‘বিগত সরকার আমাকে একঘরে করে রেখেছিল’

মিজানুর রহমান মিথুন
মিজানুর রহমান মিথুন মিজানুর রহমান মিথুন , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫

গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির সংগীতাঙ্গনে একটি অনিবার্য নাম। শাহনাজ রহমাতুল্লা, রুনা লায়লা, এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, কনকচাঁপাসহ খ্যাতিমান সব শিল্পীই তার লেখা গান গেয়েছেন। ‘সূর্যদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’, ‘একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘এখানে দুজনে নিরজনে’, ‘যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায়’, ‘নাই টেলিফোন’সহ অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি লিখেছেন। আজ (২৮ জানুয়ারি) তার জন্মদিন। এ উপলক্ষে গান ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন

জাগো নিউজ: আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
মনিরুজ্জামান মনির: বেশ ভালো আছি। আমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: এবারের জন্মদিনটি কেমন কাটাচ্ছেন?
মনিরুজ্জামান মনির: জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। তবে আমার ভক্ত-অনুরাগীরা অনেকেই ফোনে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তারা আমার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এটা দারুণভাবে উপভোগ করছি। তবে এবারের জন্মদিনে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার কারণ হচ্ছে- আমার এবারের জন্মদিন এমন একটা সময় এসেছে যখন আওয়ামী লীগ সরকার নেই। ফলে নিজেকে বেশ মুক্ত মনে হচ্ছে।

‘বিগত সরকার আমাকে একঘরে করে রেখেছিল’
নিচের সারিতে ছবির ডানদিক থেকে- গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির, গীতিকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী। ছবি: মনিরুজ্জামান মনিরের সৌজন্যে

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: এমনটা মনে হওয়ার কারণ কী?
মনিরুজ্জামান মনির: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ‘বিএনপি’র দলীয় সংগীত ‘জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ’ আমার লেখা। ফলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে একঘরে করে রেখেছিল। আমি বিভিন্ন রকমের চাপের মুখে ছিলাম। আমাকে সব জায়গা থেকে অঘোষিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল। রেডিও, টেলিভিশনে আমাকে ডাকা হতো না। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিজেকে মুক্ত ও স্বাধীন মনে হচ্ছে। এটিই এবারের জন্মদিনে সবচেয়ে বেশি ভালোলাগার বিষয়।

জাগো নিউজ: ‘বিএনপি’র দলীয় সংগীত লেখার গল্পটি শুনতে চাই।
মনিরুজ্জামান মনির: আমার যতদূর মনে পড়ে ১৯৮০ সালের দিকে বিটিভির ‘বর্ণালী’নামের একটি অনুষ্ঠানের প্রচারের লক্ষ্যে শাহনাজ রহমাতুল্লার জন্য কয়েকটি গান লিখেছিলাম। গানটি প্রচার হওয়ার পর তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ভীষণ পছন্দ করেন। এরপর তিনি গানটি তার রাজনৈতিক দলের দলীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করেন। গানটি দলীয় সংগীত নির্বাচনের আগে আমি জানতাম না। পরে জেনে আমি চমৎকৃত হয়েছি। অনেক গর্ব অনুভব করেছি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমার লেখা গানটি তার দলের দলীয় সংগীত হিসেবে পছন্দ করেছেন এটা আমার জীবনে পরম প্রাপ্তি।

‘বিগত সরকার আমাকে একঘরে করে রেখেছিল’
বাম দিক থেকে- মনিরুজ্জামান মনির, কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরদের সঙ্গে। ছবি: মনিরুজ্জামান মনিরের সৌজন্যে

