বাজছে তানপুরা, সারেঙ্গী, পাখোয়াজ
শুরু হলো শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব। বেজে উঠেছে তানপুরা, সারেঙ্গী, পাখোয়াজ। ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে আজ পৌষের বিকেলে শুরু হয়েছে দুই দিনের শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব।
বিকেল থেকে শুরু করে প্রথম দিনের অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা রাত সাড়ে দশটায়। শুদ্ধসংগীতে বুঁদ হয়ে ছিলেন সমঝদার শ্রোতারা। তবলা, তানপুরা, সারেঙ্গী, হারমোনিয়াম, পাখোয়াজ আর বাঁশির সুর লহরি তাদের নিয়ে যায় স্নিগ্ধ শান্ত এক ভুবনে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার পর শুরু হয় উৎসব। কাল শুক্রবার বিভিন্ন পরিবেশনা দিয়ে সকাল নয়টায় শুরু হবে উৎসবের দ্বিতীয় অধিবেশন। দুপুর ১২টায় ছয় ঘণ্টার বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হবে শেষ অধিবেশন। চলবে রাতভর।
প্রথম দিন পরিবেশন পর্বের শুরুতেই ছিল রাগ অষ্টকল্যাণ। রেজোয়ান আলীর রচনা ও গ্রন্থনা এবং আফরোজা রূপার পরিচালনায় প্রায় পনেরো মিনিটের এই পরিবেশনা উপস্থাপন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। কণ্ঠসঙ্গীত নিয়ে আসেন মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া। তিনি পরিবেশন করেন হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের রাগ পুরিয়া ধানেশ্রী। কণ্ঠসংগীতের সুর-মূর্ছনা থামতেই বেজে ওঠে তবলার বোল। কুমার প্রতিবিম্বের তবলাবাদনে অন্যমাত্রা যোগ করে শৌণক দেবনাথ ঋকের সারেঙ্গী বাদন। দুটি অপ্রচলিত তাল বাজান কুমার। একটি সাড়ে আট মাত্রার, আরেকটি পঞ্চম স্বরে।
পরপর দুটি কণ্ঠসঙ্গীতে শিল্পী সুপ্রিয়া দাশ ও অনিল কুমার সাহা পরিবেশন করেন রাগ মারবা ও পুরিয়া কল্যাণ। মুর্তজা কবীর মুরাদের বাঁশি, রাত সাড়ে দশটায় প্রথম দিনের পরিবেশনা শেষ হয় অসিত রায়ের কণ্ঠসঙ্গীতে। তিনি পরিবেশন করেন রাগ বাগেশ্রী। পাখোয়াজ বাজিয়ে তাকে সঙ্গ দেন আলমগীর পারভেজ সুমন। তানপুরায় ছিলেন তন্ময় কুমার পাল ও তাপসী রায়।
উৎসব শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এরপর স্বাগত বক্তব্য ও ধন্যবাদ জানাতে মঞ্চে আসেন ছায়ানটের সহসভাপতি ও খ্যাতিমান নজরুলসঙ্গীত শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। তিনি বলেন, ‘এবারের উৎসবেও সম্মেলক ও একক গান রয়েছে। ছায়ানটের চেষ্টা থাকবে প্রতি বছরই উৎসবটি আলো ভালো করে করার। এই উৎসবটি আমরা উৎসর্গ করেছি পণ্ডিত নারায়ণ চন্দ্র বসাককে। ১৯৭২ সাল থেকে তিনি ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মানুষ হিসেবে তিনি খুবই সরল মনের ছিলেন। দীর্ঘ সময় কলকাতায় চিন্ময় লাহিড়ীসহ অন্যান্যদের কাছে গান শিখেছেন। বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত শিল্পী নারায়ণ চন্দ্র বসাকের কাছে গান শিখেছেন।’
সঙ্গীতপিপাসুদের শুদ্ধসংগীতের সঙ্গে পরিচয় নিবিড়তর করা এবং সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের সাধনা ও পরিবেশনে প্রাণিত করার লক্ষ্যে ২০০৭ সাল থেকে ছায়ানট নিয়মিত শুদ্ধসঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করে আসছে। ছায়ানটের শুদ্ধসঙ্গীতের প্রথম আসরের উদ্বোধন করেছিলেন পূর্ব বাংলায় জন্ম ও পরে ভারতীয় নাগরিক, পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। এখন প্রতি বছর শীতকালে এ আয়োজন হচ্ছে। বার্ষিক এই উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গুণী শিল্পীরা পরিবেশন করেন।
আরএমডি