বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ মোনাকো

আবু তালহা
আবু তালহা আবু তালহা , লেখক
প্রকাশিত: ১২:৪৬ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হলো মোনাকো। মোনাকো একটি স্বাধীন দেশ, এ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আমি বলবো, এটি একটি স্বাধীন স্টেট। কারণ মোনাকো স্বাধীন দেশ হিসেবে ১৯৯৩ সালের ২৮ মে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এটি রিপাবলিক অব জেনোয়া থেকে ১২৯৭ সালে ৮ জানুয়ারি স্বাধীনতা লাভ করে।

এটি পশ্চিম ইউরোপের একটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশ। সাংবিধানিক নাম প্রিন্সিপালিটি অব মোনাকো। দাফতরিক ভাষা ফ্রেঞ্চ। আয়তন প্রায় ২.০২০ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ৩৭,৩০৮ এর মতো। তিন দিকে ফ্রান্স আর অন্যদিকে ভূমধ্যসাগর। ইতালির খুব কাছাকাছি। মুদ্রা হলো ইউরো। গড় আয়ু প্রায় ৮৯ বছরের বেশি। মোনাকোতে ১২৫ দেশের মানুষ বসবাস করে। দাফতরিক ভাষা ফ্রেঞ্চ হলেও তারা বিভিন্ন ধরনের ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। স্থানীয়দের মোনগাস্ক ও মোনাকান নামে ডাকা হয়। পতাকা দেখতে হুবহু ইন্দোনেশিয়ার মতো, তবে আয়তনে ভিন্নতা আছে। রাজধানী মন্টে কার্লো, যা ক্যাসিনোর জন্য বিখ্যাত।

এটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ, যার মাথাপিছু আয় প্রায় ১,৬৮,০০০ ডলার। মোনাকো কখনো তাদের অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ করে না। কিন্তু ধারণা করা হয় যে, তাদের বাৎসরিক জিডিপি আয় প্রায় ৫.৭৪৮ বিলিয়ন ডলার। প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন, প্রাইভেট ও সরকারি ব্যাংকিং খাত (ফরেন কোম্পানি রিজার্ভ)। মোনাকোতে বিশ্বের অনেক নামিদামি আন্তর্জাতিক ব্যাংক রয়েছে, যারা তাদের গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষা করে। এখানে প্রতি বছর প্রায় ১.৫ মিলিয়ন পর্যটক আসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুয়ার আসর বসে মন্টে কার্লোতে। এটিই জুয়াড়িদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। মোনাকো সরকার ১৯২৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে মোনাকো গ্রান্ড প্রিক্স (কার রেইস প্রতিযোগিতা) আয়োজন করে থাকে। এটি প্রতি বছরই মে মাসে আয়োজন করা হয়। মোনাকো কখনো তাদের আধিবাসীদের উপর ট্যাক্স আরোপ করে না।

> আরও পড়ুন- যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে

তবে ২০১৬ সালে মোনাকো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ট্যাক্স ট্রান্সপারেন্সি চুক্তি করেছে, যা হয়তো ২০১৮ সাল নাগাদ কার্যকরী হবে। মোনাকো একটি দেশ যেখানে কোনো কৃষি বা গ্রাম নেই। দেশটির পুরো অংশই শহর।

monaco

১৮৬১ সালে ফ্রান্স ও মোনগাস্ক চুক্তির মাধ্যমে মোনাকো ফ্রান্সকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করে কিন্তু শহরটির একক স্বায়ত্বশাসন তাদের হাতেই রয়ে যায়। গ্রিমাল্ডি ফ্যামিলি ১২৯৭ সাল থেকে ১৭৯৩ (৪৯৬) বছর এককভাবে রাজত্ব করেছিল। পরিশেষে ২০০২ সালে আবার ফ্রান্সের সাথে মোনগাস্কের আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় গ্রিমাল্ডি রাজতন্ত্র বিলুপ্তির ব্যাপারে। দেশটির রাজধানী মন্টে কার্লো ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বর্তমান রাজা প্রিন্স আলবার্ট-২ (২০০৫) এবং শহরটির বর্তমান স্টেট মিনিস্টার সার্জ টেলি (ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। ১৯১১ সালে সর্ব প্রথম তারা সংবিধান তৈরি করে, যা ২০০২ সালে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। মোনাকো একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও শাসনতন্ত্র। ২০১১ সালে জুলাই মাসে প্রিন্স আলবার্ট-২ বিয়ে করে শার্লিন উইটস্টোককে। এই প্রিন্স দম্পতি জমজ বাচ্চার অধিকারী হন। তাদের নাম জ্যাক ও গাব্রিলা। মেয়ে গাব্রিলা বড় হলেও পুরুষ উত্তরাধিকার সূত্রে জ্যাক শহরটির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবেন।

