হতাশার চলচ্চিত্রে আশাজাগানিয়া বছর-২০২২
চলচ্চিত্রের মন্দা হাওয়ার মাঝে মহামারি করোনা যেন ঢাকাই চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের আরও হতাশায় নিমজ্জিত করেছিল। সিনেমাপ্রেমীরা বলতে গেলে এক প্রকার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন দেশীয় চলচ্চিত্র থেকে। এর মাঝে একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের খবর চলচ্চিত্র কর্মীদের হতোদ্যম করেছিল।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিবাচক ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন সবাই নিরাশ, ঠিক সেই মুহূর্তে আশার প্রদীপ জ্বেলে রুপালি দুনিয়ায় দেখা দেয় আলোর ঝলকানি।
চলতি বছরের সবশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা সম্পর্কে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি জানায়, এখন পর্যন্ত প্রেক্ষাগৃহে ৪৭টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আরও কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। বলা যায়, চলতি বছর অর্ধশত সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমা ছাড়া জমজমাট গল্প সিনেমাও পেয়েছে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।
চলতি বছরের শুরু দিকে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এইচ আর হাবিবের ‘ছিটমহল’ সিনেমা। এটি মাত্র পাঁচটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। দর্শকদের কাছ থেকে সিনেমাটি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেনি।
হিসাব করে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মোট ৯টি সিনেমা মুক্তি পায়।
সিনেমার দর্শক খরা কাটিয়ে নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাসের শ্বশুরবাড়ি ‘জিন্দাবাদ-২’ সিনেমাটি আলোচনায় আসে। সিনেমাটি নিয়ে নির্মাতা তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন বলে জানা গেছে।
এরপর ধীরে ধীরে সিনেমা হলমুখী হতে শুরু করেন দর্শক। দেশের নাট্যাঙ্গনের জনপ্রিয় তারকা মোশাররফ করিম ও চিত্রনায়িকা পরীমনির ‘মুখোশ’ সিনেমাটি মোটামুটি ব্যবসা সফল হয়।
মনপুরা খ্যাত নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘গুণিন’ সিনেমাটি দর্শক বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। এরপর কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পেলেও কোনো সাড়া ফেলতে পারেনি।
ঈদুল ফিতরে অনেকগুলো সিনেমা মুক্তি পাবে বলে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত চারটি সিনেমা মুক্তি পায়। মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো হলো- ‘গলুই’, ‘বিদ্রোহী’, ‘শান’, ও ‘বড্ড ভালোবাসি’ । এসব সিনেমার মধ্যে ‘গলুই’ এবং ‘শান’ দর্শকদের মধ্যে আলোচনায় ছিল। ওই সিনেমাগুলোও ব্যবসা সফল হয়েছে বলে জানা যায়।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। হতাশায় নিমজ্জিত সিনেমা হল মালিক এবং সিনেমা সংশ্লিষ্টদের মাঝে প্রাণ সঞ্চার করে।
ঈদুল আজহায় মুক্তি পায়, ‘পরাণ’, ‘দিন: দ্য ডে’ ও ‘সাইকো’। অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজির’ পরে তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফির ‘পরাণ’ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে বেশ চাঙ্গা করে। এই সিনেমার মাধ্যমে হলগুলোতে যেন সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরে পায় বলে প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা দাবি করেন।
‘পরাণ’ সিনেমার পাশাপাশি অনন্ত জলিলের ‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমাটি বেশ হইচই ফেলে দেয়। এরপর দেশীয় সিনেমার পালে ঝড়ো বাতাস তুলে মুক্তি পায় নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ সিনেমাটি।
‘হাওয়া’ সিনেমা মুক্তির আগেই এতে সংযোজিত ‘সাদা-সাদা, কালা-কালা’ গানটি দেশব্যাপী আলোড়ন তোলে। গানটি ভাইরাল হয় সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গানের বদৌলতে সিনেমাটির প্রতি দর্শকের আগ্রহ বেড়ে যায় বহুগুণ। প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তির আগেই টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।
সিনেমাপ্রেমী ও চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের বিবেচনায় এটিই ২০২২ সালের সবচেয়ে সাড়া জাগানো, জনপ্রিয় ও ব্যবসা সফল সিনেমা। সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি পায় তারকাবহুল সিনেমা ‘অপারেশন সুন্দরবন’। এরপরই মুক্তি পায় ‘বিউটি সার্কাস’ ও ‘দামাল’।
অক্টোবর মাসে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মাঝে সাড়া না ফেললেও কলকাতা আন্তর্জাতির চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করেছে।
শুধু তাই-ই নয়, সিনেমাটি ভারতসহ বিশ্বজুড়ে মুক্তি দিতে এর নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউমের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক পরিবেশক সংস্থা কন্টিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড। সব মিলিয়ে বলা যায় চলতি বছর ঢাকাই চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সিনেমার সুদিন ফিরে আসবে।
এমআই/এমএমএফ/এএসএম