জীবনে সফল হতে এই ১২টি কাজ করুন
আদর্শ জীবন ধারণ অসম্ভব নয়। যে যেভাবে চান সেভাবেই জীবন ধারণ করতে পারেন। আপনি যেভাবে জীবন ধারণ করছেন তা আপনি পছন্দ করেন বা না-ই করেন, রাস্তা কিন্তু আপনিই পছন্দ করেছেন। হয়তো আপনার আদর্শ জীবন ধারণের উপায়গুলো সম্পর্কে জানা ছিল না। বর্তমান জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ। চলুন জেনে নেই আদর্শ জীবনযাপনের ১২টি উপায় বা পদ্ধতি।
১. আদর্শ জীবনযাপন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন: শুরু করার আগে নিজেকে দুটি প্রশ্ন করুন, প্রথমটি ‘আমি আমার জীবনকে কী রকম দেখতে চাই?’ আরেকটি ‘সে জীবনে আমি কার মতো হতে চাই?’ প্রশ্ন দু’টির উত্তর যতটুকু সম্ভব সততা এবং ভালোভাবে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ উত্তরগুলোর মাধ্যমেই আপনি জানতে পারবেন জীবনে কী চান এবং কী হতে চান? তবে এটা মাথায় রাখবেন, আপনি যে জীবন ধারণের কথা চিন্তা করছেন, তার জন্য আপনার বর্তমান ব্যক্তিত্ব পরিবর্তিত হয়ে নতুন একটি ব্যক্তিত্ব তৈরি হবে। এটি বলার কারণ, অনেকেই পরিবর্তন মেনে নিতে পারেন না। তাই ভালোভাবে ভেবে নেবেন নতুন ব্যক্তিত্বের জন্য আপনার কী কী যোগ্যতা থাকা উচিত।
২. অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলো বাদ দিন: এ কাজটি না করলে সামনে এগোতে পারবেন না। কারণ আপনার বর্তমান জীবনে এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার আছে, যা আপনাকে সামনে এগোতে বাধা দিচ্ছে। হতে পারে সেটা কোন মানুষ, চিন্তা, অভ্যাস কিংবা ঘটনা। আপনার আদর্শ জীবনে কী থাকবে আর থাকবে না তার সিদ্ধান্ত আপনি নেবেন।
৩. নিজের সেরাটা খুঁজে বের করুন: যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোনো অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার জীবন থেকে বাদ দেবেন; তখন আরেকটি ছোট কাজ করতে হবে, যা আপনার ব্যক্তিত্বের উন্নতি ঘটাবে। খুঁজে বের করতে হবে আপনি কোন কাজে সেরা? তার জন্য আপনাকে বিভিন্ন কাজ করে যেতে হবে। হয়তো ব্যর্থ হবেন অনেকবার। কিন্তু ব্যর্থ না হলে জানতে পারবেন না কোথায় সেরা। পরীক্ষা করতে থাকুন খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে ঘুম, কোন কিছু বাদ দেবেন না। দিনের কোন সময়ে সবচেয়ে বেশি কার্যদীপ্ত থাকেন, তা খুঁজে বের করুন।
৪. ভালো কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন: দৈনন্দিন কাজে কিছু ভালো অভ্যাস থাকা জরুরি। যেমন খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা, প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করা, সুস্বাদু খাবার খাওয়া এবং মেডিটেশন খুব ভালো অভ্যাস। এসব অভ্যাস গড়লে প্রতিদিন চাঙ্গা থাকবেন। মন থাকবে প্রাণবন্ত। কাজেও ভালো মনোযোগ থাকবে। আরেকটি জরুরি অভ্যাস করতে পারেন, তা হচ্ছে- পরের দিনের সূচি আগের রাতেই তৈরি করে রাখা। তাই দেরি না করে শুরু করে দিন।
৫. খুঁজে বের করুন আপনার প্যাশন: আপনার প্যাশন আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। হতে পারে সেটা বাগান করা বা কোনো পোষা প্রাণিকে আদর করা, হতে পারে বন্ধুদের সাথে আড্ডা। প্যাশন সেটাই যা করতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন। কথা হলো, আপনি শুধু আপনার প্যাশন খুঁজে বের করবেন না, তা জীবনের অংশে পরিণত করবেন। দেখবেন আপনার জীবন আগের চেয়েও ভালো হয়ে যাবে।
