এসিডদগ্ধ স্ত্রীর কাছে যৌতুক চেয়ে অভিনেতা গ্রেফতার

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩৪ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
রাসেল মিয়া

এসিডদগ্ধ সুমাইয়া আফরিন বর্ষার (৩০) তৃতীয় স্বামী ‘পাপ মুক্ত’ সিনেমার অভিনেতা রাসেল মিয়া। ৬৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে মারধর করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় মামলা করেছেন বর্ষা। ফেসবুকে একটি লাইভে আত্মপক্ষ সমর্থণ করে স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন রাসেল। রাজধানীর সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিন আলী রাসেলকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাসেল মিয়াকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

চলতি বছরের ১৬ মার্চ বিয়ে করেন বর্ষা ও রাসেল। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘বিয়ের পর আমি আমার ভবিষ্যৎ সুখের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সময় বিবাদীকে প্রায় ৫ লাখ টাকা নগদ দেই। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে বিবাদীর লোভ আরও বেড়ে যায় এবং সে নতুন সিনেমা তৈরি করবে বলে প্রায়ই আমার নিকট যৌতুক বাবদ ৬৫ লাখ টাকা দাবি করে। আর যৌতুকের টাকা না দিলে দ্বিতীয় বিবাহ করবে বলে আমাকে হুমকি দেয়। এতে আমি অপারগতা প্রকাশ করলে প্রায় সময়ই যৌতুকের দাবিতে আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।’

এসিডদগ্ধ স্ত্রীর কাছে যৌতুক চেয়ে অভিনেতা গ্রেফতারসুমাইয়া আফরিন বর্ষা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

এজাহারে সুমাইয়া আফরিন আরও জানিয়েছেন, ‘আমি ভবিষ্যৎ সুখের আশায় বিবাদীর নির্যাতন সহ্য করে ঘরসংসার করতে থাকি। এমতাবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বিবাদী বাসায় আমার নিকট যৌতুক বাবদ ৬৫ লাখ টাকা দাবি করে। এতে আমি অপারগতা প্রকাশ করায় সে আমাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে।এ সময় আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন আমাকে উদ্ধার করার পর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করায়।’ গত রাতে ফেসবুক লাইভে রাসেল মিয়ার নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুমাইয়া আফরিন বর্ষা। ওই লাইভে তিনি দাবি করেন, বিয়ের তিন দিন পর থেকেই রাসেল মিয়া যৌতুকের দাবিতে তার ওপর নির্যাতন শুরু করেন।’

বর্ষার লাইভের পর রাসেল মিয়াও ফেসবুকে আত্মপক্ষ সমর্থণ করে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ভ্যারিফাইড পেজে বর্ষার সঙ্গে বিয়ে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিল্পী সমিতির প্যানেল পরিচিতির সময় তাকে প্রথম দেখি। এসিডদগ্ধ হওয়ায় তার জন্য আমার মায়া হয়। ফেসবুক আইডি নিয়ে আমরা আলাপ শুরু করি। পরে তিনি আমাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমি তাকে জানার চেষ্টা করি। দেখি, তিনি বিবাহিত, দুই সংসারে তার দুটো সন্তান আছে। সেই থেকে আমি তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করি। আমার “গোয়ার” ছবির শুটিং চলাকালে তিনি নিয়মিত শুটিং সেটে যেতেন। আমি তাকে যোগাযোগ করতে নিষেধ করার পর একদিন হাত কেটে রক্তাক্ত করে আমাকে বলে, “চ্যাটিং করেছেন, বিয়ে না করলে সুইসাইড করব।” বুঝিয়ে-শুনিয়ে সেদিন তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিই। গত ১৫ তারিখ শুটিং স্পটেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। সবাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্ষা আমাকে সেখানে চিকিৎসা করিয়ে যাত্রাবাড়ি নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। সে ও তার ভাইয়েরা আমার সেবা করে। পরদিন ১৬ তারিখ বলে, বিয়ে। জোর করে গায়ে হলুদ করে। আমি ‘না’ করিনি। কারণ অসুস্থ অবস্থায় আমাকে সেবা করেছে।’

এসিডদগ্ধ স্ত্রীর কাছে যৌতুক চেয়ে অভিনেতা গ্রেফতারসিনেমার দৃশ্যে রাসেল মিয়া ও মিশা সওদাগর

ওই ভিডিওতে রাসেল সামনে কোরান শরীফ রেখে তা স্পর্শ করে নিজের অবস্থার বিবরণ দেন এবং যৌতুক দাবি করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তার কাছে টাকা চাইনি। আমি উল্টো তাকে নগদ দেড় লাখ টাকা দিয়েছি। ফোন কিনে দিয়েছি পরিবারের তিন-চার সদস্যকে। আমি তার সন্তানের জন্মদিন পালন করেছি। নিজে বাজার করে এনে তার সাবেক স্বামীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছি। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তাদের পেছনে আমি ৬ লাখ টাকা খরচ করেছি। তার কাছ থেকে ১ টাকাও নিইনি।’

নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে রাসেল বলেন, ‘আমি যদি বছরের পর বছর জেলে থাকি, আমাকে দেখতে যাওয়ার কেউ নাই। তার সবাই আছে। তার বিশাল আত্মীয় গোষ্ঠী আছে পুরাণ ঢাকায়। কে অসহায়? আমি নাকি সে? অথচ একটা অসহায় মেয়ে ভেবে তাকে আমি বিয়ে করেছিলাম। আমার জীবনের দুর্ঘটনা ছিল, তাকে বিয়ে করে তার সন্তানদের পাশে থেকে একটা ভালো কাজ করতে চেয়েছি। ভেবেছি কতদিন আর বাঁচবো? অথচ তাকে বিয়ে করে আমি অসহায় হয়ে গেছি। মামলা করা তার অভ্যাস। আমার জীবন আমার ক্যারিয়ার সে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার কেউ ছিল না, কষ্ট করে আজকের অবস্থানে এসেছি। একটা নাটক রিলিজ হচ্ছে, এ রকম একটা সময়ে আমাকে মানুষের কাছে খারাপ করে দিল। লাইভে সে যা বলেছে, সব মিথ্যা বলেছে। আমাকে সে টর্চার করেছে। জীবনে যা আয় করেছি, মাদ্রাসায় ও মানুষকে দান করেছি। নিজের জন্য কিছু রাখিনি।’

এসিডদগ্ধ স্ত্রীর কাছে যৌতুক চেয়ে অভিনেতা গ্রেফতারবর্ষা ও রাসেলের বিয়ের ছবি। সংগৃহীত

২০২২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ভাইয়ারে’ নামে একটি সিনেমা। যেখানে নায়ক ও পরিচালকের ভূমিকায় ছিলেন রাসেল মিয়া। সেসময় রাসেলের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে শোরগোল সৃষ্টি হয়। মুক্তির পর এই নায়ক নিজ সিনেমাকে ‘পাপমুক্ত’ সিনেমা বলে ঘোষণা দেন। এ ছাড়া ‘ভাইয়ারে’ সিনেমাটি দেখলে অজু ভাঙবে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন রাসেল মিয়া। গত ১৮ এপ্রিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে বর্ষার সঙ্গে পরিচয় হয় রাসেল মিয়ার।

এমআই/আরএমডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।