বর্ষা আমার ভালোবাসা
আগামীকাল আষাঢ়ের প্রথম দিন। বর্ষাকালের আগমনী বার্তা শুনতে পাই। আমাদের দেশে ঋতু হিসেবে বর্ষার আলাদা কদর রয়েছে। আমাদের সংস্কৃতির সাথে বর্ষা মিশে আছে ওতপ্রোতভাবে। আমরা জীবনযাত্রার বৈচিত্র্যের মাঝে বর্ষাকে অনুভব করে থাকি। বর্ষায় প্রিয়তমার হাত ধরে ভিজতে ইচ্ছে করে। অনেকে আবার বর্ষার আবহে ঘরে বসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভালোবাসে।
কদম ফুল বর্ষার অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। বর্ষা মানেই তুলতুলে কোমল কদম ফুল। এর সৌন্দর্য যেমন আকর্ষণীয় তেমনি ভেজা নিস্তব্ধ পরিবেশ রহস্যময়। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এই আকর্ষণীয় ঋতু আমাদের কাছে অনেক প্রিয়।
আমাদের মাঝে এসেছে বর্ষাকাল। নগর জীবনের ব্যস্ততা, কংক্রিটে আবদ্ধ শহরে বসবাসকারীর পক্ষে বর্ষার প্রকৃত রূপ বা সৌন্দর্য উপলদ্ধি করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। প্রকৃত বর্ষার সৌন্দর্য ধারণ করতে গ্রামীণ পরিবেশের বিকল্প নেই। রসে, রূপে, আকর্ষণে যে ঋতু টইটুম্বুর তাকে নিজের করে পেতে তাই গ্রামীণ জনপদে সময় কাটানো যেতেই পারে।
বর্ষার প্রকৃত সৌন্দর্যে যে কেউ অভিভূত হবে। আমরা সুযোগ পেলেই বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে যাই গ্রামের বাড়িতে। জীবনের যে সময়গুলো বর্ষার সাথে কাটিয়েছি; সে সময়ের স্মৃতি মনে পড়লে মনের অজান্তেই রোমাঞ্চিত হই। স্মৃতির পটে ভেসে ওঠা সে ছবি অনেকটা বর্ষাকে কাছে না পাওয়ার অভাব পূরণে সহযোগিতা করে।
আমরা কয়েকজন বন্ধু সুযোগ পেলেই বৃষ্টিতে ভিজে নদীতে নৌকা চালাতে বেরিয়ে পড়তাম। আমাদের নৌভ্রমণে বাড়তি আনন্দ দিতো মুষলধারে বৃষ্টি। আশেপাশে কিছুই দেখা যায় না। তবুও আমরা নৌকায় চড়ে নদীর বুকে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিতাম। বর্ষার মধুর স্মৃতির সাথে কিছু স্মৃতি বেদনারও হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে বজ্রপাতের শব্দ আর সাথে ঝড়ো বাতাসতো রয়েছে। তারপরও একসময় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর মৃদুমন্দ বাতাস নতুন আবহ এনে দিতো।
বর্ষা এলেই আমার মনে পড়ে সেই দিনের ঘটনা। সেদিন আমরা সবাই কেবল অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। এক বর্ষাস্নাত দুপুরে কয়েকজন মিলে বৃষ্টিতে ভিজে নদীতে নৌকা চালাতে বেরিয়ে পড়েছি। আমরা একটার পর একটা গান গেয়ে যাচ্ছি। নিজেদের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি খেলা করছে। আমি গান ধরলাম, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে, মাঝি পাল উড়াইয়া দে’। হঠাৎ আকাশজুড়ে বজ্রপাতের শব্দে সবাই ভয় পেলাম।
আমরা এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও আমাদের অদূরে একটি মাছধরা নৌকার উপর বজ্রপাত ঘটে। আমরা এ দৃশ্য দেখে ভীত হয়ে পড়লাম। অবশেষে ভয়ে আমরা বাড়ির পথ ধরলাম। পরবর্তীতে জানলাম, আমাদের গ্রামের আ. করিম চাচা এবং তার ছেলে নৌকায় মাছ ধরা অবস্থায় বজ্রপাতে নিহত হন। আজও আমি সে স্মৃতি মনে করে শিউরে উঠি।
বর্ষাকালে বৃষ্টিভেজা মেঠোপথ ও বৃক্ষরাজি সতেজ ও কোমল। চারদিকের শান্ত আবহ একটি মায়ার জগৎ সৃষ্টি করে। এছাড়া বৃষ্টির ধ্বনি, টইটুম্বুর নদী, পুকুর ও ঝিল দারুণ একটি পরিবেশের জন্ম দেয়। এর সাথে রয়েছে কদম ফুলের মোহনীয় গন্ধ। বর্ষার প্রেমে আকৃষ্ট হয়ে শপথ করেছিলাম বৃষ্টিভেজা একটি দিনে কোনো রমণীর হাতে তুলে দেবো বর্ষার প্রথম কদম ফুল। তবে আজও সে শপথ পূরণের সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
তবুও বর্ষা আমার প্রিয়, বর্ষা আমার ভালোবাসা। আমি বর্ষার বৃষ্টিভেজা দিনে আজও ভিজতে চাই। আজও কদম ফুল হাতে প্রেয়সীর জন্য অপেক্ষা করতে চাই। এ অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে- তা জানি না।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এসইউ/পিআর