অন্য এক সাকিবের গল্প

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:২৩ এএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭

নিশ্চয়ই ভাবছেন এ কোন সাকিব! অনেকেই হয়তো ধরে বসেছেন সাকিব আল হাসান লিখতে গিয়ে ভুল করে সাকিব আহমেদ লেখা হয়েছে। কিন্তু না, আজ সাকিব আল হাসানের গল্প নয়; অন্য এক সাকিবের গল্প। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে একটি টি২০ বিশ্বকাপ এবং একদিনের বিশ্বকাপ খেলা সাকিবের গল্প। লিখেছেন আহনাফ তাহমিদ খান শাহনীল

সাকিব আহমেদের জন্ম রাজশাহীতে। রাজশাহীর পিএইচটিসি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। এরপর সিরাজগঞ্জের এসবি রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই এসএসসি। দু’টো স্কুলই ছিলো আবাসিক। বৃহস্পতিবার স্কুল শেষে আদরের ভাতিজাকে চাচা নিয়ে যেতেন বাসায়। যৌথ পরিবারে সবার বেশ আদরে বেশ সুন্দর কেটে যেতো শুক্রবারের ছুটির দিনটি। শনিবার সকালে আবার স্কুলে দিয়ে যেতেন চাচা।

Shakib

সিরাজগঞ্জে পড়াশোনার সময় ছুটিতে বাসায় এলেই সব ভাই-বোন মিলে আড্ডার আসর জমে উঠতো রাতের আঁধারে বাসার ছাদে। কেমন হতো যদি তারা বাড়ির পাশের জমিতে একটি বিল্ডিং বানাতে পারতেন? কেমন হতো সেই বাড়ির রং, কয়টি ঘর থাকতো, কোথায় থাকতো হারমোনিয়াম! এমন হাজারো ভাবনার আবির্ভাবে কেটে যেতো পুরো রাত। সকাল হতেই শুরু হয়ে যেতো যাত্রার প্রস্তুতি। ছুটি শেষ, গন্তব্য সেই সিরাজগঞ্জ।

আট-দশটি কিশোরের মতোই ছিল সাকিব আহমেদের জীবন। কিন্তু সত্যি কি তা-ই ছিল? পাঁচ বছর বয়সে গাছ থেকে পড়ে, মহিষের গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে চোখের দৃষ্টি হারানো কারো জীবন কি আর আট-দশটি কিশোরের মতো হতে পারে? চোখের দৃষ্টি হারিয়ে যখন একা বসে থাকতেন, প্রায়ই ভাবতেন, ‘আমিই বোধহয় একা এমন। কেন আমার সাথেই এমন হতে হলো?’

Shakib

দৃষ্টিহীনতায়, বেশকিছু সময় কেটে গিয়েছিলো ঘরে একা বসে। কোনো এক অজানা অভিমানে ছোটবেলায় মাকে ‘মা’ বলেও ডাকতেন না। শুধু কোনো ভয়ে বা একাকিত্বে গিয়ে বসতেন মায়ের কোলে। বায়না করতেন ছড়া-কবিতা শোনানোর। এমনভাবেই কেটে যাচ্ছিলো দিনগুলো। মায়ের কাছে থেকে পড়তে শিখেছিলেন। চেয়েছিলেন আরো পড়তে। আর তাই ভর্তি হওয়া রাজশাহীর পিএইচটিসি স্কুলে।

সিরাজগঞ্জের স্কুলে পড়ার সময়ই হঠাৎ করেই এক নতুন পৃথিবীর দরজা খুলে যায় সাকিবের সামনে। সুযোগ পান কলাবাগান মাঠে ক্রিকেটের এক বিশেষ ট্রেনিংয়ের। এর পরের গল্পটা বিশ্বজয়ের। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে বিশ্বমঞ্চে। নামমাত্র অনুদান হাতে সাকিবরা ওড়ালেন বাংলাদেশের পতাকা। ২০১২ সালে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে দৃষ্টিহীনদের টি২০ বিশ্বকাপে।

Shakib

একই বছর মানবিক শাখা থেকে লোকসংগীত নিয়ে পড়াশোনা করে এইচএসসিতে ৪.৪০ পান। ২০১৪ সালে পতাকা ওড়ান সাউথ আফ্রিকাতে একদিনের বিশ্বকাপে। আর সে বছরই নিজ যোগ্যতায় সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাঠের অলরাউন্ডার সাকিব যে জীবনেও সত্যিকারের একজন অলরাউন্ডার, তার প্রমাণ আরেকবার দিলেন ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ক্লোজআপ ওয়ানে অংশ নিয়ে।

আমাদের দেশে শারীরিক বা মানসিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের আমরা খুব সহজেই ফেলে দেই বাতিলের খাতায়। কিন্তু সাকিবদের গল্পগুলো কোনোদিন থেমে থাকে না। দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন আমাদের বারবার সত্যিকারের দৃষ্টিশক্তিহীন প্রমাণ করে। আমাদের অগোচরে নিঃশব্দে সাকিবরা এগিয়ে যান জয়ের পথে।

স্মার্টফোন নির্মাতা ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে প্রশংসনীয় এ যাত্রায় সাকিব আহমেদের সঙ্গী হতে পেরে গর্বিত। একবার চোখ খুলে তাকাই সাকিবদের দিকে।

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।