হ্যালোইন! কেমন করে এলো?
অক্টোবর মাসের শেষদিন রাত ১২টা। চাঁদ তখন মধ্য আকাশে। বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ। চাঁদের ওপর থেকে ফালি মেঘের ভেসে যাওয়া এক গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি করেছে। প্রাচীন কেল্টিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী ঠিক ওইদিন রাতেই হয়তো আপনার দরজায় ঠকঠক শব্দ পেলেন। কিন্তু সাহস হচ্ছে না এতো রাতে দরজা খোলার। কে? এই অসময়ে কড়া নাড়ছে আপনার দ্বারে। সাহসে না কুলিয়ে যেনো ভালোই করেছেন। কেননা, কেল্টিকদের বিশ্বাস, এ রাতে সব প্রেতাত্মা আর অতৃপ্ত আত্মারা পৃথিবীতে নেমে আসে। এদিন জীবিত মানুষ আর প্রেতাত্মাদের মাঝে কোনো বিশেষ পার্থক্য থাকে না।
কেল্টিকরা ইন্দো-ইউরোপীয় জাতি। ধারণা করা হয়, লৌহযুগে ও রোমান রাজত্বকালে ইউরোপজুড়ে এদের বসবাস ছিল। যদিও, এ বিষয়ে নৃতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবেত্তারা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন। তবে আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডের অধিবাসীদের কেল্টিক বলে ডাকা হতো। ফসল কাটার পর অক্টোবর মাস থেকেই এ অঞ্চলে অনেক ঠান্ডা পড়তো। আর তারা এ সময়টাকে অশুভ ও খারাপ বলে মনে করতো। অক্টোবর মাসের শেষদিন তারা প্রেতাত্মাদের মতো পোশাক পরে অগ্নোৎসব করতো, আগুনের চারপাশে ঘুরে ঘুরে মন্ত্রপাঠ করতো।
তাদের ধারণা ছিল, এভাবে তারা প্রেতাত্মাদের এড়িয়ে যেতে পারবেন। সে সময় থেকে অর্থাৎ প্রায় দুই-আড়াই হাজার বছর আগে থেকেই হ্যালোইন উদযাদিত হয়ে আসছে। যদিও সময়ের সাথে সাথে তাদের পুরনো সে বিশ্বাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু প্রথা ও সংস্কৃতির কারণে হ্যালোইন তার গুরুত্ব হারায়নি বরং এটা ধীরে ধীরে সারাবিশ্বের হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষদিন অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে হ্যালোইন উৎসব উদযাপিত হয়।
> আরও পড়ুন- এক কেজি চায়ের দাম ২৪ হাজার টাকা!
কেল্টদের বছর শুরু হতো নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে। গ্রীষ্ম ও ফসলের মৌসুম শেষ এবং শীতের শুরু। কেল্টদের বিশ্বাস ছিল, নতুন বছর শুরু হওয়ার আগের রাতে জীবিত ও মৃতের দুনিয়ার ভেদাভেদ লোপ পাওয়ার ফলে মৃত আত্মা ও ভূত-প্রেত পৃথিবীতে স্বজনদের মধ্যে ফিরে আসে। তাই ৩১ অক্টোবর রাতে তারা সাইউন উৎসব পালন করতো। প্রাচীন কেল্টিকদের সেই সাইউন উৎসব থেকেই হ্যালোইনের প্রচলন শুরু হয়।
রক্ষণশীল প্রোটেস্ট্যান্ট বিশ্বাসের কারণে দীর্ঘসময়জুড়ে হ্যালোইন ঔপনিবেশিক নিউ ইংল্যান্ডেই সীমাবদ্ধ ছিল। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আমেরিকায় অনেক নতুন অভিবাসী আসে। এর মধ্যে ‘আইরিশ পোট্যাটো ফেমিন’র কারণে লক্ষাধিক আইরিশও আমেরিকায় অভিবাসী হয়। পরবর্তীতে তারাই আমেরিকাজুড়ে হ্যালোইন জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৩০’র দশকে হ্যালোইন কস্টিউম আসা শুরু করে আর ৫০’এ আসে ‘ট্রিক-অর-ট্রিট’ আর তখন থেকেই পারিবারিকভাবে হ্যালোইন পালনের শুরু। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে অন্যতম একটি ছুটির দিন হ্যালোইন।
হ্যালোইনের দিন শিশু-কিশোররা ‘ট্রিক অর ট্রিট’ প্রথা অনুযায়ী প্রতিবেশীর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ‘ট্রিট’ হিসেবে ক্যান্ডি কিংবা অর্থ নেয়। তারা কুমড়ো দিয়ে জ্যাক-ও’-ল্যান্টার্ন তৈরি করে, ভুতুড়ে বাড়িতে যায় এবং কবরস্থানে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ আরও অনেক কিছু করে। সরাসরি প্রাচ্যের সংস্কৃতি না হলেও বাংলাদেশেও গত কয়েকবছর ধরে হ্যালোইনের অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে আসছে। রাজধানীর শিশু-কিশোরদের মধ্যে বাড়ছে হ্যালোইন নিয়ে জনপ্রিয়তা। যেমন গত ২ নভেম্বর শিশু-কিশোরদের জন্য হ্যালোইন অনুষ্ঠান আয়োজন করে পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ান ঢাকা।
> আরও পড়ুন- চকলেট দিয়ে তৈরি এ কেমন বাড়ি!
এ বিষয়ে কথা হয় হোটেলটির মহাব্যবস্থাপক কনস্ট্যান্টিনোস এস গ্যাভ্রিয়েলের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অন্যান্য খাবারের উৎসব ও সাংস্কৃতিক উদযাপনের মতো এবার আমরা আর্কষণীয় রুপে হ্যালোইন উৎসব আয়োজন করতে পেরে আনন্দিত। বিভিন্ন সময় আমরা প্রাচ্য ও পাশ্চত্যের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করি। এ ধরনের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য থাকে পৃথিবীর দু’প্রান্তের সংস্কৃতির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানো। পাশাপাশি মানুষের মনে বাড়তি আনন্দ দেওয়া। যেনো তারা তাদের ছুটির দিন, অবসরের সময়টা নিজেদের মতো নতুন কিছু করে নতুনভাবে কাটাতে পারেন।’
অনুষ্ঠান ঘুরে মিল পাওয়া গেলো গ্যাভ্রিয়েলের কথার সাথে। লা মেরিডিয়ান ঢাকার হ্যালোইনের অনুষ্ঠানে অদ্ভুত সব বেশে বাবা-মায়েদের সাথে ঘুরতে আসে শিশু-কিশোররা। অংশ নেয় হ্যালোইনের বিচিত্র সব আয়োজনে। সময়টুকুকে করে তোলে উচ্ছ্বল আনন্দের।
এএ/এসইউ/এমএস