৬শ’ টাকা খরচ করলে ১২শ’ টাকা আয়
কী, শিরোনাম দেখেই বিস্মিত হলেন? হ্যাঁ, হওয়ারই কথা! মাছের ঝোল, মুড়ি, শিমের বিচি, চানাচুর, মরিচ, শসা, বিট লবণ, মসলা, জিরার মতো কিছু ঝাল প্রকৃতির খাদ্য উপাদান দিয়ে তিনি ঝালমুড়ির চমৎকার রেসিপি তৈরি করেন।
বলছিলাম চাঁদপুরের হাইমচরের মেঘনা তীরের ভৈরবী বাজারের ভ্রাম্যমাণ ঝালমুড়ি বিক্রেতা মান্না ভাইয়ের কথা! নিজের নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটা কবে যোগ হলো, এর ঠিক হিসেব মেলানো কঠিন তার পক্ষে। এখন সবার প্রিয় মান্না ভাই তিনি! নিজের ভ্রাম্যমাণ এ প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ‘মান্না ভাইয়ের ঝালমুড়ি’।
তিনি জানান, মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। যা এখন ৩৫ বছরে পা রেখেছে। মজার ব্যাপার হলো, ঝালমুড়ির ব্যবসা এতই জমজমাট যে, তিনি ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খান।
ভোরের সূর্যটা যখন পূর্ব আকাশ থেকে উঁকি দেয়, তখন তিনি ঝালমুড়ি তৈরির সামগ্রী নিয়ে হাজির হন মেঘনা
উপকূলে। কখনো ইলিশ ঘাট, কখনো লঞ্চ ঘাট আবার কখনো খেয়া ঘাট। এসব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেই তার ঝালমুড়ি নিয়ে বিচরণ। ৬শ’ টাকা খরচ করে তিনি দিন শেষে আয়ের খাতায় জমা করেন ১২শ’ টাকা।
তবে তার ৩৫ বছরের পথচলা অতোটা সহজ ছিল না। এ ব্যবসা ধরে রাখতে বহু লড়াই করতে হয়েছে। আট বার মেঘনার করাল গ্রাসে ভিটে-মাটি হারিয়েছেন। এটাকে তিনি বলেন, আট লাড়া। তবুও মান্না ভাই দমে যাননি। ধৈর্য হারাননি। যার ফল হিসেবে, এ বয়সেও তিনি সংসারের ভার কাঁধে রাখতে পেরেছেন।
> আরও পড়ুন- ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে মানচিত্র বানালেন শুভঙ্কর
মান্না ভাইয়ের তিন ছেলে। কোনো মেয়ে নেই। সবাই জীবিকার তাগিদে রাজধানীর বুকে লড়াই করছে। বড় ছেলে কবির অটো চালক। এরআগে সেও বাবার মতো ঝালমুড়ি বিক্রি করতো। মেজ ছেলে বাদশা পুরির ব্যবসা করেন। ছোট ছেলে রাজা মিয়া ঝিগাতলায় ফলের ব্যবসা করেন।
মান্না ভাই স্ত্রীকে নিয়ে এখন বেশ সুখেই আছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ আমার ঝালমুড়ির ভীষণ ভক্ত। খুবই
প্রশংসা করে তারা। কারো যদি ঝালমুড়ি খেতে ইচ্ছা হয়, তাহলে বলে দেয়- ওই যে মান্না ভাইয়ের ঝালমুড়ি আনবা। কারণ আমার ঝালমুড়ির ভিন্ন স্বাদ আছে। একটু খেয়ে বিচার করতে পারেন। যে খাইবে ঝালমুড়ি, তার ক্ষিধা হবে। পেট ভইরা ভাত খাইতে পারবো। খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর বোঝা যাবে, মান্না ভাইয়ের ঝালমুড়ির মানে কী?’
মান্না ভাইয়ের কথাগুলোর সঙ্গে পাশ থেকে সায় দিচ্ছেন তার কাস্টমার মমিন উল্লাহ, হাবিব, সোহাগ। তাদের মুখ থেকেও একই কথা শোনা গেল। তারা বলছিলেন, ‘আমরা মান্না ভাইয়ের নিয়মিত কাস্টমার। এখানেই ব্যবসা করি তো। এ জন্য ঝালমুড়ি খেতে মন চাইলে মান্না ভাইয়ের কাছেই হাজির হই। এ ঝালমুড়ি না খাইলে যেন কেমন কেমন লাগে।’
মান্না জানান, উত্তলা হাইমচর থেকে ঝালমুড়ির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ব্যবসার খাতিরে মাওয়া ফেরি ঘাট, লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাটের ঘাট, চাঁদপুর শহরের তিন নদীর মোহনার বড় স্টেশন, চাঁদপুর লঞ্চঘাট, মংলা সমুদ্র বন্দরের মতো স্থানগুলোতে ঘুরেছেন তিনি।
ঝালমুড়িতে ভিন্ন স্বাদের কারণ কী? জানতে চাইলে মান্না ভাই বলেন, ‘আমি ৫০ বা ৬০ টাকা দিয়ে মাছ কিনি। এ মাছ বাড়িতে রান্না করে ঝোল বানাই। আর বিট লবণ, বুট, চানাচুর তো থাকেই। এখানে মসলার গুরুত্ব অনেক। সবগুলো দিয়ে চমৎকার এবং বেশ স্বাদের ঝালমুড়ি বানাইতে পারি।’
> আরও পড়ুন- উপকূলের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন তিনি
কাজ করতে কোনো সমস্যা আছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, আমার কাজ করতে কোনো সমস্যা নাই। কারণ সবাই আমাকে ভালো জানে। সবার সাথে হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করি। সবাইও আমার ঝালমুড়ি খাইতে আসে।’
ভবিষ্যত স্বপ্ন নিয়ে মান্না ভাই বলেন, ‘নদীতে এত ভাঙা না দিলে কয়েক তালা বিল্ডিং করতে পারতাম। এখন একটু জায়গা নিয়ে এখন খুব সুখেই আছি। দিনগুলো ভালো যাচ্ছে। সামনের দিনগুলো এভাবে কাটাতে পারলেই হাজার শুকরিয়া।’
এসইউ/জেআইএম