জন্মদিন
বলিউডের প্রস্তাবে সাড়া দেননি এন্ড্রু কিশোর
তার গান ছাড়া বাংলা সিনেমার কথা ভাবা যেত না একটা সময়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বলিউডেও গেয়েছিলেন তিনি। লোভনীয় প্রস্তাব ছিল বলিউডে স্থায়ী হওয়ার। সাড়া দেননি। বাংলাদেশই ছিল তার প্রাণের জায়গা। সেই শিল্পী, এন্ড্রু কিশোরের আজ ৭০তম জন্মদিন।
এন্ড্রু কিশোর বাংলা গানের এক অনিবার্য নাম। সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়ে হয়েছিলেন অঘোষিত প্লেব্যাক সম্রাট। সংগীতবোদ্ধাদের অনেকে বলেছেন, এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠ অনুশীলন করে তৈরি করা যায় না। ঈশ্বরের কাছ এ কণ্ঠ নিয়ে পৃথিবীতে আসতে হয়।
শিল্পী এন্ড্রু কিশোর সশরীরে নেই, তবে সর্বক্ষণ আছেন। সংগীতের এই অস্থির সময়েও তার গান সব শ্রেণির শ্রোতাকে প্রশান্তি দিয়ে যাচ্ছে। এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠান, চায়ের দোকান বা রিয়েলিটি শোগুলোতে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা এন্ড্রু কিশোরের গান কণ্ঠে তুলে নেন। তাছাড়া নতুন প্রজন্মের অনেক শিল্পী তার গান কাভার করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করে জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন।
‘হায় রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যিখানে’ গানগুলো কোনোদিনও পুরোনো হওয়ার নয়। এই গানগুলোর কল্যাণে সংগীতপিয়াসীদের হৃদয়ের গভীর পৌঁছে গেছেন কিশোর।
কিশোরের হিন্দি সিনেমায় গান গাওয়ার মজার সব গল্পও আছে। জীবদ্দশায় এন্ড্রু কিশোর বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সেসব কথা। এন্ড্রু কিশোরের অসাধারণ কণ্ঠ এবং গায়কীতে মুগ্ধ হয়েছিলেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান সুরকার ও সংগীত পরিচালক রাহুল দেববর্মন (আর ডি বর্মন)। শুধু তাই নয়, তিনি এন্ড্রু কিশোরকে বলিউডে নিয়মিত গান গাওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ো।
আর ডি বর্মনের সুরে ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া হিন্দি সিনেমা ‘শত্রু’র গানে কণ্ঠ দেন এন্ড্রু কিশোর। তার গাওয়া ‘ম্যায় তেরা বিসমিল হুঁ’, ‘সুরজ চান্দা সাগর পর্বত’ শিরোনামে দুটি গান শ্রোতারা লুফে নিয়েছিলেন। সিনেমাটি বাংলায়ও মুক্তি পেয়েছিল ‘বিরোধ’ নামে।
এক সাক্ষাৎকারে বলিউডে গান গাওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেন এন্ড্রু কিশোর। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ‘শত্রু’ ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন মুম্বাইয়ের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রমোদ চক্রবর্তী। এই সিনেমায় গাওয়ার স্মৃতিচারণ করে কিশোর বলেছিলেন, গানের রেকর্ডিং শেষ করে ফেরার সময় বিদায় নিতে যান আর ডি বর্মনের কাছে। আর ডি বর্মন এন্ড্রু কিশোরকে বলেছিলেন, ‘ঢাকাইয়া, তুই হয়তো ভাবছিস, মাঝেমধ্যে ডাকব, গাওয়াব। কিন্তু আমাদের দেশাত্মবোধটা খুব বেশি। কিছু করতে চাইলে এখানে থাকতে হবে। তুই থেকে যা। বিয়ে-শাদি করিসনি। সে ব্যবস্থাও আমি করে দেব।’
এন্ড্রু কিশোর বলেছিলেন, ‘দাদা, আমার দেশেই আমি অনেক ভালো আছি।’ এ কথা শুনে বর্মন রীতিমতো বিস্মিত। অনেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েও বলিউডে একটু জায়গা করে নিতে হিমশিম খান, সেখানে এমন লোভনীয় প্রস্তাবও বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিলো ঢাকার এক তরুণ!
এন্ড্রু কিশোর ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমার ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই’ গান দিয়ে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু করেন। এরপর তার গাওয়া ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। ক্যারিয়ারে তিনি প্রায় ১৫ হাজার গান গেয়েছেন। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেছেন এই শিল্পী।
সংগীত জীবনের সিংহভাগ সময় সিনেমার গান গেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। চলচ্চিত্রের গানের ব্যস্ততার কারণে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে খুব একটা সময় দিতে পারেননি তিনি। তবে যে কয়টি অ্যালাবামে গান গেয়েছেন, সবগুলোই শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। শুধু সিনেমার গান কিংবা অডিও অঙ্গনে নয়, তিনি দেশ-বিদেশের স্টেজে গান গেয়েও দর্শক মাতিয়েছেন।
এমএমএফ/আরএমডি/এমআইএইচএস