ভিসা: মোনাকোর নিজস্ব কোনো ভিসা পদ্ধতি নেই কিন্তু ফ্রান্সের সাথে প্রতিবেশী চুক্তির কারণেই ভিসার ক্ষেত্রে সেনজেন নীতি পালন করে থাকে। যদি আপনার সেনজেন ভিসা থাকে তবে আপনি মোনাকো ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে বাড়তি ডকুমেন্টস হিসাবে আপনাকে লেটার অব ইন্টারেস্ট দিতে হবে অর্থাৎ কেন আপনি মোনাকো যেতে চাচ্ছেন তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। আরও বাড়তি ডকুমেন্টস হিসাবে আপনার কাছে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লেটার চাইতে পারে। ভিসা পাওয়ার পরে প্রথমে আপনাকে ফ্রান্সের নিশ শহরে ‘কটি ডি আজুর এয়ারপোর্টে’ যেতে হবে। আর সেখান থেকেই এয়ারবাসে চলে যাবেন স্বপ্নের রাজ্য মোনাকোতে। আর ভিআইপিদের জন্য রয়েছে হেলিপোর্ট সার্ভিস। ফ্রান্সের নিশ এয়ারপোর্ট আর মোনাকোর হেলপোর্ট হচ্ছে একমাত্র উড়ন্ত যাতায়াত ব্যবস্থা।

monaco--(2)

> আরও পড়ুন- কানাডায় উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে

বসবাস: আপনি খুব সহজেই ৩ মাস থাকতে পারবেন। কিন্তু ৩ মাসের বেশি থাকতে হলে অবশ্যই আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। তবে নরওয়ে, লিয়েসথেন্সটাইন ও আয়ারল্যান্ডের অনেক মানুষ লং টার্ম ভিসা নিয়ে সেখানে বসবাস করেন। আর যারা দীর্ঘমেয়াদী ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন, তাদেরকে রেসিডেন্স কার্ড প্রদান করা হয়। আর এইভাবে প্রথমে ১ বছর এবং পরে ৩ বছর ও পরিশেষে ১০ বছরের রেসিডেন্স কার্ড প্রদান করা হয়, যা নবায়নযোগ্য।

যেহেতু মোনাকো ফ্রান্সের অভিভাবকত্বকে মেনে চলে, তাই ফ্রান্স অ্যাম্বাসিতে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। তবে বাংলাদেশে ফ্রান্সের যে অ্যাম্বাসি আছে, তাতে মোনাকো ভিসার কোন কার্যক্রম নেই। তাই আপনাকে ভারতে অবস্থিত ফ্রান্সের অ্যাম্বাসিতেই মোনাকোর ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ঠিকানা হচ্ছে- ফ্রান্স অ্যাম্বাসি: ২/৫০ ই শান্তিপথ চানক্যাপুরি, নিউ দিল্লি-১১০০২১, ভারত। ফোন: +৯১১১৪৩১৯৬১০০।

মোনাকোতে ভ্রমণের জন্য আপনি মোনাকোর ট্যুরিস্ট প্যাকেজ কিনতে পারেন। তারা আপনাকে ভিসা প্রাপ্তিতে সহায়তা করবে। সরকারি ট্যুরিস্ট ওয়েবসাইট ও এজেন্সির ওয়েবসাইট হচ্ছে- www.visitmonaco.com, www. monacoforagents.com, www.clubdiamantrouge.com

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।