মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে গ্লাস টাওয়ার

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৬:১৩ পিএম, ২৫ মার্চ ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেলে একটি গ্লাস টাওয়ার আমাদের চোখে পড়ে। অনেকের কাছে এটি কেবল দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা মনে হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। দেখতে গ্লাস টাওয়ার হলেও এটি মূলত ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে নির্মিত হয়েছে এই স্মৃতিস্তম্ভ।

অবস্থান: ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে নির্মাণ করা হয়েছে এ স্তম্ভ। উদ্যানের উত্তর পাশে স্থাপিত শিখা চিরন্তন বরাবর দক্ষিণ দিকে এটির অবস্থান। ভূমি থেকে কিছুটা উপরভাগে নির্মিত একটি প্রশস্ত চৌকো কংক্রিটের চাতালের দক্ষিণ পাশে এর অবস্থান।

স্বাধীনতা জাদুঘর: এ চাতালের পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি কৃত্রিম জলাধার। পূর্ব পাশে রয়েছে টেরাকোটায় আচ্ছাদিত একটি অনতিউচ্চ দেয়াল। যার পেছনেই ভূগর্ভস্থ স্বাধীনতা জাদুঘরে যাওয়ার সিঁড়ি। সন্ধ্যায় কাঁচনির্মিত স্তম্ভটি আলোকস্তম্ভে পরিণত হয়। এর থেকে বিচ্ছুরিত শক্তিশালী বৈদ্যুতিক আলোকরশ্মি চারপাশের আকাশকে আলোময় করে তোলে।

glass-in2

> আরও পড়ুন- ৭ মার্চের ভাষণ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

স্থপতি: স্বাধীনতা স্তম্ভের নকশা করেছেন আরবানা নামীয় স্থাপত্য সংস্থার দুই স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ও মেরিনা তাবাসসুম।

নির্মাণকাল: ১৯৯৮ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্বাধীনতা স্তম্ভের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালে এর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়। সরকারের গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে এটি নির্মিত হয়।

নির্মাণশৈলী: এটি মূলত একটি গ্লাস টাওয়ার। টাওয়ারটির কাঠামো ইস্পাত দিয়ে তৈরি। এর উপরিভাগে রয়েছে স্বচ্ছ কাচ। এতে সূর্যের আলোর প্রতিসরণ ও প্রতিফলন হয়। রাতে বৈদ্যুতিক আলোর মাধ্যমে স্তম্ভটি আলোকিত হয়। টাওয়ারটির উচ্চতা ১৫০ ফুট, প্রস্থ ১৬ ফুট।

glass-in2

> আরও পড়ুন- বঙ্গবন্ধুর সাহিত্যকর্ম : ভাষণ থেকে রোজনামচা

নির্মাণের কারণ: ১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে। বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাসের সঙ্গে ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যোগসূত্র ধারাবাহিক। সেসব ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব: ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এ উদ্যানেই যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এছাড়া পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু এখানেই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন। একই বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এখানে ভাষণ দিয়েছিলেন।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।