‘আধিপত্যের শিকার’ হয়েছি: ন্যানসি

বিনোদন ডেস্ক
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:০৬ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২৪
নাজমুন মুনিরা ন্যানসি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন নির্যাতিত নিপীড়িত বহু মানুষ। সেই দলে আছেন শিল্পীরাও। সম্প্রতি কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যানসিও জানালেন কিছু চ্যানেলের আধিপত্যের শিকার হয়েছেন তিনি।

একটি টিভি চ্যানেলের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল (২০ আগস্ট) ফেসবুকে একটি পোস্ট লিখেছেন ন্যানসি। সেখানে কিছু টিভি চ্যানেলের মালিকানা ও পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন দাবি করেছেন তিনি। গান বাংলা চ্যানেলকে ‘প্রাণ বাংলা’ লিখে চ্যানেলটির ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই কণ্ঠশিল্পী।

ন্যানসি লিখেছেন, ‘এই দেশে প্রাণ বাংলা নামে একটি গানের চ্যানেল ছিল। চ্যানেলটিতে সাদা পোশাক পরা স্বয়ং তানসেন ছিল। তানসেনের একজন বৌ ছিল। চ্যানেলটির গৃহপালিত অনেক শিল্পী ছিল। বৌটি সেসব শিল্পীর প্রিয় ভাবি ছিল। চ্যানেলটিতে এত বেশি শিল্পচর্চা হতো যে, সেখানে রাতভর সংগীত বিষয়ে গবেষণা হতো, সেটা আবার জাতি সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে লাইভে দেখতে এবং শুনতে পেতো।’

নাজমুন মুনিরা ন্যানসি। ছবি: শিল্পীর ফেসবুক থেকেনাজমুন মুনিরা ন্যানসি। ছবি: শিল্পীর ফেসবুক থেকে

গান বাংলা চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপসের ব্যান্ড তাপস অ্যান্ড ফ্রেন্ডসকে কটাক্ষ করে ন্যানসি লিখেছেন, ‘তানসেন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস বছরজুড়ে হেলিকপ্টারে চড়ে বাংলার আনাচে কানাচে জয়বাংলা কনসার্ট করে দর্শক মাতিয়ে রাখায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তানসেনের খালি কণ্ঠে গাওয়া ‘দে তালি বাঙালি’ গানে ‘পালায় না’ বলেও ভারতে পালিয়ে যাওয়া নেত্রী হাসিমুখে হাততালি দিয়েছেন। নেত্রীর অনুসারীগণ বিভিন্ন উপলক্ষে প্রায়শই কালো রং করা চ্যানেলটিতে গিয়ে নিজেদের জং ধরা কণ্ঠ ঝালাই দিতেন এবং বাহবা কুড়াতেন।’

চ্যানেলটির রিমেক গানের আয়োজন উইন্ড অব চেঞ্জ-এর প্রশংসা করে তিনি লিখেছেন, ‘বিদেশ থেকে একঝাঁক যন্ত্রশিল্পী এনে দেশীয় শিল্পীদের মেলবন্ধনে ‘দিনবদলের হাওয়া’ নামে একটি নিয়মিত অনুষ্ঠান তানসেন এবং তানসেন পরিবারের ভাবী জাতিকে উপহার দিয়েছে। নতুন আঙ্গিকে পুরাতন গানগুলোর পরিবেশনা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু প্রতি গানে অযাচিত তানসেনের উপস্থিতি দর্শকমনে প্রচন্ড বিরক্তির উদ্রেগ করেছে। তানসেন এবং তার স্ত্রী চ্যানেলের নিয়মিত অনুষ্ঠানের বাইরেও পারিবারিক জমকালো অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এত অর্থের জোগান কোথা থেকে পান, আমাদের অবুঝ মনে সেইসব সবুজ প্রশ্ন প্রায়শই জেগে ওঠে।’

সম্প্রতি বেশ কিছু টিভি চ্যানেলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কিছু চ্যানেল বন্ধ করার দাবি উঠেছে। সেসবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ন্যানসি লেখেন, ‘এখন কিছু টিভি চ্যানেল বন্ধের জোর দাবি উঠছে। বিগত সময়ে আমি বা আমরা বিতর্কিত কিছু চ্যানেলের আধিপত্যর শিকার হয়েছি। তবুও আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো টিভি চ্যানেল বন্ধের পক্ষে না। বরং প্রশ্নবিদ্ধ চ্যানেলগুলোর মালিকানা এবং পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হোক। কেননা বিগত সরকারের সময়ে অনেক চ্যানেলে মালিকপক্ষ মালিকানা হস্তান্তর, এমনকি অনেকে জোরপূর্বক নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। শোনা যায় ‘প্রাণ বাংলা’ নামের বাংলাদেশের একমাত্র গানের চ্যানেলটি প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে দখল করে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করি। চ্যানেলগুলো হতে হবে সরকারের চাটুকারিতা এবং রাজনীতির বলয় মুক্ত।’

নাজমুন মুনিরা ন্যানসি। ছবি: শিল্পীর ফেসবুক থেকেনাজমুন মুনিরা ন্যানসি। ছবি: শিল্পীর ফেসবুক থেকে

বর্তমান বিটিভির প্রশংসা করে ন্যানসি লিখেছেন, ‘বিটিভির জন্য যারা কেঁদে আকুল হয়েছিলেন, তারা আগামী কিছুদিন অন্তত বিটিভি দেখুন। “এমন দেশ কি আদৌ চেয়েছিলাম” না জপে, “বিটিভির প্রচারমান এত স্বল্প সময়ে এত উন্নত হলো কি করে” এই কথা জপুন।’

বহু জনপ্রিয় গানের শিল্পী ন্যানসি দীর্ঘদিন কোনঠাসা। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাকে। ২০১৩ সালের ২১ অক্টোবর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান জানান দেন এই শিল্পী। সেখানে বিএনপির প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার প্রশংসা করেন তিনি। তারপরই তার বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তার দাবী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন স্টেজ শো থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এই শিল্পী।

নাজমুন মুনিরা ন্যানসি। ছবি: শিল্পীর ফেসবুক থেকেনাজমুন মুনিরা ন্যানসি। ছবি: শিল্পীর ফেসবুক থেকে

বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের শিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যানসি। তপুর সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে তার গাওয়া ‘সোনার মেয়ে তোমায় দিলাম ভুবনডাঙার হাসি’ বিপুল শ্রোতাপ্রিয় একটি গান। ‘প্রজাপতি’ ছবির গানে কণ্ঠ দিয়ে ২০১১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী।

আরএমডি/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।