‘সব মুছে ফেলি লিখে লিখে’, বাবার মৃত্যুদিনে দুই মেয়ে

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’, ‘আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে’, ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন কিংবদন্তিতুল্য মাহমুদুন্নবী। তার কণ্ঠের অনেক গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। নতুন প্রজন্মের শিল্পী তার গান কথার করে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

আজ (২০ ডিসেম্বর) শিল্পী মাহমুদুন্নবীর মৃত্যুবার্ষিকী। এ শিল্পীর সন্তানরাও গান গেয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন। তার দুই কন্যা কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী ও সামিনা চৌধুরী বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন।

‘সব মুছে ফেলি লিখে লিখে’, বাবার মৃত্যুদিনে দুই মেয়েফাহমিদা নবী

ফাহমিদা নবী তার পোস্টে লিখেছেন, ‘আজ আমার বাবার চলে যাবার দিন। ২০ ডিসেম্বর ১৯৯০ সাল। কত বছর হিসেব করি না! শুধু বুঝি কত স্বপ্ন পিছনে ফেলে সময় যখন তখনই চলে গেলো। সব তো পূরণ হয় না কিছু অপূর্ণতা রেখেই চলে যেতে হয়। অনেক কিছু বলতে লিখতে ইচ্ছা করে। কিন্তু সব মুছে ফেলি লিখে লিখে! মনে হয় কি হবে লিখে। তারপর আবার লিখি! আমার ভাবনা বাস্তবতাকে প্রকাশ করলাম।’

বাবা মাহমুদুন্নবীকে আয়না অভিহিত করে ফাহমিদা নবী লেখেন, ‘আব্বা আমার আয়না। আমি আমাকে দেখি সেই আয়নায়। আমার পরিবার, আমার ভাইবোন, আম্মা, আমাদের সন্তানরা এবং আমার বাবার শ্রোতারা প্রত্যেকে আমার আয়নার অংশ। যে আয়নার আলোকে পথ চলার সাহস এক ধরনের ধৈর্য্য তৈরি করেছে। সেই ধৈর্য্যর সহ্যের মধ্যে আছে চোখে দেখার নেবার ধারণ ক্ষমতা। শুদ্ধতা যেখানে বিলীন, সেখানে কিসের সাথে আপোষ? সংগীতের সাথে রুচিশীলতার যে সম্পর্ক তাতো আসলে স্নিগ্ধতা, সূদুর প্রসারি সুরের মোহ থাকে। তা নিয়ে তো ভাবনা নেই বর্তমানে! তাই তো সাহসি একটা আয়না আমাকে প্রতিনিয়ত বিশ্বাসের প্রতিশ্রুতি দেয়, গান হচ্ছে শোনার আর অনুভবের, দৌড়াবার বা পিছিয়ে পড়বার নয়। হারানোর কিছু নয়।'

‘সব মুছে ফেলি লিখে লিখে’, বাবার মৃত্যুদিনে দুই মেয়েফাহমিদা নবী

তিনি আরও লেখেন, ‘বাবা হিসেবে শুধু নয়, একজন প্রিয় জনশ্রুত শিল্পী মাহমুদূন্নবী যুগে যুগে তাই একবারই আসে যাকে ভালোবাসে মানুষ তার সুরের অলঙ্কারণের আর বিনয়ের কারণে। আজো প্রাণে ধারণ করে বলে, কত ভালো মানুষ ছিলেন, কত বড় বিনয়ী শিল্পী ছিলেন! তার মতো সুরের রাজা আজো দেখলাম না! আমার কথা নয় শ্রোতার কথা। তখন তো গানতো দেখার বিষয় ছিলো না! আমিও মনে করি গান শোনার ছিল, আছে থাকবে, গান কোনো নিত্য নতুন সৃষ্টির উপদান নয়! তাই আয়নার গভীরে কোনো প্রতিযোগীতার দৌড়ে হারিয়ে যাবার ভয় নেই শিল্পী হিসেবে। আমি সেই আয়নার প্রতিবিম্বে দাঁড়িয়ে, আমার গানের প্রান্তে! আজকের শিল্পচর্চার দেয়াল দেখি আর ভাবি আজ একজন মাহমুদুন্নবী হয়ে ওঠার জন্য শিল্পী নেই আছে তারকার ভিড়! সেই কণ্ঠ এখনো নবীন, এখনো তারার মতো জ্বলজ্বলে এক আলোকবর্তীকা। শ্রোতার ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়া বিশাল অর্জন। ধন্যবাদ শ্রোতাদের যাদের জন্য আব্বা অমর হয়ে আছেন মানুষের মনে, শ্রোতার জাগরণে। আব্বার আত্মার জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন তার সেই সম্মানকে ধরে রাখতে পারি যতদিন আয়ু! আব্বার আত্মার শান্তি কামনা করি রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।’

‘সব মুছে ফেলি লিখে লিখে’, বাবার মৃত্যুদিনে দুই মেয়েসামিনা চৌধুরী

অন্যদিকে সামিনা চৌধুরী তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘বাবার ৭৮ সালের ছবির সাথে আমার এ সময়কার একটি ছবি মিলিয়ে এই ছবির সৃষ্টি। আমাদের সেরাকণ্ঠের শীর্ষ ১৩ জন প্রতিযোগীর একজন, আলাউদ্দিন এই ছবি আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে ২ বছর সময় নিয়ে তৈরি করে আমাকে আমার জন্মদিনে উপহার দেয় যা পেয়ে জানি না কেনো, ভেতরটা গুমরে কেঁদে উঠছিল! আনন্দে কিংবা কষ্টে! আমার বাবা আমার এখনকার আমাকে বা আমার আর ভাইবোনদের কর্ম বা কমবেশি সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু ছবিতে তা দেখানো হয়েছে। এ যেন স্বপ্নের মতো। স্বপ্নই সই, তবু ভালো লেগেছিল ছবিটা আমার কি যে মায়া ছবিটার প্রতি।’

‘সব মুছে ফেলি লিখে লিখে’, বাবার মৃত্যুদিনে দুই মেয়েসামিনা চৌধুরী

সামিনার সঙ্গে তার বাবা সব সময় আছেন-এমনটাই মনে করেন এ শিল্পী। সেই কথা তুলে ধরে তিনি লেখেন, ‘আব্বা অনেক দূরে কোথাও চলে গেছেন কিন্তু এই ছবির মতোই সারাক্ষণ আমার সাথে আমার পাশে আছেন, এভাবে আমায় শেখাচ্ছেন প্রতিদিন। বাবাহীন প্রতিদিন। অনেক কষ্টের। আজ ২০ ডিসেম্বর, আল্লাহর ডাকে আমার বাবার চলে যাবার দিন। সরল সহজ মানুষ আমার বাবাকে আল্লাহ যেন বেহেশতে জায়গা করে দেন। আমীন রব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানি সগীরা।’

এমএমএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।