ট্রাম্প ফিরে আসায় বিশ্বচলচ্চিত্রে ধাক্কা, কী হবে ভবিষ্যৎ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:১৭ পিএম, ০৭ নভেম্বর ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজের অফিসে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার এই প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অনেকে আবার মনে করছেন তার আগমন বিশ্ব রাজনীতির আঙ্গিনায় মিশ্র প্রভাব ফেলবে।

একইভাবে চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা মনে করছেন আমোদি স্বভাবের ট্রাম্পের শাসনামলে প্রভাবিত হবে বিশ্ব চলচ্চিত্রও। সেটা কারো জন্য ভালো কেউ আবার দেখছেন নেতিবাচক দৃষ্টিতে। আন্তর্জাতিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ট্রাম্পের প্রভাব কেমন হবে সে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।

একজন স্বাধীন প্রযোজকের মত দিয়ে হলিউড রিপোর্টার লিখেছে, ‌‌‘যখন দেখলাম ট্রাম্প জিতেছেন, তখন আমি শুধু আমার মাথা নিচু করে কাঁদতে চাইছিলাম। এখন খুব সতর্ক হয়ে দেখতে হবে চলচ্চিত্রে কতটা পরিবর্তন আসে।’

সবচেয়ে বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। বিশেষ করে মার্কিন-চীন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চলছে। ট্রাম্পের রক্ষনশীল অবস্থান চীনের সিনেমা বাজারে হলিউডের প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। যদিও চীনে মার্কিন কনটেন্টের চাহিদা কমছে, তবুও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ২০২৪ সালে, আমেরিকান সিনেমাগুলো চীনে ৭৯৭ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছে। যার মধ্যে ‘ভেনম: দ্য লাস্ট ডান্স’-এর মতো ব্লকবাস্টার সিনেমা ৭৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল চীনা পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ানো। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হলে হলিউডের আয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি চীনের বাজারকেও প্রভাবিত করবে। তবে অনেক চাইনিজদের কাছে জনপ্রিয় ট্রাম্প। তারা কমরেড হিসেবে ডাকেন ট্রাম্পকে। তাদের মতে, দুশ্চিন্তা করে নয় বরং দুই দেশের চলচ্চিত্র শিল্প যেন সুবিধা পায় সেভাবে স্বার্থ রক্ষা করে আরও পরিশ্রম করতে হবে।

লাতিন দেশগুলোও দুশ্চিন্তায় পড়েছে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে। ‘দ্য জিসেভেন’-এর সিইও গুইলারমো ব্লাঙ্কো আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সীমাবদ্ধ অভিবাসন নীতির কারণে যৌথ উৎপাদন সীমিত হতে পারে। তবে তিনি এটিকে একটি সুযোগ হিসেবেও দেখেন, যাতে আরও বাস্তবসম্মত এবং সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় গল্প বলা যায়।

আন্তর্জাতিক প্রযোজক ‘লুনার পিকচার্স’-এর জিম রবিসন, মার্কিন রাজ্যগুলোর মধ্যে উৎপাদন প্রণোদনার জটিল প্যাচওয়ার্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি আশাও প্রকাশ করেন যে ইন্ডাস্ট্রি ওয়াশিংটনের কাছ থেকে বিরক্তিমুক্ত থাকবে। রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত টেক্সাস, কেন্টাকি এবং ওকলাহোমা রাজ্যগুলো চলচ্চিত্র বিকাশে প্রণোদনা পাবে। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রযোজকরা কাজ করতে এলে বিশেষ সুবিধােই পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

অনেকে মনে করছেন ট্রাম্প নিজে বিনোদনপ্রিয় মানুষ। তিনি চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কখনো অন্তরায় হতে চাইবেন না। বিশ্বজুড়ে হলিউডের প্রভাব বাড়াতে কাজ করবেন। স্থানীয় চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতেও ইতিবাচক অংশগ্রহণ দেখা যেতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনের।

তবে ইটালি, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইরোপের বেশ কিছু দেশের চলচ্চিত্র সংস্থা ও ব্যক্তিরা আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে পারে। কারণ দেশগুলোর অনেক প্রযোজক, নির্মাতা, তারকা ও বিভিন্ন উৎসব আয়োজকেরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা নেতিবাচক প্রচারণাও করেছেন। উল্লেখ করা যায় বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের কথা। এর আয়োজকেরা ট্রাম্পকে সমর্থন দেয়ায় ইলন মাস্কের মালিকানাধীন টুইটার বয়কটের ডাক দিয়েছেন। এটা তো স্পষ্ট, দ্রুতই এ বিষয়ের জটিলতা কাটানোর উদ্যোগ না নিলে ঝামেলায় পড়তে পারে উৎসবটি।

ভারতীয় সিনেমার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন সহায়ক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের ঘনিষ্ট বন্ধু। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়ে ফিরে আসায় মোদি ও তার সরকার উষ্ণ অভিবাদন জানিয়েছে। হলিউডের পরই এখন সিনেমার জন্য ভারতকে গুরুত্ব দেয়া হয়। তারকা ও চলচ্চিত্র উৎপাদন এবং বিকাশে যেমন বিশাল তেমনি আয়ের পরিমাণের জন্যও ভারতের বাজার বিশ্ব চলচ্চিত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমেরিকার সরকার সবসময়ই ভারতের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উষ্ণ রেখে চলেছে। তবে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন সেই সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে যাচ্ছে এতে সন্দেহ নেই। নানা উৎসবগুলোতে দুই দেশের সিনেমা ও তারকাদের অংশগ্রহণও বাড়বে।

একই ভাবনা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, ট্রাম্পের দুই বন্ধু ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া ও কিম জং উনের উত্তর কোরিয়ার সাথেও বৃদ্ধি পাবে চলচ্চিত্রের বাণিজ্য। পৃথিবীতে শান্তি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প আরব বিশ্বের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইবেন। সেক্ষেত্রে রক্ষণশীল দেশগুলোতে যারা চলচ্চিত্রের বিকাশে আগ্রহী তারাও বেশ সুবিধা পাবেন।

এলএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।