নাসিরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন পরীমনি
ঢাকার বোট ক্লাবে পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এর বিচারক হেমায়েত উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছেন পরীমনি।
এদিন পরীমনি সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত হন। সঙ্গে তার স্বামী শরিফুল রাজও আদালতে উপস্থিত হয়েছেন। তবে আসামি নাসির উদ্দিন অসুস্থ থাকায় আদালতে উপস্থিত হননি। অন্য দুই আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমি ও শহীদুল আলম আদালতে উপস্থিত হয়েছেন।
এর আগে গত ১৮ মে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এর বিচারক হেমায়েত উদ্দিনের আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওইদিন মামলার বাদী পরীমনি অসুস্থ থাকায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। এজন্য রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করে। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ২৯ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
এর আগে ১৮ মে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এর বিচারক হেমায়েত উদ্দিন আসামি নাসিরসহ তিনজনেন বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের সময় নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন নাসিরসহ তিন আসামি। নাসিরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা অভিযোগ গঠন করেন আদালত। একই সঙ্গে দণ্ডবিধি আইনের ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ এর ৩০ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।
আরও পড়ুন: পরীমনির জন্য শত পুলিশ, দুর্ধর্ষ জঙ্গির নিরাপত্তায় একজন!
২০২১ সালের ১৪ জুন ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে এবং চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে পরীমনি ঢাকার সাভার থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িতে করে তারা উত্তরার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে অমি বলে বেড়িবাঁধের ঢাকা বোটক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে।
‘অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করায়। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেন। অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলেন এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো।’
এজাহারে আরও বলা হয়, তখন আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করেন ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করেন। টয়লেট থেকে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন ও কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন।
‘আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদপানের জন্য জোর করেন। আমি মদপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমি সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।’
‘এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন এবং আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির উদ্দিন মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে জখম করেন।’
এজাহারে পরীমনি আরও বলেন, আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে গেলে আমার ফোনটি কেড়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এসময় দুই নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন এক নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহযোগিতা করেন। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারবো।
আরও পড়ুন: মাদক মামলায় পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে র্যাব কর্মকর্তার সাক্ষ্য
তিনি বলেন, দুই নম্বর আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে আমাকে বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যান। তিনি অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি ও নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে ও ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত আনুমানিক ৩টায় আমার গাড়িতে প্রায় অচেতন অবস্থায় অপর সঙ্গীদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসি।
২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিচারক হেমায়েত উদ্দিন অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নাসিরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন।
জেএ/ইএ/জেআইএম