ভালোবাসার টানেই আবার এক হয়েছি : আরফিন রুমি


প্রকাশিত: ১১:১৯ এএম, ০৫ মার্চ ২০১৬
ছবি : সংগ্রহ

তিনি হালের মিউজিক ক্রেজ। একাধারে সুরকার, সংগীত পরিচালক ও শিল্পী। তবে মিউজিক ভিডিওর মডেল হিসেবেও তার জনপ্রিয়তা আছে। বলছি সংগীত শিল্পী আরফিন রুমির কথা। বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনায় বেশ কয়েকদিন ধরেই ‌‘টক অব দ্যা মিডিয়া’ হয়ে আছেন জনপ্রিয় এই সংগীত তারকা।

তার দ্বিতীয় স্ত্রী কামরুন্নেসার সঙ্গে মিডিয়া পাড়ায় এ খবর প্রকাশের পরপরই উঠেছে নানা ধরণের গুঞ্জন। কিন্তু সব গুঞ্জনকে জলাঞ্জলিতে পাঠিয়ে ভালোবাসার টানেই এই দম্পতি আবারো এক হয়েছেন। আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গান নিয়ে। শুক্রবার রাতে আরফিন রুমি কথা বললেন জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগে...

জাগো নিউজ : কেমন আছেন আপনি?
রুমি : আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে খুব ভালো আছি। এজন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

জাগো নিউজ : শুনলাম আপনার নতুন অ্যালবাম আসছে?
রুমি : ঠিকই শুনেছেন। ‘তোমারই নামে’ শিরোনামের একটি অ্যালবাম আসছে। এতে তিনটি গান থাকবে। একটি আমার সলো, অন্যটি আমার এবং পড়শীর ডুয়েট এবং আরেকটি ক্ষুদে গানরাজ প্রতিযোগিতা থেকে আসা শিল্পী সেনিজ এবং আমার ডুয়েট। এটি শুধু অডিওর ভিতর সীমাবদ্ধ থাকবেনা গানগুলো মিউজিক ভিডিও হিসেবেও প্রকাশ করা হবে। অ্যালবামটির মিউজিক কম্পোজিশন করেছি আমি নিজেই এবং গানের কথাগুলো লিখেছেন ফয়সাল রাব্বিকীন। মুঠোফোনের কলার টিউন হিসেবে ইতোমধ্যেই গানগুলো পাওয়া যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেই সিএমভি-এর ব্যানারে অ্যালবামটি শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাবে।   

জাগো নিউজ : একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে সংগীত বাজারের অবস্থা কেমন দেখছেন?
রুমি : সংগীত বাজারে মন্দার ঘোর অমানিশা- এটা অনেকেই বলে থাকেন। তারা মনে করেন পাইরেসি আর পশ্চিমা সংস্কৃতি এর জন্য বহুলাংশে দায়ি। আমিও তাদের সঙ্গে কিছুটা একমত। তবে ইদানিং মুঠোফোন সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসছে গানের বাজার চাঙ্গা করতে। এটাকে সাধুবাদ জানাই। সকলের বোঝা উচিত সবকিছু টাকা দিয়ে কিনতে হয়, গানটাও এর ব্যতিক্রম নয়। শুধু শিল্পচর্চায় হয় না। আবার শিল্পটাকে বিকিয়ে দিয়ে শুধু টাকার কথা ভাবলেও চলে না। দুটোকেই একসঙ্গে করে শ্রোতাদের ভালো কিছু দিতে পারলে অবশ্যেই ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

Rumi
জাগো নিউজ : আপনি বলছিলেন ‌‘কিছুটা একমত’। তারমানে কিছুটা দ্বিমতও রয়েছে। সেগুলো কী?

রুমি : আমি মানি না যে সংগীতের বেহাল দশা চলছে। প্রচুর গান হচ্ছে তো। প্রচুর লোকজন গান করছেন। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন মুখ আসছে। হয়তো কেউ বেশি ভালো করছেণ, কেউ আবার কেউ একটু খারাপ করছেন। কেউ লগ্নির টাকায় ব্যবসা করছেন অনেক বেশি, কেউ বা একটু কম করছেন। কিন্তু চলতে পারছেন সবাই। এটা তো হতাশার কিছু নয়।

