একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহ আইসিইউতে

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫০ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২৩

একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহকে কয়েকদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে তাকে পাঁচদিন ধরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহর অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন তার মেয়ে অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ। তিনি তার মায়ের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে ফেসবুক একটি পোস্ট দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: অসুস্থ হয়ে ভারতের হাসপাতালে ভর্তি নাদিয়া

পোস্টে অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ লিখেছেন, ‘বিভিন্ন টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রত্যেক বেলায় আম্মার শারীরিক অবস্থার অদলবদল হচ্ছে। এই ভালো তো এই অনেক খারাপ। প্রথম দিকে কিছুটা ভালো শব্দটি শুনলে খুব খুশি হয়ে যেতাম, কিন্তু এখন অতটা খুশি হতে পারি না। কেন যেন মনের মধ্যে ভয় ও শঙ্কা কাজ করে, আবার না জানি কী সংবাদ শুনতে হবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘এই নিয়ে আমার মা তিনবার আইসিইউতে (একবার লাইফ সাপোর্টসহ) আছেন। জীবন এবং মৃত্যুর বড় বড় তাৎক্ষণিক ডিসিশন আমাকে একাই নিতে হয়েছে আইসিইউর সামনে দাঁড়িয়ে। সৃষ্টিকর্তার দয়ায় এবং ডাক্তারদের পূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগিতায় তিনি গত দুইবার নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে তাকে অমানুষিক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এ রকম পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে সময় পার করায় আম্মার সম্পূর্ণ চিকিৎসার যাবতীয় কর্মকাণ্ড গুগল সার্চ করে আমি ও আমাদের পুরো পরিবার মোটামুটি পিএইচডি লাভ করে ফেলেছি।’

আরও পড়ুন: ব্যাংককে ফারিণের অস্ত্রোপচার

অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়ে বিজরী লিখেছেন, ‘পরিবারের মধ্যমণি আমার মা। করোনায় বাবা চলে যাওয়ার পরই বুঝতে পেরেছি, মাথার উপর কত বড় ছাদটা হারিয়ে শিশুর মত মাকে আঁকড়ে জীবন পার করছি। তার সমস্ত সমস্যা আফটার কোভিড কমপ্লিকেশন্স বলা হচ্ছে। যেখান থেকে লাং অর্ধেকটাই কাজ করে না, ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে তিনবার, স্লিপ অ্যাপমিয়া ভয়ংকর লেভেলের, কিডনির ক্রিটেনিন এখন ৪.২, সুগার এবং প্রেসার হাই, ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্সড, সেই সঙ্গে সিভিয়ার ডিপ্রেশন। এতগুলো সমস্যা নিয়ে তাকে মেইনটেইন ও সুন্দর করে টেক কেয়ার করে চলা কম ঝুঁকি ঝামেলার নয়। তারপরও মার চিকিৎসার বিন্দুমাত্র অবহেলা এবং নড়চড় করিনি আমরা। ইনফেকশনের কারণে এখন তার জ্বর আছে, অক্সিজেন চলছে এবং সে অনেকখানি ডিজওরিএনটেড। ডাক্তাররা একে বলছে সেপ্টিসেমিয়া।’

আরও পড়ুন: নৃত্যশিল্পী হতে গিয়ে ভুল করে অভিনেত্রী হলেন বিজরী!

বিজরী আরও লেখেন, ‘আইসিইউ’র বাইরে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো লিখছি। যন্ত্রের ভেতর মার জীবনটাকে ঢুকিয়ে অসহায়ের মতো সময় গুনছি। এখানে মাথা কাজ করে না, সময়কে বড্ড দীর্ঘ মনে হয়। পৃথিবীর সকল অর্জনও এখানে ব্যর্থ। কত শত অভিজ্ঞতা, কতশত মানুষের অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ জমে আছে এই করিডোরে। এমনকি আমার নিজের চোখের সামনে। ডাক্তারদের চোখাচোখি হলেই সবাই একই কথা বলে- ধৈর্য ধরুন, চেষ্টা চলছে, দেখা যাক, দোয়া করুন। শুধুমাত্র একজন ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন, এক পার্সেন্টও যদি চান্স থাকে আপনি ধৈর্য হারাবেন না। গত দুই বছরে সেই পার্সেন্টেজই গুনছি, সেই সাথে আমি নিজেই আবিষ্কার করলাম আমি বিশাল এক ধৈর্যশীল নারী। এই ধৈর্য নিয়েই আমাকে যুদ্ধে জয়ী হতে হবে এবারও। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ সহায়।’

উল্লেখ্য, জিনাত বরকতুল্লাহ চার বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী গাজী আলিমুদ্দিন মান্নানের কাছে নৃত্য শেখা শুরু করেন। এছাড়াও বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নৃত্য শিক্ষা লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে জিনাত বরকতুল্লাহ যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফর্মিং আর্টস একাডেমিতে। পরে তিনি শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত প্রোডাকশন বিভাগের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি ২৭ বছর কর্মরত ছিলেন।

১৯৮০ সালে জিনাত বরকতুল্লাহ বিটিভির নাটক ‘মারিয়া আমার মারিয়া’ দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করেন। এরপর তিনি ‘অস্থায়ী নিবাস’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘কথা বলা ময়না’, ‘বড় বাড়ি’, সহ অনেক টেলিশিন নাটকে অভিনয় করেন। জিনাত বরকতুল্লাহকে নৃত্যশিল্পে অবদানের জন্য ২০২২ সালে একুশে পদক প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার।

এমএমএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।