হোম কোয়ারেন্টাইনে কারা থাকবেন?

ডা. হিমেল ঘোষ
ডা. হিমেল ঘোষ ডা. হিমেল ঘোষ , চিকিৎসক
প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২০

করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিকেও কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধির (আইএইচআর-২০০৫) আর্টিকেল ৩২ অনুসারে, তাদের ১৪ দিন স্বেচ্ছা বা হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করার জন্য কিছু ব্যবস্থা বা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আসুন নির্দেশনাগুলো সম্পর্কে জেনে নেই-

বাড়ির সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন: আলো-বাতাসের সুব্যবস্থা সম্পন্ন আলাদা ঘরে থাকুন। অন্য সদস্যদের থেকে আলাদাভাবে থাকুন। তা সম্ভব না হলে, অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকুন। অবশ্যই ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার করুন। যদি সম্ভব হয় তাহলে আলাদা গোসলখানা এবং টয়লেট ব্যবহার করুন। সম্ভব না হলে, অন্যদের সাথে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমান। ওই স্থানগুলোর জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করুন। বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। আপনার সাথে কোনো পশু-পাখি রাখবেন না।

মাস্ক ব্যবহার করুন: বাড়ির অন্য সদস্যদের সাথে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে ১ মিটারের মধ্যে আসার সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক পরে থাকাকালীন এটি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকুন। মাস্ক ব্যবহারের সময় প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক ব্যবহার শেষে ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।

corona-cover

হাত ধোয়া: সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে ফেলবেন। বিশেষ করে যদি হাত দেখতে নোংরা লাগে সাবান-পানি ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না। সাবান-পানি ব্যবহারের পর টিস্যু দিয়ে হাত শুকনো করে ফেলুন। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালে বা গামছা ব্যবহার করুন এবং ভিজে গেলে বদলে ফেলুন।

মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিন: হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু পেপার বা মেডিকেল মাস্ক বা কাপড়ের মাস্ক বা বাহুর ভাঁজে মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন এবং উপরের নিয়মানুযায়ী হাত পরিষ্কার করুন। টিস্যু পেপার ও মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলুন। ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। আপনার খাওয়ার বাসনপত্র, যেমন-থালা, গ্লাস, কাপ ইত্যাদি এবং তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। এ সব জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।

কখন কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্তমতে একজন থেকে অন্যজনের কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪ দিন।

কোয়ারেন্টাইনে যা করতে পারেন: করোনা সম্পর্কে জানতে পারেন। আইডিসিআর, ডিজিএইচএস, এমওএইচএফডব্লিউ’র ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য পেতে পারেন। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে ফোন, মোবাইল, ইন্টারনেটের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন। শিশুকে তার জন্য প্রযোজ্যভাবে বোঝান। তাদের পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী দিন এবং খেলনাগুলো খেলার পরে জীবাণুমুক্ত করুন। আপনার দৈনন্দিন রুটিন, যেমন- খাওয়া, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি মেনে চলুন। সম্ভব হলে বাসা থেকে অনলাইনে অফিসের কাজ করতে থাকুন। বইপড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা অথবা উপর্যুক্ত নিয়মগুলোর সাথে পরিপন্থী নয় এমন যেকোনো বিনোদনমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন বা ব্যস্ত রাখুন।

corona-cover

পরিবারের সদস্যদের জন্য নির্দেশাবলী: বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং যার দীর্ঘমেয়াদী রোগসমূহ, যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, অ্যাজমা প্রভৃতি নেই, এমন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন। তিনি ওই ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন, অবস্থান বদল করবেন না। কোয়ারেন্টাইনে আছেন এমন ব্যক্তির সাথে কোনো অতিথিকে দেখা করতে দিবেন না।

পরিচর্যাকারী নিম্নলিখিত যেকোনো কাজ করার পর প্রতিবার দুই হাত পরিষ্কার করবেন-
১. কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে
২. খাবার তৈরির আগে ও পরে
৩. খাবার আগে
৪. টয়লেট ব্যবহারের পরে
৫. গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে
৬. যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হয়
৭. খালি হাতে ওই ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি অথবা অন্য আবর্জনা ওই রুমে রাখা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে রাখুন। এ সব আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন।

ঘরের মেঝে, আসবাবপত্রের সব পৃষ্ঠতল, টয়লেট ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করুন। পরিষ্কারের জন্য ১ লিটার পানির মধ্যে ২০ গ্রাম (২ টেবিল চামচ) ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করুন ও ওই দ্রবণ দিয়ে ওই সব স্থান ভালোভাবে মুছে ফেলুন। তৈরি করা দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহৃত কাপড় গুঁড়া সাবান বা কাপড় কাচা সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে বলুন এবং পরিষ্কারের পর ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলুন।

নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখুন। মল-মূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাঁকাবেন না এবং নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে তা খেয়াল করুন।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির জন্য নির্দেশনা: যদি কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি জ্বর, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা বা শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি)। তবে দ্রুত আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে (০১৫৫০০৬৪৯০১-৫, ০১৪০১১৮৪৫৫১, ০১৪০১১৮৪৫৫৪, ০১৪০১১৮৪৫৫৫, ০১৪০১১৮৪৫৫৬, ০১৪০১১৮৪৫৫৯, ০১৪০১১৮৪৫৬০, ০১৪০১১৮৪৫৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৬৮, ০১৯৩৭-১১০০১১, ০১৯৩৭-০০০০১১, ০১৯২৭-৭১১৭৮৪, ০১৯২৭-৭১১৭৮৫) অবশ্যই যোগাযোগ করুন এবং পরবর্তী করণীয় জেনে নিন।

মনে রাখবেন, কোনো ব্যক্তির ওপর কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা অমান্য করা এবং তথ্য গোপন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এতে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর আওতায় কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।