জন্মদিন

খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার, ছিলেন বিজ্ঞাপনী সংস্থার চাকুরে

বিনোদন ডেস্ক
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:১৭ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২৪

একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় ক্রিয়েটিভ কপিরাইটার বিভাগের চাকুরে ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। তখনকার দিনে বিজ্ঞাপনের ভাষা সরাসরি ইংরেজি বা হিন্দি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দেওয়া হতো। কিন্তু ১৯৮০ সালের দিকে সরাসরি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞাপন তৈরি করা শুরু করেন ঋতু। বাংলার মানুষকে সেটা স্পর্শ করে। অবধারিতভাবে সফল হয়েছিল তার সে উদ্যোগ। সে কথা আজ আর কেউ মনে রাখেনি। মনে রেখেছে খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষকে। আজ তার ৬২তম জন্মদিন।

ভারতীয় উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্রে উজ্জ্বল এক ব্যক্তিত্ব ঋতু। চলচ্চিত্রে তিনি বলেছেন মানুষের বোধ ও ভাবনার গল্প। সেসব গল্প মানবিক জগতকে আন্দোলিত করেছে যেমন, তেমনি প্রথাগত অনেক ট্যাবু ভেঙে দিয়েছে। ‘অন্তরমহল’, ‘খেলা’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘দোসর’, ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’, ‘আবহমান’ তার সাক্ষী।

ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্ম ভারতের পশ্চিমঙ্গের কলকাতায়। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং চিত্রশিল্পী। ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। বাবা সিনেমার লোক বলে শৈশব থেকেই সিনেমার প্রতি ঝোঁক ছিল। ১৯৯০ সালে প্রথম দূরদর্শনের জন্যে বানান তথ্যচিত্র। সেই থেকে হল শুরু।

ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত প্রথম সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৯২ সালে, ‘হীরের আংটি’। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রযোজনা করেছিল। ছবিতে বসন্ত চৌধুরী, শকুন্তলা বড়ুয়া, মুনমুন সেন, সুনীল মুখোপাধ্যায় আরও অনেকে অভিনয় করেছিলেন। দ্বিতীয় ছবি ‘উনিশে এপ্রিল’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। এই সিনেমা দুটি জাতীয় পুরস্কার পেয়ে যায়, যার একটি বর্ষসেরা সিনেমা হিসেবে। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী রায়, দীপঙ্কর দে প্রমুখ। তারপর একের পর এক নির্মাণ, নিয়ম ভাঙা ও প্রশংসা কুড়ানোর ইতিহাস। ১৯৯৭ সালে ‘দহন’, ১৯৯৯ সালে ‘অসুখ’, ২০০০ সালে ‘বাড়িওয়ালি’ ও ‘উৎসব’, ২০০২ সালে ‘তিতলি’, ২০০৩ সালে ‘দ্য মিরর ক্র্যাকড ফ্রম সাইড টু সাইড’ অবলম্বনে ‘শুভ মহরৎ’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে ‘চোখের বালি’।

২০০৪ সালে প্রথম হিন্দি ছবি করলেন ঋতু, ‘রেনকোট’। ও হেনরির ছোটোগল্প অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি সে বছর সেরা হিন্দি সিনেমা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার জিতলো। এ ছাড়াও ‘অন্তরমহল’, ‘খেলা’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘দোসর’, ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’, ‘আবহমান’ নামগুলো যোগ হল বাংলা সিনেমার ইতিহাসের খাতায়। সবশেষে এলো ‘চিত্রাঙ্গদা’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রাঙ্গদার কাঠামো অবলম্বনে বানানো হল বড়পর্দার চিত্রাঙ্গদা। এ ছবি ভারতের ৬০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়ে যায়।

দুই দশকের কর্মজীবনে ১২টি জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। অন্যদিকে বাঙালি দর্শকের রুচি গঠনে, ভিন্নতা দেখার মন গড়তে অবদান রেখেছিল তার ছবিগুলো। ২০১৩ সালে হঠাৎ চলে না গেলে তার থেকে হয়তো আরও কিছু পেতো সিনেমা জগত। সে বছরের ৩০ মে কলকাতার বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৯ বছর বয়সে মারা যান ঋতুপর্ণ ঘোষ। এত দ্রুত হয়তো তাকে মরতে হতো না। কিন্তু শরীরকে নারীতে রূপান্তর করতে গিয়ে অসুস্থতা বেড়ে যায়। আগে থেকেই ছিল অনিদ্রা, ১০ বছর ভুগেছেন ডায়াবেটিস এবং পাঁচ বছর অগ্ন্যাশয়ের রোগে। এত চাপ নিতে পারেনি মেধাবী মানুষটির শরীর।

রূপান্তরকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য ঋতুপর্ণ ঘোষ একটি শক্তির নাম। তাই তার জন্মবার্ষিকীতে তাকে উৎসর্গ করে কলকাতার রূপান্তরকামী নৃত্যশিল্পী মেঘ সায়ন্তনী ও তার দল ‘রুদ্রপলাশ’ একটি বিশেষ প্রযোজনা প্রস্তুত করেছে। তাতে প্রয়াত এই চলচ্চিত্রকারের সিনেমার ১০টি কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রকে শিল্পীরা তুলে ধরবেন। এ ছাড়া কলকাতার আরজি কাণ্ডের প্রতিবাদেও তুলে ধরা হবে সেই প্রযোজনা। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার জ্ঞান মঞ্চে দেখা যাবে ওই নৃত্য প্রযোজনা। সে প্রসঙ্গে কলকাতার গণমাধ্যমে সায়ন্তনী বলেন, ‘প্রতিবাদ কখনও থেমে থাকে না। ধারণা বদলায়, সময় বদলায়। কিন্তু প্রতিবাদ এগিয়ে চলে। সেটা ভেবেই আমাদের অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছি, ‘নূতন প্রাণ দাও।’

এলএ/আরএমডি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।