জাগো নিউজ : আজকাল গান নকলের প্রচুর অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেক নামি শিল্পীরাও নকল গান করছেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই...
রুমি : আমি এই কথাটার সাথেও একমত নই। একজন ক্রিকেটার যখন ভালো খেলেন তখন তার ব্যাটিং কিংবা বোলিং স্টাইলটা উদীয়মান বা অন্য যে কোনো খেলোয়াড়ই অনুসরণ করে থাকেন। গেইলের স্টাইলে আজকাল অনেক তারকা ক্রিকেটারই ব্যাটি চালান। এটা দোষের নয়। গানেও এমন হচ্ছে। হয়তো ভিনেদশি একটা গান ভালো লাগলো সেটাকে অনেকেই অনুসরণ করছি। সুর-তাল লয়ের খেলায় এমনটি হতেই পারে। এটা মন্দের কিছু নয়। তাছাড়া গানের ক্ষেত্রে এমন অনুসরণ নতুন কিছুও নয়। বেশ অনেক আগে থেকেই ভিনদেশি গানের সুর-কথা-সংগীত আমাদের এখানে প্রবেশ করেছে। আমাদের দেশে যখন ক্যাসেট চলতো ইন্ডিয়াতে তখন সিডি আসলো। মানুষের আকর্ষনটা তখন সে দিকেই ঝুঁকে গেল। আমাদের দেশেও এরপর সিডির প্রচলন হলো। তারমানে এটাকেও কি আপনি নকল বলবেন?

জাগো নিউজ : সংগীতে মিউজিক ভিডিওর প্রচলনটা এখন বেশি। এটা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির জন্য কতটা ফলপ্রসূ?   
রুমি : এটা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার বিষয়। নেতিবাচক কিছু নয়। এখন ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা সবখানেই। মানুষ চাইলেই ইন্টারনেটের সুবাদে হাতের নাগালে সবকিছু পাচ্ছেন। তারা ঘরে বসেই বিদেশি কোনো প্রিয় তারকাকে গান গাইতে দেখছেন। তারা নিজের দেশেও তারকাদের গানের ভিডিও চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। হচ্ছেও তাই। বাধ্য হয়ে শিল্পীরাও টাকা খরচ করে অ্যালবাম প্রকাশ করার থেকে দুটি বা পাঁচটি গানের মিউজিক ভিডিও অ্যালবাম প্রকাশে বেশি মনযোগী। আর এটা কিন্তু ফলপ্রসু হচ্ছে। শিল্পী বা গানের পিছনে লগ্নি করা মানুষটি তার টাকা ফেরত পাচ্ছেন। ফলে নতুন করে কাজের উৎসাহ পান। শিল্পীরা যদি মিউজিক ভিডিও’র মাধ্যমে টিকে থাকেন তবে আমি বলবো- তাই থাকুন! গানের মানুষ গান ছাড়া কি করে বাঁচবেন! যুগের সাথে ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখতে মিউজিক ভিডিওর প্রয়োজন আছে।

