এ কোন নবান্নের হেমন্ত!

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৩৫ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

এসেছে অগ্রহায়ণ। রাজধানীর চারিদিকে নবান্ন উৎসবের নানাবিধ আয়োজন। গ্রাম যেন অনেকটা উপেক্ষিত। তাই গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবের প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশা নিয়ে লিখেছেন রিফাত কান্তি সেন-

‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে’- কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতার মাধ্যমে বাংলার প্রকৃতির রূপ তুলে ধরেছেন এভাবে। বাংলাদেশ সবুজ-শ্যামল এক অপরূপ দেশ। এ দেশের প্রতিটি ধুলোকণায় মিশে আছে ভালোবাসার স্পন্দন। বাংলার কৃষকের মুখে হাসি ফোটে গোলাভরা ধান দেখে। হেমন্তে ফসলের মাঠ হলদে রং ধারণ করে। চারিদিকে হলুদ আর সবুজের সমারোহে প্রকৃতি নব যৌবন লাভ করে।

Pran-Cinigurra

তবে আধুনিক যুগে মানুষ যত উন্নত হচ্ছে, যত আধুনিক হচ্ছে, ততই নিষ্ঠুর হচ্ছে। ফসলি জমিতে ঘর নির্মাণ করছে, করছে কৃত্রিম মৎস্য খামার। আবাদি জমির মাটি কেটে তৈরি করছে মৎস্য চাষ প্রকল্প। আবার কেউ কেউ উর্বর জমিগুলোতে রাসায়নিক স্যার প্রয়োগের ফলে উর্বরা শক্তি বিনষ্ট করছে।

তাই এখন আর আগের মতো ফসলি জমি চোখে পড়ে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দিন দিন বাসস্থানের চাহিদা বাড়ছে। আবার আধুনিকতাকে পুঁজি করে অনেকেই এখন কৃষিকাজ থেকে দূরে সরে আছেন। একসময় ধান কাটার মৌসুম এলেই বাঙালির ঘরে ঘরে উৎসব হতো। এই তো ক’বছর আগেও উৎসবমুখর ছিলো কৃষকের বাড়ি।

nabanno

আধুনিকতা আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। আবাদি জমি নেই এখন আর। যেখানে প্রচুর ফসল হতো; সেখানে ঘর তুলে আমরা বসবাস করছি। অথচ নতুন ফসল ঘরে তোলার কী যে আনন্দ- সে সময় বোঝা যেতো। এখন সেগুলো প্রায় নেই বললেই চলে। তখন পিঠা-পুলির উৎসব হতো নবান্ন এলে। কৃষাণি বধূর অজস্র বায়না থাকতো কৃষক স্বামীর কাছে। নোলক, চুড়িসহ কত আবদার।

নবান্ন বাঙালির প্রাণের উৎসব। আবহমান কাল থেকে উৎসবটি বাঙালি সংস্কৃতিতে দৃশ্যমান হয়ে আসছে। এখনো নবান্ন উৎসব হয় শহরাঞ্চলে। গ্রামাঞ্চলে অনেকে বলতেই পারেন না যে, আজ নবান্ন উৎসব। অবশ্য এজন্য আমরাই দায়ী। আজ যদি কেউ বলে, বাংলা আজ কত তারিখ? বাঙালি হলেও বাংলা তারিখটা হয়তো জানা নেই, ভিনদেশিটা ঠিক মুখস্থ করে বসে আছি।

Nabanno-1

এখনকার তরুণ প্রজন্ম নবান্ন উৎসব কী- সেটা জানে না। শুধু বইপুস্তকে পড়েছে যে নবান্ন উৎসবে কৃষকের ঘরে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। অবশ্য ভিনদেশি সংস্কৃতিরও একটি প্রভাব রয়েছে। তাই বাংলা সংস্কৃতির এ দিবসগুলো মিডিয়াতে যেমন ঘটা করে প্রচার করা উচিত; তেমনই যার যার অবস্থান থেকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা উচিত।

hemonto-four

নবান্নসহ প্রতিটি উৎসবে বাঙালির চিরচেনা রূপ ফিরিয়ে আনা হোক, এটা সময়ের দাবী। আমরা আধুনিক হবো, তবে সংস্কৃতিকে ভুলে নয়। আবহমান কাল থেকে বাঙালি তার হৃদয়ে যে সংস্কৃতিকে লালন করে আছে, তার যথাযথ পরিচর্যা করা একান্ত প্রয়োজন।

লেখক : সাংবাদিক ও শিক্ষক।

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।