ভারতের ফিল্ম বাজার
২৩ দেশের ১৮০ সিনেমা থেকে নির্বাচিত বাংলাদেশের ২টি
ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়ার (আইএফএফআই) বাণিজ্যিক শাখা ফিল্ম বাজার দক্ষিণ এশিয়ার সিনেমার নির্মাতা ও প্রযোজকদের জন্য জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম। প্রতি বছর এই মার্কেটের মাধ্যমে অনেক সিনেমাই আন্তর্জাতিক সহ-প্রযোজক ও শৈল্পিক সহযোগী খুঁজে পায়। আন্তর্জাতিক পরিবেশক ও বিভিন্ন উৎসবের প্রোগ্রামারদেরও নজর থাকে এই বাজারে আসা সিনেমা প্রকল্পগুলোর ওপর।
ফিল্ম বাজারের উদ্যোক্তা ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা এনএফডিসি। এখানে সেরা তিনটি প্রকল্প পায় নগদ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, যা প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
সম্প্রতি ফিল্ম বাজার নির্বাচিত সিনেমার তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় বিশ্বের সাতটি দেশের ২১ সিনেমা নির্বাচিত হয়েছে। ভারতের বিখ্যাত ‘বাহুবলী’ সিনেমার প্রযোজকের একটি প্রকল্পের চিত্রনাট্য বাছাই হয়েছে এবার। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে জায়গা পেয়েছে দুটি সিনেমার চিত্রনাট্য। সেগুলো হলো ‘রইদ’ ও ‘ডিভাইন কর্ডস’। ‘রইদ’ সিনেমাটি নির্মাণ করবেন মেজবাউর রহমান সুমন। প্রযোজক হিসেবে আছেন তানভীর হোসেন, শিমুল চন্দ্র বিশ্বাস। একজন একাকী পুরুষের পাগল নারীকে বিয়ের পর চক্রকারে ঘটতে থাকা রহস্যময় এক গল্পে সিনেমাটি নির্মিত হবে।
অন্যদিকে ‘ডিভাইন কর্ডস’ নির্মাণ করবেন তালাত আহমেদ। এর প্রযোজক হিসেবে দেখা গেছে আদনান ইমতিয়াজ আহমেদ ও জোনাকি ভট্টাচার্যের নাম। একটি মেকানিক এবং দাসীর অভিজ্ঞতা ভালো জীবনের সাথে সংক্ষিপ্ত মুখোমুখি হয়।
৫৫তম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া অনুষ্ঠিত হবে ২০-২৮ নভেম্বর। তারই অংশ হিসেবে গোয়া ম্যারিয়ট রিসোর্টে আগামী ২০ নভেম্বর বসবে ফিল্ম বাজার মার্কেটের ১৮তম আসর। চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।
এবার বাজারটির জন্য ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং হংকংয়ের মোট ২৯টি প্রকল্পকে বাছাই করা হয়েছে। যার মধ্যে ২১টি ফিচার ফিল্ম এবং ৮টি রয়েছে স্ট্রিমিং সিরিজ।
বিশ্বের ২৩টি দেশের ১৮০টি ফিচার ফিল্ম থেকে ২১টিকে বাছাই করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো হিন্দি, ইংরেজি, অসমীয়া, তামিল, মারোয়ারি, বাংলা, মালয়ালাম, পাঞ্জাবি, নেপালি, মারাঠি, পাহাড়ি এবং ক্যান্টনিজসহ একটি ভাষাগত উৎসবের প্রকাশ করে।
যেভাবে অনুদান পাওয়া যায়
প্রথমেই সংশ্লিষ্ট নিয়ম মেনে চিত্রনাট্য জমা দিতে হয়। সেটি নির্বাচিত হলে প্রযোজকদের কাছে সিনেমাটির গল্প ও নির্মাণ পরিকল্পনা জানিয়ে পিচ করতে হবে। প্রযোজকেরা সন্তুষ্ট হলেই সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত হন। শুধু প্রযোজক বা ডিস্ট্রিবিউটর পাওয়া নয়, ফিল্ম বাজারের সিনেমাগুলো বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবেও সুযোগ পায়। এইসব সিনেমাগুলোকে আন্তর্জাতিকীকরণে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে ফিল্ম বাজার সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সাল থেকে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা এনএফডিসির আয়োজনে ফিল্ম বাজারের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য প্রকল্প আন্তর্জাতিক প্রযোজকদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। ২০১০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল ও ভুটানের প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করতে কো-প্রোডাকশন মার্কেট প্রসারিত করা হয়।
ফিল্ম বাজারে বাংলাদেশের নির্মাতাদের মধ্যে ২০১০ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ ও গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের ‘টিউন অব সাইলেন্স’, ২০১১ সালে রুবাইয়াত হোসেনের ‘ডায়েরি অব অ্যা হাউজওয়াইফ’, ২০১২ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘বিস্কুট দৌড়’, ২০১৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’, ২০১৬ সালে রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত পরিচালিত ‘নোনাজলের কাব্য’ এবং আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রযোজিত ‘অপদার্থ’, ২০১৭ সালে তানিম রহমান অংশুর ‘বাঁধনহীন’ ও অমিত আশরাফের ‘অম্মি’, ২০১৮ সালে রেজওয়ান শাহরিয়া সুমিতের ‘অ্যা নিউ প্রফেট’, ২০১৯ সালে মাহদী হাসানের ‘স্যান্ড সিটি’ এবং আরিফুর রহমান ও বিজন ইমতিয়াজ প্রযোজিত ‘একা’, ২০২০ সালে নুহাশ হুমায়ূনের ‘মুভিং বাংলাদেশ’, ২০২১ সালে মাকসুদ হোসাইনের ‘সাফা’ ও তানহা জাফরীনের ‘জলছবি’ আর গত বছর নির্বাচিত হয় গোলাম মোন্তাকিমের ‘খেকশিয়াল’ ও মাকসুদ হোসাইনের ‘রায়াস ওয়েডিং’।
এলএ/এমএস