সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করেও তারা বৃদ্ধাশ্রমে

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০১ পিএম, ১২ মে ২০১৯

দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ, কষ্টের তীব্রতা সহ্য করে যে মানুষটি সন্তানের জন্ম দেন, তিনিই মা। বাবাও যে কোন ত্যাগ স্বীকার করেন না, এমন নয়! জীবনের সবটুকু দিয়ে সন্তানকে মানুষ করেন। কিন্তু সেই সন্তানরা কি বাবা-মাকে মনে রাখে? এমন প্রশ্নই হয়তো আপনার-আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন রিফাত কান্তি সেন-

সন্তানকে শিক্ষিত করতে গিয়ে জীবনের সবটুকু অর্জন বিলিয়ে দিয়ে ঘরের বোঝা হতে হয়! ইতোপূর্বে আমরা এমন অনেক ঘটনারই সাক্ষী হয়েছি। সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করে বিনিময়ে অনেকের ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। অনেকে তো বৃদ্ধাশ্রমে থেকে বেঁচে যান, আর কেউ কেউ হয়তো নীরবে সহ্য করে যান অসহ্য যন্ত্রণা। তেমনই কিছু মানুষের গল্প তুলে ধরলাম।

রহমান সাহেব (ছদ্মনাম) সরকারি চাকরি করতেন। প্রচুর টাকা কামিয়েছেন জীবনে। অবসরের আগেই ধার-দেনার বোঝা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে বিদেশে রেখে পড়িয়েছেন। ছেলে এখন প্রচুর অর্থের মালিক, শুধু মানুষ হতে পারেনি। এরও একটি যৌক্তিক কারণ রয়েছে। রহমান সাহেব সন্তানকে শুধু লেখাপড়া শিখিয়েছেন, সামাজিকতা শেখাননি। রহমান সাহেবের ছেলে এখন বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভিনদেশে বসবাস করেন। খবর নেয় না তার। তাই রহমান সাহেব এখন থাকেন প্রবীণ নিবাসে।

> আরও পড়ুন- ‘স্বপ্ন পূরণে’র রাতের অপেক্ষায় ফাতেমারা

হুমায়ুন কবির (ছদ্মনাম) বিশাল অর্থ-সম্পদের মালিক ছিলেন। মৃত্যুর আগে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন স্ত্রীর নামে। ছেলে-মেয়ে গোটা দশেক। তার মৃত্যুর আগে কাউকেই তিনি কোন অংশীদার করে যেতে পারেননি। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হয়েছে। বড় চাকরিও করে। বিয়ে করেছে অনেকেই। এখন হুমায়ুন সাহেবের সন্তানরা সমাজে উচ্চবিত্ত। হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী এখন সন্তানদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সন্তানদের সুখের জন্য হুমায়ুন সাহেবের স্ত্রী সব সম্পত্তি বিলিয়ে দিয়েছেন। কিছু বিক্রি করেছেন, কিছু দানও করেছেন। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব হুমায়ুনপত্নী! এখন ছেলেমেয়েদের অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছেন। কাঁদছেন নীরবে।

old-in.jpg

সুফিয়া বেগমের (ছদ্মনাম) গল্পটাও প্রায় একই রকম। বয়সের ভারে তিনি এখন অর্ধপাগল! বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার আচরণে শিশুসুলভ ভঙ্গিমা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাঁর এ আচরণে সন্তানরা খুশি নন। চক্রান্তে ব্যস্ত পরিবারের সবাই। যেখানে সুফিয়া বেগমকে নিয়ে টানাটানি করার কথা ছিল যে, কে তার ভরণ-পোষণ দেবে! কিন্তু ঘটনা উল্টো। এখন যেন বোঝা হয়ে আছেন তিনি। কারণ তাঁর কোন সম্পত্তিই অবশিষ্ট নেই।

রহিমা বেগম (ছদ্মনাম), নয় সন্তানের জননী। সন্তানরা অনেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত। যদিও মধ্যবিত্তের তকমা এখনো লেগে আছে পরিবারটির গায়ে। রহিমা বেগমের কষ্টের অন্ত নেই। একসময় যে মানুষটির সম্পত্তি ছিল কাড়ি কাড়ি, এখন তিনি থাকার জন্য কয়েক ফুট জায়গা মেলাতে শুনতে হচ্ছে অকথ্য ভাষা। সন্তানদের কটুকথা জুটেছে তার কপালে। মায়ের বিরুদ্ধে যেতে ফুসলে দিচ্ছে পুত্রবধূরা। নিরুপায় রহিমা বেগম এখন শুধু তাকিয়েই থাকেন। ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন বলার।

> আরও পড়ুন- দুঃসময়ে পাশে থেকে সান্ত্বনা দেন মা

গল্পগুলো আসলে এমনই। কারণ বৃদ্ধ বয়সে তাদের কদর কমতে শুরু করে। সবাই এখন তাদের হেলাফেলা করছে। চলছে তাদের নিয়ে কঠিন রাজনীতি। সন্তানরা জড়িয়ে পড়ছেন ঝগড়া-বিবাদে। কেউই স্বাভাবিক দৃষ্টিতে নিতে পারছেন না বাবা-মাকে। অথচ সন্তানকে তারা মানুষ করতে গিয়ে একটি বারের জন্যও আলাদা চোখে দেখেননি! সেই সন্তানরা এখন তাদের ঘরের বোঝা মনে করছেন।

সেই শিশু বয়সে যখন কান্নায়, চিৎকারে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করতো সন্তান; তখন মা কোন দিন অভিযোগ করেননি। আজ মায়ের বিরুদ্ধে হাজারটা অভিযোগ। বাবা-মাদের নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে। তারা এখন অনেকটাই শিশুসুলভ আচরণ করছেন। বাস্তবতা হচ্ছে পুত্রবধূরা এখনো তাদের বাবা-মা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারেননি। সে কারণে প্রতিনিয়ত তাকে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে।

পৃথিবীর সব বাবা-মা সুখী হোন। আর কোন বৃদ্ধাশ্রম নয়। বাবা-মা থাকুন সন্তানের অন্তরে।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।