হোমিওপ্যাথি: বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির এক সম্ভাবনাময় অধ্যায়

সানজানা রহমান যুথী
প্রতি বছর ১০ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস’। এই দিনটি মূলত আধুনিক হোমিওপ্যাথির জনক জার্মান চিকিৎসক ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডরিখ স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের জন্মদিন উপলক্ষে উদযাপন করা হয়।
হোমিওপ্যাথি হলো এক বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ হোমিওপ্যাথিকে তাদের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এই দিবসটি শুধু হ্যানিম্যানকে শ্রদ্ধা জানানোর দিন নয়, বরং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার বিস্তার, সাফল্য এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে ভাবারও একটি উপযুক্ত সময়।
হ্যানিম্যান ও হোমিওপ্যাথির সূচনা
ড. হ্যানিম্যান ছিলেন একজন অসন্তুষ্ট প্রথাগত চিকিৎসক। তার সময়ের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সীমাবদ্ধতা তাকে ভাবিয়ে তোলে। তাই তিনি গবেষণা শুরু করেন এবং ১৭৯৬ সালে হোমিওপ্যাথির সূচনা করেন। তার মতে, কোনো রোগের লক্ষণের সঙ্গে মিল রাখা যায় এমন কোনো পদার্থ খুব ক্ষুদ্র মাত্রায় ব্যবহার করলে সেই রোগ নিরাময় হতে পারে। আজকের দিনে এসে হ্যানিম্যানের এই আবিষ্কার বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি রোগী ও হাজার হাজার চিকিৎসকের জন্য একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
হোমিওপ্যাথির জনপ্রিয়তা
বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি চালু আছে। ইউরোপ, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশে হোমিও চিকিৎসা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভারত এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় এবং সরকারি পর্যায়েও হোমিও চিকিৎসকদের জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা সেবা চালু করেছে। বাংলাদেশেও হোমিও চিকিৎসা স্বীকৃত ও প্রচলিত। বহু মানুষ এখানে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রতি আস্থা রাখেন, বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী রোগ, ত্বকের সমস্যা, হাঁপানি, অ্যালার্জি, ও শিশুদের সাধারণ সমস্যায়।
হোমিওপ্যাথি দিবসের গুরুত্ব
বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবসে নানা ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়-সেমিনার, আলোচনা সভা, র্যালি, মেডিকেল ক্যাম্প ইত্যাদি। এতে চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এই দিবসটি নতুন প্রজন্মের কাছে হোমিও চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে। পাশাপাশি, যারা হোমিওপ্যাথিকে কুসংস্কার কিংবা অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা মনে করেন, তাদের মাঝেও তথ্যভিত্তিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
বাংলাদেশে হোমিও চিকিৎসার অবস্থা
বাংলাদেশে হোমিও চিকিৎসার একটি শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠান হোমিও চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবা প্রদান করছে। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের অধীনে দেশে বহু চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হয়ে কাজ করছেন। রাজধানীসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে হোমিও চেম্বার দেখা যায়, যেখানে হাজারো মানুষ প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তাই প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি এক নতুন আশার দুয়ার খুলে দিতে পারে, যদি আমরা এটিকে গ্রহণ করি যুক্তিভিত্তিক চিন্তাধারার মাধ্যমে। তথ্যভিত্তিক সচেতনতা, সঠিক শিক্ষা ও বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিকে আরও উন্নত, কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব।
কেএসকে/এএসএম