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কি আপনার কখনো দেখা হয়েছে?
মনিরুজ্জামান মনির: তার (শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান) সঙ্গে আমার দুবার দেখা হয়েছে। তিনি আমাকে দেখা করার জন্য তার দপ্তরে যেতে বলেছিলেন। একবার বঙ্গভবনে আরেক বার পুরান ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি আমাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চাকরি দিয়েছিলেন। বলা যেতে পারে গান লেখার জন্য আমি চাকরিটি পেয়েছিলাম। চাকরি দিয়ে তিনি আমাকে একটি শর্ত দিয়েছিলেন- কোনোভাবেই গান লেখা বন্ধ করা যাবে না। এটি আমার জীবনে বড় একটি সুযোগ এনে দিল। গান লিখে তো আর আমাদের দেশে সংসার চালানো সম্ভব নয়, শিল্পকলায় চাকরি পাওয়ায় আয়ের জন্য নিশ্চিত একটি পথ হয়ে গেলো। ফলে চাকরির পাশাপাশি আমি গান রচনায় আরও গভীরভাবে মনোনিবেশ করতে পেরেছি।

ডান দিক থেকে কণ্ঠশিল্পী অ্যান্ডু কিশোর, মনিরুজ্জামান মনির, সুরকার সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী ও কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। ছবি: মনিরুজ্জামান মনিরের সৌজন্যে
ডান দিক থেকে কণ্ঠশিল্পী অ্যান্ডু কিশোর, মনিরুজ্জামান মনির, সুরকার সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী ও কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। ছবি: মনিরুজ্জামান মনিরের সৌজন্যে

জাগো নিউজ: এখন আপনার সময় কাটছে কীভাবে?
মনিরুজ্জামান মনির: আগের মতো গান লেখার ব্যস্ততা নেই। তবে যারা ইউটিউবে গান প্রকাশ করে তাদের জন্য লিখছি। অনুপম নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চু্ক্তিবদ্ধ হয়েছি। তাদের অধিকাংশ প্রকাশিত গান আমি লিখছি। সেই সঙ্গে বেতার ও টেলিভিশনে আবারও নতুন করে গান লেখা শুরু করেছি।

বিজ্ঞাপন

‘বিগত সরকার আমাকে একঘরে করে রেখেছিল’
বাম দিক থেকে- মনিরুজ্জামান মনির, এন্ড্রু কিশোর ও অন্যান্যরা। ছবি: মনিরুজ্জামান মনিরের সৌজন্যে

জাগো নিউজ: গান লিখে আপনি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। আপনার জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি আছে?
মনিরুজ্জামান মনির: শ্রোতাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা ও ভালোবাসা জীবনের সেরা অর্জন। তবে গান লিখে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও পেয়েছি। একুশে পদকসহ তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। তবে আমার লেখা গানের অনেক সিনেমা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। আমি সেই হিসেব করতে গেলে কমপক্ষে দশবার এই পুরস্কারটি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য ও অজানা কারণে আমাকে এ থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে আশা করছি স্বাধীনতা পুরস্কারটিও পাব।

জাগো নিউজ: শুনেছিলাম আপনার গান নিয়ে একটি বই প্রকাশ হবে। সেটির খবর কি?
মনিরুজ্জামান মনির: বইটি গত বছর একুশের বইমেলায় প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। তবে আসছে বইমেলায় বইটি প্রকাশ পাচ্ছে। আমার লেখা বিখ্যাত গান ‘সূর্যোদয়ে তুমি’র নামেই রাখা হয়েছে বইটির নাম। আমার লেখা জনপ্রিয় গান থেকে বাছাই করা ৩০০টি গান নিয়ে এই বই। পাশাপাশি আমার লেখা গান কণ্ঠে ধারণ করা খ্যাতিমান শিল্পীদের তুলে ধরা হয়েছে। বলা চলে বইটি হবে আমার সংগীত জীবনের একটি ডকুমেন্টারি। বইটি ‘ঐতিহ্য’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

‘বিগত সরকার আমাকে একঘরে করে রেখেছিল’
কণ্ঠশিল্পী ন্যানসির সঙ্গে মনিরুজ্জামান মনির। ছবি: মনিরুজ্জামান মনিরের সৌজন্যে

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মনিরুজ্জামান মনির: জন্মদিনে আমাকে শুভেচ্ছা জানানোয় আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এমএমএফ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।