এসপির কল্যাণে স্বামীর ভিটায় আমিরুন

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

আমিরুন্নেসা, আশি বছরের বৃদ্ধা। ধীর পায়ে হেঁটে যখন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এলেন, তখন তাকে ঘিরে তার ৯ মেয়ে দাঁড়িয়ে। তিনি এসেছেন পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএমকে তার বাড়িতে দাওয়াত দিতে। তার ৯ মেয়ে নাকি জেলা পুলিশ পরিবারকে এক বেলা খাওয়াতে চায়! কিন্তু কেন? এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন শাকিলা ইয়াসমিন সূচনা-

এমন মজার কথা শুনে আগ্রহ নিয়ে ঘটনা জানার চেষ্টা করলাম। আমিরুন্নেসার স্বামী আ. মান্নান তালুকদার ২০০৪ সালে মারা যান। বড় মেয়ে খুরশিদার স্বামীই দেখাশোনা করছিলেন প্রয়াত শ্বশুরের সম্পত্তি। সর্বশেষ তিন বোনের বিয়ে দিতে পৈত্রিক সম্পত্তির বেশকিছুটা বিক্রি করতে হয়। তারপর যা বাকি থাকে, সেই ২৬ শতক জমি আর বসতভিটা। স্নেহের বশবর্তী হয়ে বড় মেয়ে খুরশিদা আর সবচেয়ে ছোট মেয়ে হীরাকে হেবামূলে সব সম্পত্তি দিয়ে দেন আমিরুন্নেসা। বৃদ্ধা মায়ের এমন বৈষম্যমূলক আচরণে কষ্ট পেয়ে বাকি সাত মেয়ে মায়ের দেখাশোনায় অবহেলা করছিল। অথচ যে দুই মেয়েকে সব লিখে দিলেন, তারাও গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না মায়ের। স্বামীর সম্পত্তি, গর্ভজাত ৯ সন্তান, সব থেকেও যেন অসহায় আমিরুন্নেসা।

অবস্থা এমন যে, বৃদ্ধা আমিরুন্নেসা দু’দিন এক মেয়ের কাছে থাকেন তো, তারপরেই চলে যেতে হয় আরেক মেয়ের কাছে। নিজের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত নেই তার। এমন অবস্থায়ই তিনি আসেন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক (অপরাধ) ওয়ালিউল্লাহ্ দায়িত্ব নেন ৯ মেয়ে ও মায়ের সমঝোতার। সপ্তাহখানেকের চেষ্টায় সবার সাথে কথা বলে সমাধান হয় সমস্যার। খুরশিদা আর হীরা তাদের সম্পত্তি লিখে দেবে মায়ের নামে। জীবনের শেষ দিনগুলো স্বামীর ভিটায় কাটাবেন আমিরুন্নেসা। তার মৃত্যুর পরে ৯ বোনের মাঝে সমান ভাগ হবে সম্পত্তি।

আমিরুন্নেসা যতটা না খুশি তার স্বামীর ভিটা ফিরে পেয়ে, তারচেয়েও বেশি তার ৯ মেয়ের মনোমালিন্য দূর হওয়ায়। বৃদ্ধা মায়ের কাছে সব সন্তানকে একসাথে দেখার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। আর তাই তিনি তার বাড়িতে দাওয়াত দিচ্ছেন আমাদের। পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম বললেন, আপনারাই বরং আজকের দিনটা ঈদ ভেবে উদযাপন করেন আমাদের সাথে।

এই বৃদ্ধা মায়ের আশীর্বাদের দৃষ্টি, নয় বোনের অভিমানভাঙা ভালোবাসা, একটি পরিবারের এক হয়ে যাওয়ার আনন্দ, এর চেয়ে বেশি কিছু প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!

লেখক: সহকারী পুলিশ সুপার, চাঁদপুর।

এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।