মঞ্চনাটকে নভেরা আহমেদ
কিংবদন্তি ভাস্কর নভেরা আহমেদ। বাংলাদেশের ভাস্কর্যশিল্পের অগ্রদূত এবং শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার তিনি। অভিমান নিয়ে দীর্ঘ ৪২ বছর প্রবাসে নিভৃতচারীর জীবন কাটিয়েছেন। অবশেষে গেল বছরের ৫ মে প্যারিসে নিজ বাসায় ৭৬ বছর বয়সে মারা যান এই শিল্পী।
তার অনেক কিছুই অজানা নতুন প্রজন্মের কাছে। পুরনো প্রজন্মও যে তাকে নিয়ে খুব একটা চর্চা করেছেন তাও নয়। তবে সময় বদলায়। অনেক নিভৃতচারীই ফিরে আসেন কালের মহামানব হয়ে। তেমনি ফিরে এসেছেন নভেরা আহমেদ। তার জীবন ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে মঞ্চে আসছে নতুন নাটক ‘নভেরা’।
সাজ্জাদ রাজীবের নির্দেশনায় মহান এই শিল্পীর জীবন সংগ্রামের গল্প একক অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলবেন ঢাকা থিয়েটারের নাট্যকর্মী ও ‘ধ্রুপদী অ্যাক্টিং অ্যান্ড ডিজাইন’র পরিচালক সামিউন জাহান দোলা।
হাসনাত আবদুল হাইয়ের লেখা ‘নভেরা’ এবং বেঙ্গল প্রকাশনীর ‘নভেরা আহমেদ’সহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন, গবেষণা, সাক্ষাৎকার এবং নিবন্ধ থেকে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন অভিনেত্রী দোলা নিজেই।
চলতি মাসেই নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে জানালেন তিনি। তার আগে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নাটকটির কারিগরি মঞ্চায়ন হবে।
তিনি বললেন, নাটকের প্রেক্ষাপট ১৯৪৫ সাল থেকে নভেরার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। নাটকের শুরু একটি কবিতা থেকে। যেখানে একটি ভ্রূণ মাত্র এ পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করে। নাটকটির গবেষণাকর্মে সাহায্য করেছেন সুরভি রয়। বিশ্বভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার আবহ ফোটানোর ধারণায় সংগীত পরিচালনা করেছেন কেয়া চৌধুরী জুঁই। আলোক পরিকল্পনা করেছেন ওয়াসিম আহমেদ।
সামিউন জাহান দোলা বলেন, ‘কোনো প্রাপ্তি বা স্বীকৃতির আশা ব্যতিরেকে প্যারিসে জীবনভর তিনি কাজ করে গেছেন। তার সে রকম চারটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর কথা যেমন নাটকে আছে, তেমনি একজন মানুষ কীভাবে নিরলস চেষ্টা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শিল্পী হয়ে ওঠেন, তার সে অবিরাম যাত্রা এ নাটকে প্রতীয়মান। একজন শিল্পী হিসেবে ভাস্কর নভেরাকে সবাই চিনুক, তার সৃষ্টি ও প্রচেষ্টা যুগান্তরের সাক্ষী হয়ে থাকুক, এটাই আমাদের চাওয়া।’
প্রায় ৪২ বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা বাংলাদেশি এই ভাস্কর্যশিল্পীর ১৯৯৬ সালে খোঁজ পান প্যারিসে বসবাসকারী শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমদ ও আনা ইসলাম।
এর আগে নভেরা আহমেদের একমাত্র সাথী ছিলেন তার স্বামী গ্রেগোয়া দ্য ব্রন্স। তার খুব ইচ্ছা ছিল দেশের জন্য বিশেষ করে নারী যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য বড় এক স্মৃতিস্তম্ভের নকশা করার। এছাড়া কয়েকজনের অনুরোধে তিনি রাজি হয়েছিলেন দেশে গিয়ে শহীদ মিনারের সিঁড়িতে বসে ছবি আঁকবেন। কিন্তু তার সেই ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি। তার আগেই তাকে চলে যেতে হলো আর না ফেরার দেশে।
এলএ/এবিএস