৬. প্যাশনকে কাজে পরিণত করুন: যদিও খুব কঠিন কাজ। তবে বাস্তবতা হচ্ছে- আমরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ ও কষ্টে থাকি কর্মপরিবেশ ও কাজ নিয়ে। কারণ যা করছেন, সেটা আপনার প্যাশন নয়। আপনার প্যাশন আপনার কাজ হলে তা ভালোবাসা ও নিষ্ঠা দিয়ে করবেন। কাজ নিয়ে হতাশায় ভুগবেন না। লেখালেখি যদি আপনার প্যাশন হয়, তাহলে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু লিখে ফেলুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করুন। যদি ঘুরতে ভালোবাসেন, তাহলে কাজের ফাঁকে ঘুরে আসুন। কিংবা বড় কোন ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি নিয়ে ঘুরতে পারেন দেশ-বিদেশ।
৭. কাজের সময় নির্ধারণ করে রাখুন: সফল জীবন পেতে অবশ্যই কাজের সময় নির্ধারণ করে রাখতে হবে। যদিও আমাদের দেশে কাজের সময় বলতে গেলে নির্ধারিত। তবুও দেখতে হবে আপনি সপ্তাহে কতটুকু কাজ করতে পারেন। হতে পারে সেটা দিনে ২ ঘণ্টা কিংবা ৪ ঘণ্টা। অবশ্যই তা হিসাব করে নেবেন।
৮. ভ্রমণ করুন: কম্পিউটারকে যেমন রিফ্রেস করে চাঙ্গা করা যায়, তেমনই একটু ভ্রমণ আপনার জীবনকে চাঙ্গা করে তোলে। বছরে অন্তত একটি ভ্রমণ অবশ্যই করবেন। এতে জীবনের একঘেয়েমি কেটে যাবে। আপনার জীবন যাতে এক জায়গায় থেমে না যায়, সে জন্যই ভ্রমণ করবেন।
৯. শখ থাকা ভালো: শখ যে কোন কিছুরই হতে পারে। টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখা, বই পড়া, গাছ লাগানো, ফুলের বাগান করা, ভ্রমণ করা কিংবা কোন সুস্বাদু খাবার খাওয়াও শখ হতে পারে। জীবনে শখ থাকা ভালো।
১০. নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন: মনে রাখবেন, প্রতিটি দিন একটি নতুন দিন। তাই নতুন কিছু শেখার জন্য সবসময় নিজেকে প্রস্তুত রাখবেন। অহংকার ও দাম্ভিকতায় নিজেকে ভাসিয়ে দেবেন না। আপনি জানেন না এমন অনেক কিছুই আছে। নতুন কিছু জানার ও শেখার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকবেন।
১১. নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন: আপনি যে কাজগুলো করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, সেগুলো করার চেষ্টা করবেন মাঝে মাঝে। অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলা, নতুন কোনো খেলা, নাচানাচি এরকম অনেক কিছু। এতে আপনার ওই বিষয়গুলো সম্পর্কে নতুন নতুন ধারণা হবে।
১২. দান করুন ও কৃতজ্ঞ থাকুন: দান করলে মন পবিত্র হয়। দান বলতে শুধু টাকা-পয়সা, জামা-কাপড় এমন কিন্তু নয়। আপনার জ্ঞান দান করতে পারেন মানুষকে। আবার আমাদের কাছে এমন অনেক বস্তু থাকে, যা আমরা ব্যবহার করি না। সেগুলো দান করে দিতে পারি। দানের পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কার্পণ্য করবেন না। সাহায্যকারীকে মন খুলে ধন্যবাদ দিন। আপনার জীবনে যা আছে, তা হয়তো অন্য অনেকের কাছে নেই। সে জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন।
একটি সফল জীবন গড়ে তুলতে হয়তো আপনার একটু সময় লাগবে। কিন্তু তা অসম্ভব নয়। বাস্তবে যে কেউ তার জীবনকে সফল হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। শুধু লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে।
এসইউ/এএ/জেআইএম