বাঁশির সুরে চলে অন্ধ সুভাষের সংসার

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৯ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০১৮

হঠাৎ আকাশে-বাতাসে ভেসে আসছে বাঁশির সুর। কখনো ‘ওরে সাম্পানওয়ালা তুই আমারে করলি দিওয়ানা’, কখনো ‘যাও পাখি বলো তারে সে যেন ভোলে না মোরে’, আবার জনপ্রিয় ভারতীয় গান ‘বহুত পেয়ার করকে তোমারি সানাম’- এমন ডজনখানেক গানের সুর কানে আসে। এতে মনে হবে হয়তো দেশবরেণ্য কোন বংশীবাদক বুঝি সুর তুলেছেন। আসলে তেমন কিছুই নয়- দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি সুভাষ বিশ্বাস চাঁদপুর শহরের আনাচে-কানাচে এভাবেই বাঁশিতে সুর তোলেন। তার বাঁশির সুরের জাদুর গল্প শোনাচ্ছেন রিফাত কান্তি সেন-

বাঁশির সুর শুনে দূর থেকে অনেকেই ভাবতে পারেন- হয়তো কোন প্রতিষ্ঠিত বংশীবাদক বুঝি বাঁশিতে সুর তুলেছেন। আবার অনেকে ভাবতে পারেন- ছোট-খাটো কোন কনসার্টে বোধহয় স্পেশ্যালিস্ট কেউ বাঁশিতে সুর তুলেছেন। কিন্তু তেমন কিছুই নয়! জীবিকা নির্বাহের তাগিদে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি সুভাষ বিশ্বাস বাঁশি বাজিয়ে মানুষের মনের তৃপ্তি মিটিয়ে পয়সা নিচ্ছেন। ডজনখানেকের ওপর গানের সুর বাঁশিতে তুলতে সক্ষম তিনি।

প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁশিতে সুর তোলেন সুভাষ। মুহূর্তেই তার বাঁশির সুর শুনতে থমকে যান শহরের পথচারীরা। তার বাঁশির সুরে মুগ্ধ হন হাজারো শ্রোতা। বাঁশির সুর শুনে অনেকেই টাকা-পয়সা দিয়ে যান তাকে। সেই টাকাতে চলে তার টানাটানির সংসার। শহরের কালিবাড়ি, জোরপুসকনির পাড়, লেকের পাড়, কলেজ প্রাঙ্গনসহ শহরের বিভিন্ন স্থানেই তাকে বাঁশি বাজাতে দেখা যায়। বাঁশি বাজিয়ে প্রতিদিন ২-৩শ’ টাকা উপার্জন করেন তিনি।

suvash

প্রতিভাবান এ বংশীবাদক বিখ্যাত কোন সুরকার না হলেও তার সুরের মূর্ছনায় হৃদয়ে প্রেমের শিহরণ জাগায়। তাই তো মাঝে মাঝে তার বাঁশিতে সুর ওঠে, ‘তোমায় হৃদ মাজারে রাখবো ছেড়ে যাবো না’। জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন সুভাষ বিশ্বাসের জন্ম বরিশাল জেলায়। সেখান থেকে মেঘনা পাড়ের শহর চাঁদপুরে পাড়ি জমান। বাবা হরলাল বিশ্বাস। বাঁশি বাজানো শিখেছেন কাকার কাছ থেকে। যা কিনা পরবর্তীতে তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পন্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে তার টানাটানির সংসার। বড় মেয়ে রুমা তার পথচলার সাথী। যে বয়সে বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সেই সংসারের প্রয়োজনে বাবাকে নিয়ে পথে-প্রান্তরে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে ছোট্ট শিশুটিকে। অন্যদিকে বয়সের ভারে দিনদিনই নিস্তেজ হতে চলেছে সুভাষ বিশ্বাসের দম। তাই তো সৃষ্টিকর্তার উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বাঁশিতে সুর তোলেন, ‘মধু হই হই বিষ কাওয়াইলা’।

suvash

কষ্টের এই জীবন যাপন নিয়ে কথা হয় সুভাষ বিশ্বাসের সাথে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অহন আর রতে দেয় না। দম ফুরাইয়া আইয়ে। আপনেরে কইয়া লাভ কী? আমাগো অনুভূতি শুধু লিখেনই। কামের কাম তো কিছুই অয় না।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় চাঁদপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর রজত শুভ্র সরকারের সাথে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এলে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া যদি তার স্ত্রী ছোট-খাটো কোন ব্যবসা করতে চান, প্ল্যানসহ এলে আমরা সে বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে দেখার চেষ্টা করবো।’

সুভাষ বিশ্বাসের বাঁশির সুর শুনুন ভিডিওতে 

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।