একজন নারীর ব্যক্তিত্ব এমনই হওয়া উচিত: চয়নিকা চৌধুরী
দেশের শোবিজ ভুবনের নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার জন্মদিন আজ (২ ডিসেম্বর)। জন্মদিন উপলক্ষে এই অভিনেত্রী তার সহকর্মী, ভক্ত-অনুরাগীদের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছায় ভাসছেন। তাকে নিয়ে দেশের খ্যাতিমান নির্মাতারাও বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিচারণ করে লিখছেন। জনপ্রিয় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীও সুবর্ণা মুস্তাফাকে নিয়ে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন-
‘একজন সুবর্ণা আপা, কষ্টের সময়গুলোতে যিনি মায়া-মমতা, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন আমাকে। আমার পরিবারকে। আমি জানি, তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন। তুমি কি জানো আজ তোমার কাজের ৫৪ বছর!! তুমি ভাবতে পারো এখনো তুমি সদর্পে কাজ করছো এই প্রজন্মের সঙ্গে? এবং তুমি আমাদের দেশের মাননীয় সাংসদ সদস্য? হুম আমরা ভাবতেই পারি, কারণ তুমি যোগ্য। অভিনন্দন তোমাকে। অনেক ভালোবাসা, শুভ কামনা। আজ ২ ডিসেম্বর।’
চয়নিকা চৌধুরী আরও লেখেন, ‘আজকের এই দিনে পৃথিবীর বুক আলো করে এসেছিলেন আমাদের সবার প্রিয় অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী শক্তিমান অভিনয় শিল্পী গোলাম মুস্তাফা এবং রেডিওর অনুষ্ঠান প্রযোজক ও লেখক হোসনে আরা মুস্তাফার কন্যা। প্রথমে অভিনন্দন জানাই এই গুণী অভিনয় শিল্পীর মাকে। কাকীকে অভিনন্দন মা হওয়ার জন্য।’
সুবর্ণা মুস্তাফার অভিনয়ের প্রশংসা করে চয়নিকা চৌধুরী লেখেন, ‘তার অভিনয় দেখে বড় হয়েছি। সাদা কালো টিভিতে সেই ইডিয়ট নাটক এখনও চোখের মণিতে লেগে আছে। তারপর থেকেই সাদা কালো রঙিনসহ অসংখ্য দারুণ দারুণ সব নাটক। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। এখনো দেখি। আমাদের বাসায় তো তখন টেলিভিশন ছিল না। আর আমার মা খুব কড়া ছিলেন। কিন্তু তার নাটক দেখার জন্য সব পড়া শেষ করে আমাদের প্রতিবেশী মমতা কস্তা, হেলেন কস্তা, দিলীপ কস্তার বাসায় যেতাম। সারাদিন আবেগী হয়ে থাকতাম। আশির দশকে মা ঘুড্ডি দেখাতে সিনেমা হলে নিয়ে গেলেন। মা জানতেন এই গুণী অভিনয় শিল্পীর কত্ত ভক্ত আমি! সেই তখন থেকে আমি তার ভক্ত। যার কথা শুনতে ইচ্ছা করে বার বার। যার কথা হা হয়ে শুনি এখনো।’
সুবর্ণা মুস্তাফার ব্যক্তিত্ব নিয়ে চয়নিকা চৌধুরী তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘তারপর কেটে গেলো অনেক দিন। সুশিক্ষিত রুচিশীল মানুষটি দিনে দিনে আমার মগজে ঢুকে গেলো। তার প্রতি আরও ভালো লাগা তৈরি হলো আমার সেইদিন, যেদিন তিনি এক কথায় জাতীয় পুরস্কার রিফিউজ করলেন! আহ! কী ব্যক্তিত্ব!! আমি আরও তার প্রেমে পড়ে গেলাম! মনে হলো একজন নারীর ব্যক্তিত্ব এমনই হওয়া উচিত। শিখলাম। আমি জানি আমি অত মেধাবী পরিচালক নই। কিন্তু আমি পরিশ্রমী। আমি ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে কাজ করি।’
পুরোনো দিনের স্মৃতি কথা চয়নিকা চৌধুরী বর্ণনা করেন, “একদিন প্রিয় মানুষ বিপাশাকে বললাম, ২০০৭ সালে, ‘আমাকে একটা স্ক্রিপ্ট দিবে যা আমি সুবর্ণা আপাকে দিতে পারব!!’ বিপাশা বললো, ‘চয়ন আপা একটা স্ক্রিপ্ট আমার লাইন আপ করা আছে। আপনার ভালো লাগলে আমি লিখবো। আপনি ভালো বানাতে পারবেন।’ বিপাশা আমাকে ‘ঘাসফুল’ লিখে দিলো। মুগ্ধ করা স্ক্রিপ্ট। দুরুদুরু বুকে কল দিয়ে তাকে স্ক্রিপ্ট পাঠালাম সকালেই। রাতেই তিনি আমাকে কল দিয়ে জানিয়ে শুটিং তারিখ দিলেন। অন্য কিছু সো কল্ড স্টার শিল্পীদের মতো দেরি হলো না। নাটকটি আরটিভিতে ঈদে গিয়েছিল। আমি বেস্ট ডিরেক্টর হিসেবে সিজেএফবি পুরস্কার পেয়েছিলাম। তারপর ২০১১ সালে করা হলো আরেকটি টেলিফিল্ম, অরুণ চৌধুরীর লেখা আকাশ জোড়া মেঘ। তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি এবং বুঝেছি আসলেই- ওল্ড ইজ গোল্ড।”
চয়নিকা চৌধুরী তার লেখা শেষ করেছেন এভাবে, ‘২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২২ সালে তাকে নিয়ে, তার সঙ্গে অনেক অনেক ভালো কিছু কাজ করেছি। ১২-১৫টি কাজ। কাছে গিয়েছি, মুগ্ধ হয়েছি। এত্ত কেয়ারিং একজন মানুষ! নিজ হাতে তার বাসায় সবকিছু করে। সবার খেয়াল রাখে। মনের ভিতর অনেক মায়া। এই গুণের কথা অনেকে জানেন না। সুবর্ণা আপা, তোমাকে নিয়ে লেখার মতো কোনো যোগ্যতা বা সাহস আমার নেই। আজ তোমার জন্মদিন। তাই লোভ সামলাতে পারলাম না। তুমি অনেক ভালো থেকো, সুস্থ সুন্দর থেকো। আর এমন করে আমাকে ভালোবেসো। অনন্ত শুভ কামনা আর ভালোবাসা। তোমাকে অনেকদিন বাঁচতে হবে এই পৃথিবীতে অভিভাবক হয়ে। চারিদিকে অনেক এক অস্থির সময়!! আবারও শুভ জন্মদিন, সদা থাকো আনন্দে, নির্ভয়ে। যা আমাদের সবসময় বলা হয় না, তা বার বার বলতে চাই, লিখতে চাই। সুবর্ণা আপা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সম্মান করি। তোমার কাজের ৫৪ বছরের জন্য আবারও শুভ কামনা আর অভিনন্দন। আদর।’
এমএমএফ/এএসএম