মারা গেছেন জামালউদ্দিন হোসেন
টেলিভিশন ও মঞ্চনাটকের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা জামালউদ্দিন হোসেন আর নেই। গতকাল শুক্রবার কানাডার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় মারা গেছেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। আজ শনিবার বাদ জোহর জামালউদ্দিন হোসেনকে দাফন করা হবে।
জামালউদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় মেয়ের কাছে ছিলেন। সেখান থেকে কানাডার ক্যালগিরিতে ছেলে তাশফিন হোসেনের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রবীণ এই অভিনেতা। হাসপাতালে নেওয়া হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা জানান মূত্রনালী সংক্রমণ। একপর্যায়ে চিকিৎসকেরা এও জানান, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যহত হচ্ছিল বলে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। তিন সপ্তাহ ধরে তিনি কানাডার ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
পরিবারের সঙ্গে জামালউদ্দিন হোসেন
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন জামালউদ্দিন হোসেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এই সদস্য পরে টেলিভিশন নাটক এবং চলচ্চিত্রেও কাজ করেন। তবে গত ১৫ বছর তাকে মঞ্চ, টেলিভিশন বা বড়পর্দায় তেমন দেখা যায়নি। এই সময়ে তিনি নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন। দেশে এলে মাঝেমধ্যে নাটকে অভিনয় করতেন। শেষ সাত বছর বলা চলে প্রায় স্থায়ীভাবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মেয়ের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন।
জামালউদ্দিন হোসেন ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে শুরু করেন নিজের নাট্যদল নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল। তিনি ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেতার টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জামালউদ্দিন। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘রাজা রানী’, ‘চাঁদ বণিকের পালা’, ‘আমি নই’, ‘বিবি সাহেব’, ‘যুগলবন্দী’-এর মতো আলোচিত কয়েকটি মঞ্চনাটকের নির্দেশক ছিলেন এই গুনী নাট্যজন।
১৯৪৩ সালের ৮ অক্টোবর ভারতের চব্বিশ পরগনায় জন্মগ্রহণ করে জামালউদ্দিন হোসেন। দেশভাগের সময় পরিবারের সবাই চট্টগ্রামে আসেন। ওখানেই বসবাস শুরু করেন। জামালউদ্দিন হোসেনের স্কুলে কেটেছে চট্টগ্রামের সেন্ট প্ল্যাসিড স্কুলে। এরপর চট্টগ্রাম কলেজে এইচএসসি শেষ করে তিনি বুয়েটে ভর্তি হন। বুয়েটের শিক্ষাজীবন শেষে তিনি চট্টগ্রাম স্টিল মিলসে চাকরি শুরু করেন। এরপর আস্তে আস্তে অভিনয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৩ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
১৯৭৫ সালে জামালউদ্দিন হোসেন ও অভিনেত্রী রওশন আরা বিয়ে করেন। তারা দুজনই নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের শিল্পী ছিলেন, সেখানেই তাদের পরিচয়। জামালউদ্দিন হোসেনের ছেলে তাশফিন হোসেন কানাডার মাউন্ট রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, মেয়ে পরিবার নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। জামালউদ্দিন হোসেনের স্ত্রী অভিনেত্রী রওশন আরা হোসেনের শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়।
আরএমডি/জিকেএস