অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে চাইলে
বর্তমানে অগ্নিকাণ্ডের দুঃসংবাদটি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রতি বছর মানুষের কিছু ভুলের জন্য পুড়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। অসংখ্য মানুষ তাদের প্রাণ হারাচ্ছে। তাই অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচলে চাইলে আমাদের সচেতন হতে হবে। সেসব বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মরিয়ম আক্তার—
আগুনকে বলা হয় সর্বভূক। কারণ অগ্নিকাণ্ডে ছাই হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। তিল তিল করে গড়ে তোলা মূল্যবান জিনিসপত্র। শুধু তাই নয়, ঘটে প্রাণহানী। যার জলজ্ব্যান্ত প্রমাণ পুরান ঢাকার চকবাজারে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা বলা বাহুল্য, তার চেয়েও বেশি মর্মাহত করেছে স্বজনহারাদের আর্তনাদ।
সাধারণ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলেই এড়ানো সম্ভব এসব ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আগুন সম্পর্কে মানুষকে তিনটি বিষয় সবসময় মনে রাখতে হবে। যথা—
১. আগুন লাগার কারণ
২. আগুন যেন না লাগে সে সম্পর্কে সতর্ক থাকার নিয়ম-কানুন
৩. কোনোভাবে যদি আগুন লেগেই যায়, তাহলে এরপর করণীয়।
> আরও পড়ুন- বিদ্যুৎ ছাড়াই চলবে ফ্রিজ
আগুন লাগার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। অনেক সময়েই দেখা যায়, মানুষের ছোট একটু ভুলের কারণে ঘটে যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। তাই আগুন লাগার কারণগুলো মানুষের কম-বেশি জেনে রাখা উচিত। যেমন—
১. বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত শেষ অংশ যেখানে সেখানে অসাবধানভাবে ফেলা
২. রান্নার পর গ্যাসের চুলা বন্ধ না করা
৩. ত্রুটিপূর্ণ বা ছিদ্র থাকা সিলিন্ডার ব্যবহার
৪. উত্তপ্ত ছাই শুষ্ক জিনিসে লাগা
৫. চুলা জ্বালিয়ে জামা-কাপড় শুকাতে দেওয়া
৬. অনিরাপদ বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা
৭. বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলা করা।
ছোট ছোট এমন হাজারও কারণ রয়েছে, যার জন্য ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। তাই সামান্য ভুলের কারণে আগুন যেন না লাগে; সে জন্য আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যে কারণে রান্না শেষ হলেই ভালোভাবে চুলা বন্ধ করতে হবে। জ্বলন্ত চুলার উপর কখনোই জামা-কাপড় শুকাতে দেওয়া যাবে না। ধূমপান করে কখনোই জ্বলন্ত শেষ অংশ যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না। বাড়িতে ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ব্যবহার করা যাবে না। বাচ্চাদের আগুন থেকে দূরে রাখতে হবে। যাতে তারা আগুন নিয়ে খেলা করতে না পারে।
সতর্ক থাকার পরেও দুর্ঘটনাবশত যদি আগুন লেগেই যায়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জরুরি বিভাগে টেলিফোন করতে হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে। বাংলাদেশ প্রায় দেড় কোটির উপরে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রায় অর্ধেক মানুষই অসচেতন।
> আরও পড়ুন- পেটের দায়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন রতন
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাসান মোহাম্মদ মোস্তফা আফরোজ বলেন, ‘পাঁচ বছর পর পর সিলিন্ডার পরীক্ষা করা উচিত। সিলিন্ডারের গায়ে পরীক্ষা করার তারিখ খোদাই করে লিখে রাখা উচিত।’ কিন্তু এ ধরনের কোন তারিখ সিলিন্ডারে থাকে না। নির্দিষ্ট সময় পরপর সিলিন্ডার পরীক্ষা না করলে ঝুঁকি থেকে যায়। তাছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকায় ৪০-৪৫ বছরেরও বেশি পুরনো গ্যাস বিতরণ লাইন রয়েছে। যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক।
এসব বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে ঝুঁকি এড়ানোর জন্য আইনের কঠিন প্রয়োগ করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ, সতর্কতা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে প্রত্যেক ঘরে, কর্মস্থলে, প্রতিষ্ঠানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তবেই জনসাধারণ অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে সক্ষম হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর।
এসইউ/এমকেএইচ