সুমন কি অরুপার কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন
বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা বেকার প্রেমিকের গল্প নিয়ে নাটক ‘আমি অরুপার কাছে যাচ্ছি’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে পাশ করার পর পর নাটকটি বানিয়েছিলেন মেজবাউর রহমান সুমন। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করা নবীন এক নির্মাতা সুমন তারপর ঢুকে পড়েন বিশ্বজোড়া পাঠশালায়। যা কিছু বানিয়েছেন, পেয়েছেন প্রশংসা। আজ তার জন্মদিন। আজ তার কাছে জানতে চাওয়াই যায়, তিনি কি অরুপার কাছে পৌঁছতে পেরেছিলেন?
২০১২ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু নাটক বানান সুমন। ‘তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’, ‘ফেরার কোন পথ নেই’, ‘থাকে না কোন কালে’, ‘নুসরাত, সঙ্গে একটি গল্প’, ‘ধূলোমেঘের জোৎস্না ভ্রমণ’, ‘তারপর পারুলের দিন’, ‘দখিনের জানালা খোলা’, ‘আলো আসে আলো যায়’, ‘অরুপার জন্য’। নাটক নয়, যেন এক একটি উপন্যাস! একদিন মন তাকে থামতে বলে। সেই থেকে তিনি বিরতি নেন নাটকে। নাক-মুখ গুঁজে বিজ্ঞাপন বানাতে থাকেন। তার বানানো বিজ্ঞাপনের পণ্যগুলো প্রিয় হয়ে ওঠে মানুষের। সুমনের মন জানান দেয়, এবার বড়পর্দায় যাই চলো।
২০০৩ সালে চারুকলার শুকনো পুকুরে বসে বন্ধুরা মিলে করেছিলেন গানের দল, মেঘদল। দলের ‘মায়া সাইকেল’, ‘না বলা ফুল’, ‘দূর পৃথিবী’, ‘ঠিক ঠাক’, ‘রঙিন ফেরেশতা’, ‘এসো আমার শহরে’, ‘মুঠোফোন’, ‘কবিয়াল’, ‘ছেলে বেলা’, ‘তবু মন’ ও ‘এ হাওয়া’র মতো গানগুলোর কোনোটা সুমন লিখেছেন, কোনোটা গেয়েছেন। তবে গায়ক নয়, চলচ্চিত্রকার হিসেবে তিনি অধিক উদ্ভাসিত।
পরের ঘটনা অনেকেই জানেন। সুমনের প্রথম সিনেমা ‘হাওয়া’ দীর্ঘ বিরতির পর মুক্তি পায়। ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটির কাজ কিন্তু শুরু হয় অন্তত ১০ বছর আগে। মন-মগজ থেকে পর্দা পর্যন্ত পৌঁছাতে যতটা সময় তিনি নিয়েছেন, তার ফলাফল লোকে দেখেছে! মানুষের মুখে মুখে আজও ফিরছে ‘হাওয়া’র গান, ‘সাদাসাদা কালা কালা’, মানুষের চোখে আজও নেশার মতো জড়িয়ে আছে গুলতি নামের মেয়েটি, যে কি না চোখের সামনে নারী থেকে সাপ হয়ে গিয়েছিল! পরিচালক সুমন যেন জাদুকর!
জাদুকরের আজকের দিনটা কীভাবে কাটবে? ফোনের ওপাশ থেকে তিনি যখন জানিয়ে দেন, ব্যক্তিগত কোনো ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন না, তখন উপায় একটাই – তার নিয়মে জাদুবাস্তবতার জন্ম দেওয়া। জাদুকরের থাকে এক রূপসী রমনী, মঞ্চে যাকে কেটে দুটুকরো করে ফেলেন তিনি। আবারও জোড়া দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। সুমন হয়তো সেই রমনীকে নিয়ে আজ লং ড্রাইভে যাবেন। হয়তো ওই রমনীর নিয়ে আসা মিষ্টি চেহারার কেক কেটে দুটুকরো তুলে দেবেন রমনীর মুখে।
ঘটা করে জন্মদিন উদযাপন করেন না সুমন। ঘটা করে কেবল কাজটাই করতে দেখা গেছে তাকে। সহকর্মী ও কাছের মানুষেরা বলেন, সুমন বিশ্রামও নেন না। তবে আজ নেবেন। বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাজ ছাড়াই কাটাবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি। এটি কি তার দুটি কাজের মধ্যবর্তী বিরতি? মাঝে বেশ কিছুদিন ফোন থেকে দূরে ছিলেন তিনি। যারা ফোন করে পায়নি, তাদের বুঝতে বাকি থাকে না, সুমন ডুবে আছেন ... কাজে। তাই তার কাছে আর জানতে চাওয়া হয় না, সুমন কি অরুপার কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন?
এমআই/আরএমডি/জিকেএস