তানিয়ার সেবায় বাঘে-বিড়ালে বন্ধুত্ব

রিপন দে
রিপন দে রিপন দে মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ১২:৩৭ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

বন বিড়াল এবং মেছো বাঘ বনে একে অপরের শত্রু। কখনো কেউ কারো মুখোমুখি হয় না। যদি হয়েও যায়, তবে দু’জন দু’দিকে চলে যায়। কোন শিকারকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি হলে তীব্র লড়াই নিশ্চিত। খাবারের বেলায় কেউ কাউকে একবিন্দু ছাড় দিতে নারাজ। বনের সেই বন বিড়াল এবং মেছো বাঘ লোকালয়ে তানিয়া খানের মধ্যস্ততায় এখন ভালো বন্ধু। একসঙ্গেই খেলা করে, ঘুমায়, খাবার ভাগ করে খায়।

বন্যপ্রাণি সেবাকেন্দ্রের পরিচালক তানিয়া খান বন্যপ্রাণির জন্য নিবেদিত প্রাণ। মৌলভীবাজারসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলার বন বিভাগের কাছে আহত, অসুস্থ বা মাতৃহীন বন্যপ্রাণির খবর এলে তা উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় তানিয়া খানের বাসায়। তিনি সেবা দিয়ে সুস্থ করে তা বনে অবমুক্ত করে দেন। সারাবছর নানা জাত-প্রজাতির অসুস্থ এবং মাতৃহীন বন্যপ্রাণির দেখা মেলে মৌলভীবাজার শহরতলির কালেঙ্গায় তানিয়া খানের বাসায়। যে কেউ প্রথম গেলে ভাববেন, কোন মিনি চিড়িয়াখানা বা পশু হাসপাতাল।

tania-in-(3).jpg

এখানে সম্প্রতি যোগ হয়েছে একটি মেছো বাঘ। গত ১ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার সরকার বাজারে একটি দোকনে ঢুকে পড়ে ১৮-২০ দিন বয়সী মেছো বাঘটি। এলাকাবাসী এটিকে আটক করে বন বিভাগকে খবর দেয়। বন বিভাগ বাচ্চাটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। কিন্তু বনে অবমুক্ত করার বয়স না হওয়ায় বাচ্চাটিকে দেওয়া হয় তানিয়া খানের বাসায়।

> আরও পড়ুন- দিনের পর দিন সাপের ছোবল খেয়েও বেঁচে আছেন কিভাবে?

অন্যদিকে এর আগে গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কমলগঞ্জের একটি গ্রাম থেকে স্থানীয়রা ৪টি বন বিড়ালের বাচ্চাকে উদ্ধার করে। খুব অসুস্থ ৪টি বন বিড়ালকে বাঁচাতে তারা নিয়ে আসেন তানিয়া খানের কাছে। গুরুতর অসুস্থ ২টি বন বিড়াল মারা যায়। জীবিত দু’টি বন বিড়াল সুস্থ হয়ে এখন স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে তানিয়া খানের ভালোবাসা আর সেবা-শুশ্রুষায়।

tania-in-(3).jpg

বন বিড়াল দু’টির সাথে ১ জানুয়ারি থেকে যুক্ত হয়েছে মেছো বাঘটি। মেছো বাঘটি প্রথমে নিঃসঙ্গ থাকলেও দিনে দিনে বন বিড়াল দু’টিকে আপন করে নিয়েছে। বনের দুই শত্রু তানিয়া খানের ভালোবাসা পেয়ে এখন ভালো বন্ধু। তানিয়া খানের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বিছানার উপর বাঘ আর বিড়াল একসঙ্গেই খুনসুটি করছে। কখনো লাফাচ্ছে, কখনো একে অপরকে আঁচড় দিচ্ছে। খাবার হিসেবে এদের মাছ এবং মুরগির মাংস দেওয়া হচ্ছে।

বন্যপ্রাণি সেবক ও প্রাণি গবেষক তানিয়া খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এদের বয়স কম, তাই এখনো নিজেদের পরিচয় জানে না। বড় হওয়ার সাথে সাথে আচরণগত বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠবে। তবে একসাথে খাওয়াতে বা রাখতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। একসাথে বড় হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বড় হলে কতটুকু থাকবে তা বলা যাচ্ছে না।’

tania-in-(3).jpg

> আরও পড়ুন- বাগানে হঠাৎ দু’মুখো সাপের দেখা!

তিনি বলেন, ‘নিজেদের মত বাঁচার সক্ষমতা এলে এদের অবমুক্ত করা হবে। তখন নিশ্চয়ই বুনো পরিবেশের সব বৈশিষ্ট্য তারা আয়ত্ত করে নেবে নিজেদের বাঁচার স্বার্থে।’

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।