শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হন মিস আয়ারল্যান্ড প্রিয়তি


প্রকাশিত: ০৮:১৫ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মিস আয়ারল্যান্ড ও মিস আর্থ সুন্দরী মাকসুদা আকতার প্রিয়তী শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হন। তখন প্রিয়তির বয়স ছিল মাত্র চার বছর। সে সময় তাদের বাসার কাজের মেয়ের কাছেই তিনি এই লাঞ্ছনার শিকার হন।

এছাড়া চার থেকে সাত বছরের মধ্যে প্রিয়তি তার আত্মীয়-স্বজন, খেলার সাথী, বন্ধুদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন পাঁচ-ছয় বার। এমনটাই জানা গেল শনিবার সকালে প্রিয়তির নিজস্ব ফেসবুক থেকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাস থেকে।

মূলত এই মিস আয়ারল্যান্ডের পরিচিত এক ১২ বছরের নাবালিকা নিজের মামার দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন। আর তাতেই প্রিয়তির শৈশবের সেই লাঞ্ছনার কথা মনে পড়ে যায়। এতে করে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এই স্ট্যাটাসটি দেন।

প্রিয়তি মনে করেন, এ ব্যাপারে সকলের আরো সচেতন হওয়া প্রযোজন। একই সঙ্গে এমন বর্বর নিপীড়ন একটি শিশুর সুন্দর আগামী বির্নিমাণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

প্রিয়তির দেওয়া স্ট্যাটাসটি জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো...

চার বছর বয়সী একটা বাচ্চা যখন Sexually abused (যৌন নিপীড়ন) হয়, যখন সে বুঝেই না অ্যাবিউজিং কি, আর যখন বুঝে তখন থেকে সারা জীবন কি ধরনের Trauma (মানসিক আঘাত) এর মধ্যে থাকতে পারে তার ধারণা আমার আছে, কেননা সেই মেয়েটি আমি , আপনাদের মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল। হ্যাঁ, চার বছর বয়সে প্রথম বাসার কাজের মেয়ের কাছে Sexually abused হই। খেলতে দিবে না বলে মাকে কখনো বলিনি, আর তখন বুঝিনি। আমার বয়স চার থেকে খুব সম্ভত সাত বছরের মধ্যে Sexually abused হয়েছি ৫/৬ বার । কখনো পাশের বাসার খেলার সাথী ভাইয়ের কাছে, কোন দিন ভাইয়ের সামনে ডাক্তার সাহেব পর্দার আড়ালে, কোনদিন গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এক সাথে সব বাচ্চাদের ঘুমাতে গিয়ে নিজের কাজিন এর কাছে। কথা হচ্ছে, কথা গুলো কখনো মা এর সাথে শেয়ার করিনি যদি আমাকে আর খেলতে না দেয়। যদি কোন দিন গ্রামের বাড়ি তে না যেতে দেয়? যদি উল্টা আমাকে বকা দেয়? বুঝ হওয়ার পর থেকে ভাবতাম এতোটুকুন বাচ্চা মেয়ে ছিলাম আর তার সাথে কত কিছুই না হয়ে গেলো। আজ কেন বলছি? গতকাল আমার এক পরিচিত ১২ বছরের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে তার নিজ মামা এর কাছে Sexually abused হয়ে। তার মাকে সে বলেছিল, মা বিশ্বাস করেনি আর বলেছে চুপ করে থাকতে। কিন্তু আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। বিশ বছর আগে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো অনেক পুরনো কিন্তু এই বিশ বছরে জাতি আরও সভ্য হওয়ার কথা কিন্তু দিন দিন ব্যাপার গুলো বাড়ছে আর হয়ে যাচ্ছে আরও অসভ্য এবং অসুস্থ। বাড়ছে প্রতিদিন ধর্ষণ। একটা কথা মাথায় আসতেই আজ Google এ search দিলাম Bangladesh sex toys, সাইট এ গিয়ে দেখি বাচ্চাদের যৌনাঙ্গের sex toy or replica . আমি অবাক ও হলাম আর সাথে ভয়। তার মানে, এই ধরনের মন মানসিকতার মানুষ আমাদের মধ্যেই ভদ্র মানুষ হিসাবে আছে আর তারা সেই মনোবাসনা পোষণ করছেন আর তাই ঐ বাচ্চাদের যৌনাঙ্গের sex toys গুলো বাজারে আছে , আর তার মানে এই গুলোর চাহিদা আছে। আমি বাচ্চাদের বাবা-মা অথবা গার্ডিয়ানদের বলবো, Trust No One । আপনার বাচ্চার সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করুন যাতে সে আপনার সাথে সব কিছু শেয়ার করে। আপনার বাচ্চাকে সর্বদা চোখে চোখে রাখুন। এমনকি কার সাথে খেলছে, কোথায় খেলছে। কারো বাসায় গিয়ে একা গিয়ে খেলতে দিবেন না। প্রয়োজনে আপনি যান আপনার সন্তানের সাথে। কারো কোলে বসতে দিবেন না। আপনারা নিজেদের ভিতর আপনাদের সচেতনতা তৈরি করুন, অন্যদের ও বলুন। আমি এই ব্যাপারটা শুধু ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়া পর্যন্ত শেষ করতে চাইনা। আমি ব্যাপকভাবে সচেতনা বাড়াতে চাই। আর তার জন্য দরকার আপনাদের সহযোগিতা। আমার জানামতে, বাংলাদেশে Child Sexual Abuse এর কোন যথাযোগ্য কোন আইন নাই অথবা শাস্তির বিধান নাই। প্রধানমন্ত্রীর নিকট কিভাবে আবেদন করা যেতে পারে যদি থেকে থাকে তাহলে আমাকে অনুগ্রহ করে জানাবেন। ইউরোপিয়ান দেশে এটা এক প্রকার ক্রাইম। এবং সেখানে এর জন্য শক্ত আইন রয়েছে। আমি জানি দেশে এখন ধর্ষক দেরই ধরা বা শাস্তি হচ্ছে না কিন্তু Child Sexual Abuse যদি কোন আইন না থাকে তাহলে ব্যাপারটা আরও ভয়াবহ। আমি জানি আমার স্ট্যাটাসটি যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো কোন না কোন ভাবে Sexually Abused হয়েছেন, কিন্তু লজ্জায় সমাজের ভয়ে বলছেন না। না বলতে পারলেও অন্তত রুখে দাঁড়ান। সচেতনতা তৈরি করুন, সবাইকে জানান। একটি শিশু কখনো ভোলে না তার ছোট বেলায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা, আমি ভুলিনি। আর যেন না ঘটে তার চেষ্টা করি। কিভাবে রিকভার করা যায় সেই চেষ্টা করি। আমাদের শিশুদের নিরাপদে রাখি।

এনই/এএইচ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।