আতঙ্কের নাম সুপারবাগ

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:১১ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৯

সুপারবাগ হচ্ছে এক ধরনে অণুজীব। যেসব ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হলে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর, তাদের সুপারবাগ বলা হয়। এরা একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে বলে এদের মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট বলা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এ সম্পর্কে জানাচ্ছেন সত্যজিৎ পাল-

২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই সঙ্কটজনক হুমকিটি (সুপারবাগ) এখন আর কোনও ভবিষ্যদ্বাণী নয়। এটি এখন বিশ্বের প্রত্যেক স্থানেই ঘটছে। এছাড়া বিশ্বের যে কোন দেশের যে কোন বয়সের যে কোন ব্যক্তিকে আক্রমণ করার ক্ষমতা রয়েছে।

superberg

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ তাদের ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স সম্পর্কে তাদের জরিপে উল্লেখ করে, ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতিসমূহের মধ্যে ৯.৫% সেফিক্সিম, ১৪.৩% অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ৯০% এর বেশি সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং ডক্সিসাইক্লিন, ১০০% মেট্রোনিডাজল অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেসিস্ট্যান্ট।

এদিকে মেডিকেল জার্নাল ওয়েবসাইট ‘পাবমেড’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজধানীতে ইতোমধ্যে কলিস্টিন অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট এশেরিকিয়া কোলাই (ই. কোলাই) সুপারবাগের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আমরা সুপারবাগ ঝুঁকিতে রয়েছি। পাগলা ঘোড়া যে কোন সময় লাগামছাড়া হতে পারে। তাই সুপারবাগ বাংলাদেশে যেন মহামারি আকার ধারণ না করতে পারে সেজন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।

superberg

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকারিয়া মিয়া বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়াসমূহ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত রোগী পূর্ণ মেয়াদে অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে রোগ কমেছে ভেবে পূর্ণ মেয়াদের আগেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করেন। তবে ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিড অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীন বহন করে। পরীক্ষা করে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি এবং স্বরূপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত।’ শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পূর্ণ মেয়াদে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন এই অধ্যাপক।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. শ্যামল কুমার পাল বলেন, ‘দেশে অ্যান্টিবায়োটিক নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। কারা রোগীর ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে পারবেন, কারা কিসের ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় করতে পারবেন। রোগীর সঠিক নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা ইত্যাদি বিশদভাবে নীতিমালায় উল্লেখ থাকবে।’ এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্টের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে অন্য কোন কার্যকর ব্যবস্থা দেখছেন না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

লেখক: ফার্মেসি বিভাগ, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বনানী, ঢাকা।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।