব্ধ গোটা বিশ্ব। প্রায় তিনশ কোটি মানুষ এখন গৃহবন্দি। বিত্তবানরা নিজের আখের গোছাতে পারলেও দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো পড়েছে বিপাকে। কিছু লোক খুঁজে খাবার জোগাড় করতে পারলেও কেউ কেউ নীরবে চোখের পানি ঝরাচ্ছেন। গল্পগুলো কেমন যেন অদ্ভুত। এই যে মহামারী করোনা, সেটাকেও একদল পাত্তা দিচ্ছে না। এ মহাদুর্যোগে কেউ কেউ চাল, ডাল চুরিতে ব্যস্ত।

দুর্ভাগ্য হলো, কিছু ব্যবসায়ীও সে খাতায় নাম লিখিয়েছেন। পণ্যের দাম বাড়িয়ে একটু বাড়তি ফায়দা লুটছেন। সেদিন একটি গ্লাভস কিনতে এক দোকানে গেলাম। দোকানি ২৫ টাকার গ্লাভস বলছে ৮০ টাকা! আমি খুব হতবাক হলাম। তিনি বললেন, ‘ভাই, নিলে নেন, না নিলে নাই’। তার না-কি সময় নেই। এত লোভ! খুব হুঙ্কার দিয়ে বলল, ‘যান, কারে বলবেন, বলেন।’ আমি চুপিচুপি বললাম, ‘কারে আর বলবো, উপরওয়ালারে। তিনিই তো ভরসা’।

এরও একটি কারণ আছে। আমার পার্শ্ববর্তী এক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য প্রশাসন মাঝে মাঝে হানা দেয়। কিছু দোকানিকে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু ‘যেই লাউ সেই কদু’। কিছুক্ষণ পর আবার তারা পূর্বের অবস্থানে ফিরে যায়। একজন তো সেদিন আমাকে পেয়ে বলছে, ‘ভাই, কিছু তুলে ধরেন। জানেন তো, এই যে জরিমানার টাকা। এটা কিন্তু আমাদের কাছ থিকাই তারা তুলবে।’ মানে প্রশাসন যাওয়ার পর আগের মতোই দাম বাড়িয়ে দেয়। আমার মনে হয়, এদের সুযোগ না দিয়ে লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া উচিত।

আরেকটি গল্প, এটিও বাস্তবতা থেকে তুলে আনা। গতকাল রাতে একটি মিনিটের জন্য ঘুমাতে পারিনি। নিজের আর্থিক অবস্থা যে খুব ভালো, তেমনও না। নিজেই বেশ কষ্টে দিনাতিপাত করছি। কিন্তু মনে হলো, আমার মাথার উপর তো ছায়া হিসাবে বাবা আছে। অতি কষ্টে দিনাতিপাত করলেও তিনি তো কখনো ‘না’ শব্দটি বলেননি। যেহেতু গ্রামে থাকি; সেহেতু গ্রামের মানুষের দুঃখ, কষ্ট কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারি। পারবোই না কেন? আমি তো মানুষ। হয়তো নিম্নমধ্যবিত্ত, তাই চুপষে থাকি।

rifat-cover

গ্রামের স্কুলে খণ্ডকালীন চাকরি করতাম। বিধায় অনেক পরিবারেরই হাঁড়ির খবর আমি জানি। যখন যা পারতাম, আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করতাম। কখনো না বলিনি। কিংবা কোনো কারণে কেউ নিজের অপরাগতা প্রকাশ করেছে, সেটাও আমি নিজ পকেট থেকে পূরণ করে দিয়েছি। আমার অনেক সহকর্মী সেটা ভালো জানেন। বিশেষ করে আমাদের পিওন (ইউসুফ ভাই) ভালো করেই তা জানেন। তিনি সবই দেখতেন। ওই যে বল আছে আমার। মাথার উপর ছাদ, আমার বাবা।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই একটি খেটে খাওয়া, দিনমজুর পরিবারকে ফোন দেই। জানতে চাই, তারা ত্রাণ পেয়েছে কি-না? খুবই অবাক হলাম, বললো ‘না’! তবে কী জানেন, যখন জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেমন আছিস?’ খুব অকপটে বলল, ‘ভালো আছি।’ বললাম, ‘খাবার আছে ঘরে?’ বলল, ‘আছে’। কিন্তু আমি জানি, এটি মিথ্যা কথা। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে মনে মনে ভাবলাম, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের সম্বল সম্মান।

ক’টা বছর বাঁচবো জানি না। কখন মৃত্যু এসে দেখা দেয়, তা-ও জানি না! কিন্তু গতরাতে মনে হলো, আমি খেলাম, আমার প্রতিবেশী খেলো না, তবে তো খাবার হারাম হবে। এই খাবার খেয়ে হয়তো বেঁচে থাকবো, কিন্তু তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারবো না!

কিছু লোক দিনমজুর আছেন, কিন্তু কখনো মাথা নত করেন না। কিছু লোক শ্রমিক আছেন, কখনো শির নত করেন না-তারাই মানুষ। দেশের প্রধানমন্ত্রী ঠিকই সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন, কিন্তু ওই যে তালিকা করতে দিচ্ছেন যাদের, তাদের কাছে ঘাপলা। নয়তো এ মহাদুর্যোগে চাল চোর, ডাল চোর দেখতে হতো না!

আসুন সবাই মিলে বাঁচি। শুধু স্বার্থপরের মত নিজে বাঁচার কথা চিন্তা করলেই চলবে না। ফটোসেশন না করে, গোপনে ত্রাণ ‘উপহার’ হিসাবে পৌঁছে দিন তাদের কাছে। যারা মুখ ফুটে বলতেও পারছে না। আবার নিজে মহান হতে গিয়ে অন্যেকে অপমান করাও ঠিক হবে না। কারণ জ্ঞানী হওয়া ভালো, জ্ঞানপাপী হওয়া ভালো নয়।

বড় বড় কথা না বলে, আপনার আশেপাশের মানুষগুলোর খবর নিন। মনে রাখবেন, আপনি মরে গেলে এ অর্থ-সম্পদ, টাকা-পয়সা কোনো কাজে আসবে না। তাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, গোপনে মানুষের মাঝে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।