জাগো নিউজ : আপনি মোস্তফা কামাল রাজের ‘ছায়া-ছবি’, ‘তারকাঁটা’র মত ছবির সংগীত পরিচালনা করে প্রশংসা পেয়েছেন। সর্বশেষ ‘গেম রিটার্নস’ ছবির আইটেম গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন। একজন প্রকৃত শিল্পী চলচ্চিত্রকে সংগীতের বড় একটি ক্ষেত্র মনে করেন। বর্তমানে চলচ্চিত্রের বেহাল দশা। এমতাবস্থায় সংগীতের মানুষেরা চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখতে পারে?
রুমি : খুব দারুণ একটি প্রশ্ন। গান চলচ্চিত্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আবার চলচ্চিত্র গানের বিরাট এক ক্যানভাস। দুইয়ের মধ্যে সম্পর্কটা খুব গাঢ়। গানের বাজারে কিছুটা অস্থিরতা থাকায় চলচ্চিত্রেও ভালো মানের গান কমেছে। ফলে চলচ্চিত্রের নির্দিষ্ট একটা শতাংশ নিয়ে শংকায় থাকছেন প্রযোজক-নির্মাতারা। আবার চলচ্চিত্রের বাজারটাও এখন বেশ মন্দা। ফলে যারা প্লেব্যাক করেন নিয়মিত তারা খানিকটা বিপাকে পড়েছেন। ছবির গানের জন্য বিগ বাজেট রাখতে পারছেন না। যার কারণে গানও হচ্ছেন তেমন মানসম্পন্ন। ভালো কিছু করতে হলে ভালো পৃষ্ঠপোষকতাও কিন্তু চাই। তাই গানের জন্য চলচ্চিত্রের বাজার বিস্তৃতকরণ ও সার্বিক উন্নয়ন অতি জরুরি। সেক্ষেত্রে  চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে গানের মানুষদের আলোচনায় বসতে হবে। উপায় খুঁজতে হবে। আলাপ-আলোচনায় অনেক সফল সিদ্ধান্তই নেয়া সম্ভব। তবে একটা বিষয় নজরে আনা যেতে পারে। সেটা হলো বর্তমানে অনেক নতুন শিল্পীরাই তারকাখ্যাতির আড়ালে প্লেব্যাক করছেন। ভালোর সঙ্গে খারাপরাও চলচ্চিত্রে ঢুকে পড়ছেন। স্বাভাবিকভাবেই ছবিতে মানহীন গান বাড়ছে। গান না জানা মানুষ হুট করে একটা গান দিয়ে তারকাখ্যাতি পেয়ে যাচ্ছেন। সেই খাতিরে কিংবা সুসম্পর্ক দিয়ে তারা চলচ্চিত্রে গাইছেন। কিন্তু তাদের গান মানুষ নিচ্ছে না। শ্রোতাপ্রিয়তাই যে শিল্পের মাপকাঠি নয়- এটা সবাই ভুলতে বসেছেন। যার ফলে আগে দেখতাম চলচ্চিত্র ব্যবসা করতো হিট গান দিয়ে। আর এখন হিট বড় পরিচালক কিংবা নায়ক-নায়িকারা গান হিট করেন। সুতরাং এবিষয়ে একটাই কথা বলার আছে সেটা হচ্ছে শিল্পীদের দায়িত্বশীলতা এবং প্লেব্যাকের জায়গাটাকে ভালোবাসা। আর যারা এত টাকা খরচ করে ছবির জন্য গান তৈরি করছেন তাদের বোঝা উচিত সঠিক প্রাপ্তিটা এখারে ঘটবে কি না। কেননা, অডিও গান করার থেকে চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়।

Rumi 2
জাগো নিউজ : এবার আপনার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চাই। কিছুদিন আগে আপনার বিবাহ বিচ্ছেদের খবর শোনা গিয়েছিলো। তারপরই আবার শুনেছি সবকিছু মিটমাট হয়ে গেছে। ব্যাপারটা কী বলুন তো.....

রুমি : হা হা হা.... ব্যাপার কিছুই নয়। দাম্পত্যে ছোটখাটো ঝামেলা লেগেই থাকে। রাগের মাথায় সেইসব ঝামেলা অনেক সময়ই খারাপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসে। কিন্তু রাগ থেমে গেলে বারবার মনে হয় ভুল ছিলো। আরো ভাবা যেতে পারত। এই সেই। আমিও ভাই একজন মানুষ, আমার একটা সংসার আছে। সেখানে ভুলভ্রান্তি হতে পারে এটা অস্বাভাবিক কিছু না। তাই বলে এটা নিয়ে কিছু সংবাদমাধ্যমে যাচ্ছে তাই শিরোনাম আর উল্টাপাল্টা লেখা দেখে খারাপ লেগেছে। কারণ বেশিরভাগ পত্রিকাতেই আমার প্রিয় ভাই-বন্ধুরা কাজ করেন। তাই এটা আমার জন্য অধিক বেদনার। তবে এখন আল্লাহর রহমতে আমরা ভালো আছি, একসঙ্গেই আছি। প্রকৃত ভালোবাসা না থাকলে এটা কোনদিন সম্ভব হতো না। পরস্পরের ভালোবাসার টানেই আবার এক হয়েছি আমরা। সকলের কাছে দোয়া চাই এভাবে যেনো সারাজীবন থাকতে পারি। একই সাথে আমার ছেলে মোহাম্মদ আইয়ান ইউসুফের জন্যও দোয়া চাই।

Rumi 3

জাগো নিউজ : সবশেষে সাম্প্রতিক ব্যস্ততার কথা জানতে চাই...

রুমি : নতুন অ্যালবামটার মিউজিক ভিডিওর কাজ করলাম। পাশাপাশি টুকটাক স্টেজ শো করছি। নতুন গান নিয়েও কিছু পরিকল্পনা করেছি। তবে বর্তমানে আমার টোটাল মোটিভেশন পরিবারকে ঘিরে। তাছাড়া কাল (আজ শনিবার) মৌলভীবাজার যাচ্ছি পারিবারিক কাজে। সবমিলিয়ে কেটে যাচ্ছে দিনগুলো ভালো-মন্দের মিশেলেই।

এনই/এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।